‌জামায়াত ইস্যুতে কি নমনীয় আওয়ামী লীগ?
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১০:০৮
‌জামায়াত ইস্যুতে কি নমনীয় আওয়ামী লীগ?
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ। বিচারে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা।


অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলগতভাবে জামায়াতের বিচারের বিষয় আদালতের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠনটির বিচার শুরু করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগও নেয়া হয়।



নানা সময়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও সেমিনারে জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছিলেন। এমনকি জামায়াত নিষিদ্ধ সময়ের ব্যাপার মাত্র বলেও মন্তব্য করেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য। তবে গত মে মাসে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর যেন হঠাৎ করে জামায়াত নীতিতে সুর পাল্টে ফেলেছেন তারা।



গেল এক দশক ধরে যে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন গত ১০ জুন দলটিকে রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ সরকার। এমনকি সমাবেশস্থল অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নামে বরাদ্দ দেয়া থাকলেও তাদের বাদ দিয়ে জামায়াতকে সমাবেশের সুযোগ দেয়া হয়।


জানা যায়, ১০ জুন রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন জাতীয় যুব সংহতি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের জন্য ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে প্রশাসন আগের দিন অর্থ্যাৎ ৯ জুন মধ্যরাতে জাতীয় যুব সংহতি নেতাদের ডেকে সম্মেলনস্থল পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়। পরে জাতীয় যুব সংহতি কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলন সম্পন্ন করে। জামায়াতকে সমাবেশের সুযোগ করে দিতে প্রশাসনের এমন তৎপরতাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অনেকে।


অন্যদিকে সমাবেশের পরদিন জামায়াতকে অনুমতি দেয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দিতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা। আর এতে করে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতি নমনীয় ভাব দেখাচ্ছে? সেক্যুলার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নেতাদের কণ্ঠে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সাফাই গাওয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।


আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সমাবেশের অনুমতি দিলেও জামায়াতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে যার কারণে পুলিশ অনুমতি দিয়েছে। তবে দলটির সাথে আদর্শিক দ্বন্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির সমঝোতা হওয়ার সুযোগ নেই। জামায়াতকে সভা-সমাবেশের অনুমতি দিয়ে সরকার বর্হিবিশ্বে বার্তা দিতে চেয়েছে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা অক্ষুণ্ণ রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। রাজনৈতিক দল হিসেবে যেকোন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করার পরিবেশ আছে।


গত ১০ জুন প্রকাশ্যে সমাবেশের পর ৭ জুলাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি নিরাপত্তায় মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, গতকাল জুমআ'র পর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েেছে এটা মূলত জামায়াতে ইসলামীর নয়; ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের মিছিল ছিল। সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর কারণে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা মিছিল করেছে- এই ইস্যুতে সরকারের বাধা দেয়ার তো কোন সুযোগ নেই। যেহেতু এটা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি, আবেগের জায়গা।


সরকার অনুমতি না দিলেও জামায়াত নেতারা বিভাগীয় সমাবেশ করার হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না সরকার অনুমতি না দিলে তারা সমাবেশ করার সুযোগ পাবে। রাজনীতির মাঠে অনেকেই অনেক সময় বড় বড় কথা বলে। সরকার যে সিদ্ধান্ত দিবে সবাইকে সেই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।


জামায়াতে ইসলামীর উপর সরকার নমনীয় ভাব দেখাচ্ছে কি-না? জানতে চাইলে হানিফ বলেন, এই মুহূর্তে জামায়াতের প্রতি নমনীয় ভাব দেখানোর কোন সুযোগ নেই।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবার্তাকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দ্বন্ধ আদর্শগত। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈতিক দল। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করা জামায়াতের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করি না।


তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় লড়াই-সংগ্রাম করেছে। কেউ সভা-সমাবেশ করতে চাইলে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি সংবিধানে দেয়া হয়েছে। বিষয়টিকে এভাবে দেখা উচিত।


আগে জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধের কথা বলা হলেও সমাবেশের অনুমতি দেয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দলটিকে এখন প্রশ্রয় দিচ্ছে কি-না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বিবার্তাকে বলেন, এটা গণতান্ত্রিক সরকার। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। কেউ সমাবেশ করতে অনুমতি চাইলে সরকার অনুমতি দিবেই।


তিনি বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমরা একটা গণতান্ত্রিক দল। জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। যদি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয় তাহলে সেই (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিক দল হিসেবে সমাবেশ করতে দিবে না কেন। কিন্তু বাঁধা আসে তখনি যখন সমাবেশের নামে বোমাবাজি হয়, আগুন সন্ত্রাস হয়, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত হয় তখন সরকার তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এ দেশে আছে।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com