২ ছাত্রদল নেতা খুন: বিএনপি নেতা খোকন ও তার স্ত্রীসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ২০:৫৭
২ ছাত্রদল নেতা খুন: বিএনপি নেতা খোকন ও তার স্ত্রীসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাদেকুর রহমানসহ দুই ছাত্রদল নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫/৪০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।


নিহত ছাত্রনেতা সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদি হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় হত্যাসহ বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেন।


এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হলেও মামলার কোন আসামীদের নাম দেয়নি বাদী আলতাফ হোসেন। কিন্তু থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মামলায় নাম উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি দূর্গে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।


এই মামলায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


মামলার বেশিরভাগ আসামীরা স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। মামলার আসামী জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, চিনিশপুরের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন ও তার ভাতিজা রাসেল মিয়াকে শুক্রবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে পুলিশ।


গ্রেফতারকৃতদের পুলিশ গতকাল শনিবার নরসিংদীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ প্রেরণ করিলে বিজ্ঞ আদালত আজ রবিবার আসামীদের রিমান্ড শুনানীর জন্য দিন ধার্য করে।


মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন।


অন্যান্য আসামীরা হলো খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, (৩) জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ,(৪) বিএনপির নেতা জায়দুল ইসলাম জাহিদ (৫) ইলিয়াস আলী ভূইয়া (৬) আল-আমিন (৭) তানভির (৮) রবিউল ইসলাম রবি, (৯) সোহেল (১০) সাদ্দাম হোসেন ভূইয়া,(১১) মো: ওয়ালিদ হোসেন (১২) রিফাত (১৩) জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রউফ সরকার রনি, (১৪) সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, (১৫) শামিম সরকার, (১৬) শহর যুবদলের আহবায়ক চৌধুরী সুমন, (১৭) যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ (১৮) রুবেল হাসান (১৯) চিনিশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আওলাদ হোসেন মোল্লা, (২০) সজিব, (২১) নাজমুল ভূইয়া ,(২২) গোলজার হোসেন,(২৩) শহিদুজ্জামান,(২৪) শাকিল চৌধুরী,(২৫) হানফ সরকার (২৬) আল আমিন ওরফে হাদি (২৭) ইমাম মেম্বার (২৮) বাবুল খন্দকার,(২৯) রাসেল মিয়া,(৩০) কামাল হোসেন ভূইয়া। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫/৪০ জনকে আসামী করা হয়েছে।



এব্যাপারে নিহত আশরাফুল ইসলামের পিতা গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নরসিংদী প্রেস ক্লাবে এসে একটি লিখিতভাবে জানান, আমার ছেলে নিহত আশরাফুল ইসলাম কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নয় এবং কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীও নয়। তার বয়স সাড়ে ১৬ বছর। সে নরসিংদী অরবিট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ১ম বর্ষের ছাত্র। ঘটনার দিন বিকেলে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ী ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।


গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিনিশপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন স্থানে জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত আংশিক কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।


এতে ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সদ্য বহিষ্কৃত সাদেকুর রহমান ও ছাত্রদল নেতা আশরাফুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলে মারা যায় সাদেকুর রহমান ও পরদিন শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয় আশরাফুল ইসলামের।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নেতারা জানায়, বিএনপির অন্তকোন্দলের কারনে এই জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষনার পর পরই জেলা বিএনপির সব্বোর্চ্চ পর্যায়ের গুটি কয়েক নেতার স্বার্থ হাসিলের জন্য পদবঞ্চিত নেতাদের উসকিয়ে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়,বিএনপির কার্যালয় ভাংচুর,অগ্নি সংযোগ সহ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকনের উপর হামলা করার জন্য পদবঞ্চিত নেতাদের লেলিয়ে দেয়া হয়। একই সাথে রাস্তাঘাট,কোর্ট কাচারিতে হাজিরা দিতে এলে একাধিক খোকনপন্থীদের উপর হামলা মারপিট করেন পদবঞ্চিতরা। আর এসব করতে পদবঞ্চিত নেতাদের অর্থনৈতিক ও প্রাশাসনিক সহায়তা দিয়েছেন বিএনপির শিল্পপতি এক নেতা। দলে বিভাজন ও অন্তকোন্দলে দল ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এই নেতা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এমনকি তার নামে মামলাও হয়নি। কারন তিনি পুলিশের সাথে আতাত করে চলেন।


বিএনপি নেতারা আরো জানায়, আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি নেতারা কোন প্রোগ্রাম করতে পারে না। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকনসহ বিএনপি নেতারা মিছিল নিয়ে জেলখানার মোড় অতিক্রম করতে পারে না। কিন্তু ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা অস্ত্র-সস্ত্র সহ শতাধিক মটর সাইকেল বহর নিয়ে শহরের বিক্ষোভ মিছিল করে কি করে? পদবি ত নেতারা দলবেধে ককটেল রামদা বন্ধুক নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে এসে হামলা চালায় কি করে? তাদের পুলিশ আটক করেও ছেড়ে দেয়। এর মানে কি? শহরে বিশৃঙ্খলা করতে পুলিশ এই পদবঞ্চিত নেতাদের পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে।


বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, বিএনপিকে দমন করতেই এমন মামলা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও দলীয় কিছু নেতাদের মদদে তারা আমাদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। এখন তারা নিজেরা নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে। তিনি আরো বলেন,সাম্প্রতি সময়ে আমাদের গাড়ী বহড়ে হামলা ও গুলি করা হলো, একাধিক বার দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করা হলো। কিন্তু পদবঞ্চিত নামধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নেয়নি। যার কারনে তারা বারবার এসব সস্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আমাদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।


পুলিশ জানায়, জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারন সম্পাদক শিরিন সুলতানা সহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫/৪০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন নিহত সাদেকুর এর ভাই আলতাফ হোসেন। এঘটনায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ সহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।


উল্লেখ্য, গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকেরা বিভিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এর জেরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মাইনুদ্দিন সহ মোট তিনজন ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।


২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার রাতেই পদবঞ্চিত নেতাদের ২০-২৫ জন সমর্থক জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন। ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবির খোকনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা। ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে তাঁরা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবির খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। ৫ এপ্রিল কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। সর্বশেষ ২০ মে আবার ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।


বিবার্তা/কামাল/এনএস


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com