দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চাকরি পাচ্ছেন না শিবিরের হামলায় আহত ছাত্রলীগ নেতা টগর
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ২১:৩৫
দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চাকরি পাচ্ছেন না শিবিরের হামলায় আহত ছাত্রলীগ নেতা টগর
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন টগর মো. সালেহ। ২০১৪ সালে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে টগর যখন সক্রিয় ভূমিকায় ঠিক সেই সময়ে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির কর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসা হওয়ায় সেই যাত্রায় বেঁচে ফিরেন তিনি।


গুরুতর আহত টগরকে সেই সময় দলের অনেক সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে এমপি, মন্ত্রীরা দেখতে গিয়ে চাকুরির আশ্বাস দিয়েছিলেন। গুনে গুনে আট বছর পেরিয়েছে। টগরকে দেয়া সেই ‌'চাকুরি'র আশ্বাস আজও আশ্বাস হিসেবে রয়ে গেছে। বেঁচে তো থাকতে হবে। আর তাই জীবনযুদ্ধে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া টগর এখন মৌসুমী ফল আমের ব্যবসা করে সমাজে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।


জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার দরিদ্র ঘরের সন্তান টগর মো. সালেহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ সেশনে ফোকলোর বিভাগে ভর্তি হন। বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা টগর রাবি শাখা ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক ও পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্যাম্পাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রচারে সক্রিয় থাকায় শিবির ক্যাডারদের চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল ক্যাম্পাসে রিকশায় করে যাওয়ার পথে শিবির ক্যাডারদের হামলার শিকার হন। এসময় তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় এবং মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করে। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যান সহযোদ্ধারা।


শিবির ক্যাডারদের হামলায় সেদিন টগরের সাথে আহত হয়েছিলেন তারই সহযোদ্ধা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে পড়াশোনা একসাথে চালিয়ে গেছে টগর ও মাসুদ। জানা গেছে, মাসুদ সুস্থ হয়ে বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করছেন। তবে চাকুরি পাননি টগর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করা টগর স্ত্রী, কন্যা, আর বৃদ্ধ বাবা-মা'কে নিয়ে অনাহার, অর্ধাহারে দিন পার করছে।



রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান বাদশা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে টগরের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে লিখেছেন, নেতা, মন্ত্রী এমপিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পেটের দায়ে অনলাইনে আমের বিজনেস করছেন টগর। আমের সিজন শেষ হয়ে গেলে আবার হয়ে যাবেন বেকার। টগর মো. সালেহ জমি-জমার বিরোধ বা ব্যক্তিগত কোন বিরোধে শিবিরের হামলায় আহত হননি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করার কারণে, ছাত্রলীগ করার কারণে রগ কাটার স্বীকার, প্রতিবন্ধী হয়েছেন...।


তিনি আরো লিখেন, অনেক নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অনুদান পান। অনেক মন্ত্রী এমপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন,করছেন এখনো.. অথচ টগরের মতো অসহায় সাবেক নির্যাতিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে, তাদের একটা চাকরি দিতে আপনাদের এতো অনীহা কেন....??


জানা গেছে, ২০২১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ হওয়ার কথা ছিলা টগরের। তবে অদৃশ্য কারণে সেই নিয়োগ এখনো আটকে আছে।


একটা চাকুরির আশায় দলের নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন জানিয়ে টগর মো. সালেহ বিবার্তাকে বলেন, আমি সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করেছি। ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার করার কারণে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আমার কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে হামলা করেছিলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ায় সেই যাত্রায় আমি বেঁচে ফিরেছি।


তিনি বলেন, একটা চাকুরির জন্য আমি অনেকের কাছে গেছি। কেউ বলেছে অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছ দেখছি, কেউ বলে অমুকের কাছে যাও। অমুকের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কার্যত কেউ আমার জন্য কিছু করেনি। আমি শুধু চাই আমার খবরটা ছাত্রলীগের অভিভাবক, আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌঁছাক। আমি বিশ্বাস করি, তিনি আমার খবর শুনলে বিষয়টা দেখবেন। আমার একটা কিছু হবে।


বিবার্তা/সোহেল/নিলয়

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com