ধীর গতিতে এগোচ্ছে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৫:৫৪
ধীর গতিতে এগোচ্ছে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন
কিরণ শেখ
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু কর্মসূচি শুরুর আড়াই মাস না যেতেই যুগপৎ আন্দোলনের গতি হারাচ্ছে। এগোচ্ছে ধীর গতিতে। এজন্য বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আন্দোলন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বলে জানা গেছে।


তারা বলছেন, যুগপৎ আন্দোলন এখন ধীর গতিতে এগোচ্ছে। যার ফলে যুগপৎ আন্দোলনকে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যেভাবে উজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন এখন সেটা হচ্ছে না। কারণ বিএনপি গতানুতিক কর্মসূচি করছে। আর এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার মতো তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন না। তারাও গতানুতিক কর্মসূচির মতো "গতানুতিক বক্তব্য' দিচ্ছেন। এজন্য বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আন্দোলন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন।


জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্য ঠিক আছে। আর আন্দোলনের যে গতি, সেটাও ঠিক আছে। কারণ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই। সেই অনুযায়ী আমরা সেটা করছি। আর আমাদের আন্দোলনে আমরা জনগণকেও সম্পৃক্ত করছি।


জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিবার্তাকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান দল বিএনপি। সুতরাং যুগপৎ আন্দোলন ধীর গতি এগোচ্ছে না কি গতি হারাচ্ছে, এবিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না।


যুগপৎ আন্দোলনের ধীর গতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, এখন ধীর গতিতে চলছে। কিন্তু ঈদের পরে যুগপৎ আন্দোলনের গতি বাড়বে।  


জানতে চাইলে এনপিপির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বিবার্তাকে বলেন, আন্দোলন হচ্ছে- ঢেউ এর মতো। এক সময় নিচে নামে আবার উপরে ওঠে। আর আমরা বলেছি, এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। সুতরাং আন্দোলন আরো বেগবান হবে। 


ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বিবার্তাকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলন এখন ধীর গতিতে এগোচ্ছে, এটা ঠিক। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে জাগিয়ে তোলা। যাতে মানুষ আমাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পারে। আর এই যুগপৎ আন্দোলন শেষ পর্যায়ে গিয়ে ‘একদফার আন্দোলনে’ পরিণত হবে। আর ওই সময় অতিমাত্রায় আন্দোলন হবে।


যুগপৎ আন্দোলনের গতি কবে নাগাদ বাড়তে পারে- এমন প্রশ্নে জবাবে বাবলু বিবার্তাকে বলেন, এটা ঈদের পরেও হতে পারে। কিন্তু আন্দোলনের গতি নির্ভর করবে সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপরে।


বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিবার্তাকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের চালিকা শক্তি হচ্ছে বিএনপি। সুতরাং বিএনপি যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে সেভাবেই আন্দোলন হবে। তবে যথাসময়েই আন্দোলনের মাত্রা বাড়বে। তাই যেকোন সময়ই আন্দোলনের গতি বাড়তে পারে।


জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শীর্ষ নেতা ও ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক  সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বিবার্তাকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলন ধীর গতিতে এগোচ্ছে। কিন্তু আমরা আন্দোলনের গতি বাড়াতে চাই। তবে যুগপৎ আন্দোলনে গতি বাড়বে কি না- তা বিএনপি ভালো বলতে পারবে ।


প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে ব্যর্থ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা বাস্তবায়ন এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।


এরই অংশ হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর বিভাগে এবং ২৪ ডিসেম্বর সারাদেশে গণমিছিল করে বিএনপি। পরে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি হিসেবে ১১ জানুয়ারি সারাদেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগীয় সদরে গণঅবস্থান কর্মসূচি, ১৬ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে, ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপে, ৪ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপে, ষষ্ঠ ধাপে ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা, সপ্তম ধাপে ১৮ ফেব্রুয়ারি সব মহানগরে পদযাত্রা, অষ্টম ধাপে ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় পদযাত্রা, নবম ধাপে আগামী ৪ মার্চ সব মহানগরের থানা পর্যায়ে পদযাত্রা, দশম ধাপে ১১ মার্চ বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদসহ ১০ দফা দাবিতে সারাদেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন করেছে বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আর আগামী ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে সব মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।


বিবার্তা/কিরণ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com