পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসীদের এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ নেই: হানিফ
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ১৪:০০
পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসীদের এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ নেই: হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

যারা পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী, বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।


তিনি বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, দেশের অস্তিত্ব চায়নি এবং দেশের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। যারা পাকিস্তানে আদর্শ বিশ্বাসী তাদের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।


৫ মার্চ রবিবার দুপুরে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ অডিটোরিয়ামে নবীনবরণ ও অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আদর্শ মানুষ হতে হলে নিজের শেকড় জানতে হবে। আমরা কারা? কোথা থেকে এসেছি? কিভাবে এসেছি? এসব জানতে হবে। এসব জানলে দায়িত্ববোধ, কৃতজ্ঞতাবোধ থাকবে। নাগরিক হিসেবে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।


হানিফ বলেন, আমাদের দেশের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। এদেশের জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম আছে। ৩০ লাখ শহিদ এবং দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমাদের শেকড় অন্তর্নিহিত আছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে।


প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানা দরকার। লেখাপড়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাস সঠিকভাবে জানা থাকলে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবে না।


তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী গোলাম আযমের নেতৃত্বে রাজাকার-আলশামস গঠন করেছিল। বদর বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ। তারা পাকিস্তানের পাশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। নির্যাতন করার জন্য তারাই সৈন্যবাহিনী তৈরি করেছিল। এই রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী। যাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পাকিস্তানের সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত।


হানিফ বলেন, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ ও আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পর পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব উঠেছিল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা পাকিস্তানের সৈনিক ছিল এটি মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। তারা এখনো পাকিস্তানের আদর্শের অনুসারী। এখনো যারা এই জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে- অনুরোধ করবো, যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, দেশের অস্তিত্ব চায়নি এবং দেশের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। যারা পাকিস্তানে আদর্শ বিশ্বাসী তাদের রাজনীতি করার সুযোগ নেই।


শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, তোমরা কী হতে চাও? কোন পর্যায়ে যেতে চাও? সেটা নির্ধারণ করে জীবনটাকে সাজাতে হবে। তাহলে অনেক দূর যেতে পারবে। জিপিএ-৫ পাওয়া জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নয়। এছাড়াও মানুষ জীবনে অনেক কিছু অর্জন করতে পারে। একজন শিক্ষার্থীর যদি ডেডিকেশন, কমিটমেন্ট থাকে তাহলে যেকোনো বিষয় নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে।


আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নীতি-নৈতিকতার চরম অবক্ষয়। আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য দৌড়াই। কিন্তু সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপার অনেকে ভুলে যায়। মনে রাখতে হবে, শিশুদের প্রথম স্কুল হলো পরিবার। আর বাবা-মা হচ্ছে তার প্রথম শিক্ষক। শিশুদেরকে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।



তিনি বলেন, আগামীতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিকস এর ব্যবহার বাড়বে। সেই প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ দরকার। তবে তার চেয়ে বেশি আমাদের দরকার আদর্শ মানুষ গড়ে তোলা। যে নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে সমাজের মধ্যে পরিবারকে উজ্জ্বল করতে পারবে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। অন্যথায় তার দ্বারা দেশের কোনো উপকার হবে না।


ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির কারণে আমরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন করতে পেরেছি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ছাত্রদের। আর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল তার অগ্রভাগে। ছাত্রলীগ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন। শুধু স্লোগান নির্ভর ছাত্রলীগ আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই ছাত্রলীগ ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করার জন্য, শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য কাজ করবে।


তিনি বলেন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে কল্যাণমূলক কাজ করে তাদের মন জয় করে বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। শুধু স্লোগান দিয়ে কোনো লাভ হবে না। মনে রাখতে হবে, মানুষ যাকে অনেক ভয় পায় তাকে ভয়ে সম্মান করে, কিন্তু অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করে না। আমরা চাই মানুষ ভালোবেসে ছা্ত্রলীগকে সম্মান, শ্রদ্ধা করবে।


অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতাসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/সোহেল/কেআর

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com