চীনের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে রংপুরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ১৮:৩৫
চীনের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে রংপুরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

তিস্তা প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বাংলাদেশে চীনের আগ্রাসন বন্ধসহ নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও উইঘুর মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, রংপুর মহানগর, জেলা ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।


শনিবার, ৬ মে সকাল ১১টায় রংপুর শহরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।


সংগঠনের রংপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মুরাদ কাওসারের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি মাহমুদুর রহমান অভি। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এমরান চৌধুরী আকাশ, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাসান হাবিব সৌরভ, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সজীব হোসেনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।


কর্মসূচিতে রংপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মুরাদ কাওসার বলেন, "একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাষ্ট্র চীন বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় চায়না কোম্পানীগুলো বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ধীরগতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও শ্রমিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ ও আর্থিক ব্যয় বাড়িয়ে দিয়ে চায়না কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চীন তিস্তা প্রকল্পের নামে ঋণের জালে ফেলে এবার বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। দেশে বিভিন্ন প্রকল্পে লুটপাটের পর চীন এবার উত্তরবঙ্গের মানুষদের রক্ত চুষে খাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। উন্নয়নের নামে কৃষিজমি, নদীর অববাহিকা ও পরিবেশ ধ্বংসের মাধ্যমে জনগণকে জিম্মি করে চীন নিজেদের অসৎ এজেণ্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র করছে। তিস্তা প্রকল্পের বিনিয়োগের নামে তিস্তা নদীর আশে পাশে অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা হচ্ছে। অবিলম্বে চীনের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বন্ধ করে পদ্মা সেতুর মতো দেশীয় অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে এডিবি, জাইকা, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। চীনের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, রংপুর মহানগর ও জেলা শাখা।"


সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, "একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অপশক্তি চীন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সাথে জড়িত ছিল। অবৈধ সামরিক শাসক খুনি জিয়া কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে ঢাকাস্থ চীন দূতাবাস ১৫ আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের উপহার পাঠিয়েছিল। চীন কখনোই বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। সম্প্রতি চীন তিস্তা প্রকল্পের নামে অসম শর্তে ঋণের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয়েছে। ঢাকা টু কুড়িগ্রাম ছয় লেনের মহাসড়ক প্রকল্পে চীনা কোম্পানির ধীরগতি কৌশলের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যা ও নির্যাতনে জড়িত চায়না কোম্পানির আজও পর্যন্ত কোন বিচার হয়নি। প্রায় দুই দশক ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী রাজাপক্ষে পরিবারকে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র মনে করা হতো। যখন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন, তখন চীনের অর্থায়নে বেশ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প গড়ে তোলা হয় দেশটিতে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে হাম্বানটোটার গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। বিতর্কিত ঋণের অংশ হিসেবে ৯৯ বছরের চুক্তির অধীনে একটি চীনা রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে সমুদ্রবন্দরটি ইজারা দেওয়া হয়েছিল। চীন অসম ঋণের জালে ফেলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন তিস্তা প্রকল্পের নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে চীন। দেশবিরোধী অপশক্তিদের সহযোগিতা নিয়ে চীন একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই চীনের দোসরদের মুখোশ উন্মোচন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বাংলাদেশে কর্মরত চীনা কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত শ্রমিক নির্যাতন, বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় দেখার কেউ নেই। উত্তরায় গার্ডার পড়ে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হওয়ার পরেও চীনা কোম্পানীর বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে পরিকল্পিতভাবে ধীরগতি দেখিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত হাজার হাজার কোটি লুটপাট করে চীনে নিয়ে যাচ্ছে চায়না কোম্পানিগুলো। এদেরকে দ্রুত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। উন্নয়ন কাজের নামে আগ্রাসন ও শ্রমিক নির্যাতন কখনোই মেনে নিবে না এদেশের জনগণ।"


সংগঠনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাসান হাবিব সৌরভ বলেন, "বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশ সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।


সংগঠনের রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সজীব হোসেন বলেন, "সম্প্রতি চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের মসজিদ ভেঙ্গে পাবলিক টয়লেট বানানো হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া কখনোই উচিত নয়। প্রত্যেক মানুষ তাদের ধর্ম স্বাধীন ভাবে পালন করার অধিকার রাখেন। কিন্তু চীন সরকারের সাম্প্রতিক উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে তারা কখনোই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে না।


সংগঠনের রংপুর জেলা শাখার সভাপতি মাহমুদুর রহমান অভি বলেন, "একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী ও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে চাইনিজ অস্ত্র সরবরাহকারী চীন এখনো স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অবিলম্বে চীনের তিস্তা প্রকল্প চুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে পদ্মা সেতুর ন্যায় দেশীয় অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তিস্তা পাড়ের মানুষদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, রংপুর মহানগর ও জেলা শাখা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।"


বিবার্তা/রাসেল/এনএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com