সমৃদ্ধশালী ও দুর্নীতিমুক্ত গাজীপুর গড়ে তুলব: আজমত উল্লা খান
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৩, ২০:১৯
সমৃদ্ধশালী ও দুর্নীতিমুক্ত গাজীপুর গড়ে তুলব: আজমত উল্লা খান
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন তিনি। যদিও সেই সময়ে দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন তিনি।


তবে এবারের নির্বাচনে গাজীপুর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে জানিয়ে তিনি বলছেন, নৌকার বিজয়ের জন্য সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। নির্বাচিত হলে সুষম, সমৃদ্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত গাজীপুর গড়ে তোলার অঙ্গীকার করছেন তিনি।


১৯৬৯ সালে তৎকালীন টঙ্গী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আজমত উল্লা খানের রাজনৈতিক জীবন শুরু। ’৭২ সালে ভাওয়ালগড় জেলা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। এরপর ’৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ’৭৯ সাল থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত একটানা টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ’৯১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ’৯৬ ও ২০০৩ সালে পরপর দুইবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।


২০১৫ সালে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়। সর্বশেষ এখন তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ১৯৯৫ সালে টঙ্গী পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিন মেয়াদে আজমত উল্লা দীর্ঘ ১৮ বছর টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।


গাজীপুরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলের ‌বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে চ্যালেঞ্জ এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তার ভাবনা জানতে চেয়েছে বিবার্তা। সোমবার (১ মে) রাতে মুঠোফোনে বিবার্তাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো-


বিবার্তা: গাজীপুর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা শোনা যায়। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কি এর প্রভাব পড়বে?


আজমত উল্লা খান: আওয়ামী লীগ, ১৪ দল এবং সাধারণ শান্তিকামী মানুষ একেবারেই ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ পরিবারের সবাই খুবই ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ যারা করেন তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি যেমন আপোষহীন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের প্রতিও আপোষহীন। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের প্রতি তারা এক চুলও নড়চড় করে না।


প্রথম থেকেই আমাদের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, নির্বাহী কমিটি সবাই নৌকার বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন।


বিবার্তা: নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে নির্বাচন কমিশন আপনাকে শোকজ করেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?


আজমত উল্লা খান: অনেকে ঘরে বসে থেকে ফেসবুকে এবং বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে বক্তব্য দেয়। কারণ বাইরে যেয়ে তাদের কথা বলার মত কোন কিছু নাই। আমরা যেখানে যাই নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে অনেক কিছু এভয়েড করে চলতে হয়। আমি যেহেতু মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাই মে দিবসের অনেক আলোচনা সভায় অবশ্যই অংশ নিতে হয়। এবার যতগুলো অনুষ্ঠানে গেছি কোনো অনুষ্ঠানে নিজের জন্য ভোট চাইনি। শুধু মে দিবসের আলোচনা, বঙ্গবন্ধু শ্রমিকদের জন্য কী করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী করেছেন এবং সিটি করপোরেশনের কী করা উচিত এসব বিষয়ে বক্তব্য রেখে চলে এসেছি। নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘন না হয় এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।


বিবার্তা: আপনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই একজন নেতা বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তিনি বলেছেন আপিল করবেন এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন।


আজমত উল্লা খান: আমার এখন কাজ হলো জনগণের কাছে পৌঁছা। যেটা আমি আগেও করেছি, প্রার্থী হওয়ার পর এ কাজটা অবশ্যই বেড়েছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র আছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবশ্যই গ্রহণ করবেন। কিছু মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য স্পষ্ট হয়েছে এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আমি। দলের গণতন্ত্র আছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি জনগণ নিয়েই ব্যস্ত আছি। এই ব্যাপারে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই।


তাছাড়া নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী বলে কোনো প্রার্থী নেই । প্রার্থী আছে স্বতন্ত্র। হয় না দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত হবে অথবা স্বতন্ত্র হবে।


আমি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। কেউ দলের বাইরে গেলে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র আছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্যই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিছু মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্যের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে। তাই এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।


বিবার্তা: মানুষ কেন আপনাকে ভোট দিবে?


আজমত উল্লা খান: আমাদের এখানকার নাগরিকদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। উল্টো বিভিন্ন দুর্নীতির ফর্দ আপনাদের মিডিয়াতেই এসেছে। হাইকোর্ট পর্যন্ত এটা নিয়ে.... সুতরাং তাদের প্রতি এটা নিয়ে মানুষের একটা মনোভাব তৈরি হয়েছে।


আমার বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নাই। আজকে পর্যন্ত কেউ দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। রাজনৈতিক কারণেও যদি কেউ আমাকে অপছন্দ করে তারাও কিন্তু এই (দুর্নীতির) অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করেনি। এটা শুধু আমার মুখের কথা না। অতীতে আমি টঙ্গী পৌরসভার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে পৌরসভাকে অংশগ্রহণমূলক, জবাবদিহিতামূলক ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান করতে পেরেছি। সেখানে আমি ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। আমি একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। আমি তিনবার নির্বাচিত হয়েছি। এর মধ্যে দুইবারই কিন্তু আমার দল রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। আমি আমার দলের প্রথমবার জেলা আওয়ামী লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলাম, পরেরবার নির্বাচনের আগে আমি জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হই, আর তৃতীয়বার যখন নির্বাচিত হই তখনও জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। কিন্তু দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ওঠেনি।


বিবার্তা: নির্বাচিত হলে কেমন গাজীপুর গড়তে চান?


আজমত উল্লা খান: এক কথায় বলতে গেলে, আমরা অবশ্যই একটি সমৃদ্ধ, সুষম গাজীপুর গড়ব। করাপশন ফ্রি একটি প্রশাসন হবে। যেটা স্বচ্ছ, জনগণের অংশগ্রহণমূলক এবং জবাবদিহিতামূলক একটি প্রতিষ্ঠান হবে। জনগণের বিশ্বাস যে, আমি নির্বাচিত হলে ইট উইল বি অ্যা করাপশন ফ্রি সিটিকরপোরেশন।


বিবার্তা: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


আজমত উল্লা খান: আপনাকেও ধন্যবাদ।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এনএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com