রাজনীতি
কুষ্টিয়া পৌরসভা : ঘটনাস্থলে না থেকেও মামলায় আসামি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা!
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১০:১৪
কুষ্টিয়া পৌরসভা : ঘটনাস্থলে না থেকেও মামলায় আসামি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়া পৌরসভায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সামনে ইব্রাহিম হোসেন নামে একজনের হাট-বাজার ইজারার দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় থানায় মামলাও দায়ের করেন তিনি। রহস্যজনকভাবে টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়ার সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের নাম না দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নামে মামলা করেছেন ইব্রাহিম হোসেন।



তবে মামলায় অভিযুক্তরা এ ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে বলছেন, এই ঘটনার সাথে তাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এমনকি সেদিন মামলার বাদির সাথে এক সেকেন্ডের জন্যও দেখা হয়নি বলে দাবি করছেন মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।



টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা না থাকার পরও দলের নেতাদের নামে মামলা দেয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলছেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে এ ধরণের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দলের ত্যাগী নেতাদের ঘায়েল করতে মামলায় সুকৌশলে দলের নেতা-কর্মীদের ফাঁসানো হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না দিয়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে আমাদের। নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানাচ্ছেন তারা।


কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া শহর এবং শহরতলীর ১০টি হাট-বাজার পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছর মেয়াদি টোল আদায়ের লক্ষ্যে ইজারার দরপত্র আহবান করে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ। উক্ত তারিখ হতে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি করা হয় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টা পর্যন্ত সিডিউল জমা প্রদানের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়।


দশটির মধ্যে ছয়টি বাজারের ইজারা নেয়ার জন্য দরপত্র কেনেন ইব্রাহিম হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা। ইব্রাহিম হোসেনের দাবি, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেলা পৌঁনে একটার দিকে তিনি সিডিউল জমা দিতে পৌরসভায় যান। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের দাবি, তিনি একটার পর সিডিউল জমা দিতে এসেছেন। যার কারণে সেখানে উপস্থিত থাকা লোকজন তাকে বক্সে দরপত্র ফেলতে বাধা দেন। পরে একপর্যায়ে পৌরসভা কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় রক্ষিত টেন্ডার বক্সে খাম ফেলার সময়ে ইব্রাহিম হোসেনের হাত থেকে তা ছিনিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দেয় দুর্বত্তরা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।



পরে টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার ইব্রাহিম হোসেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে- কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফিল উদ্দিন, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক হাসিব কোরাইশি ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস খন্দকারসহ অজ্ঞাত ২০ জনকে।



মামলার বাদি ইব্রাহিম হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন দুপুর পৌনে ১টায় কুষ্টিয়া পৌরসভার ১০টি হাট-বাজার ইজারার দরপত্র পৌরসভার মেয়র কার্যালয়ের বারান্দায় রক্ষিত টেন্ডার বক্সে দরপত্র ফেলতে গেলে সেখানে ওত পেতে থাকা আসামিরা পুলিশের সামনে তার হাত থেকে জোরপূর্বক দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দেয়। এসময় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগও করেন ওই ঠিকাদার।


তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইব্রাহিম হোসেনের কাছ থেকে যারা টেন্ডার ছিনিয়ে নিচ্ছেন তাদের মধ্যে মামলার আসামি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। যারা টেন্ডার ছিনিয়ে নিয়েছে মামলায় তাদের কারো নাম নেই। অন্যদিকে যারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না এমন সব আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা করা হয়েছে।


অন্যদিকে রহস্যজনকভাবে ওই ঘটনার একদিন পর শনিবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র কার্যালয়ে তালা ভাঙচুর ও চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে চোর বা চোরেরা।


স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের নেতা-কর্মীরা টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িত ছিলেন না তার প্রমাণ রয়েছে পৌরসভার সিসি ক্যামেরা ফুটেজে। প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সিসি ফুটেজ উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছেন তারা।


বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে কুষ্টিয়া শহরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও ষড়ডন্ত্রমূলক মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।



কী ঘটেছিল সেদিন:



২৩ ফেব্রুয়ারি পৌরসভায় টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর মুঠোফেনে ধারণ করা ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সেদিন পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে দরপত্র ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।


ভিডিওতে দেখা যায়, জলপাই রংয়ের পাঞ্জাবি পরিহিত ঠিকাদার ইব্রাহিম হোসেন নামের এক ব্যক্তি টেন্ডার বক্সে দরপত্র ফেলতে গেলে একজনের সাথে তার বাক-বিতণ্ডা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ইব্রাহিম হোসেন হাতে থাকা কয়েকটি খাম বক্সে ফেলতে গেলে গেঞ্জি পরিহিত একজন যুবকের সাথে তার ধাক্কাধাক্কি হয়।


দোতলা থাকা টেন্ডার বক্সে খাম ফেলতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এক যুবক ইব্রাহিম হোসেনের হাতে থাকা খাম ছিনিয়ে নেন। পরে তা নিচে ফেলে দেন। এরপরে গেঞ্জি ছেঁড়া অবস্থায় ওই যুবককে বের হয়ে চলে যেতে দেখা যায়। তবে এ ঘটনার মামলায় আসামি করা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাউকে ভিডিওতে দেখা যায়নি।


জানতে চাইলে ইব্রাহিম হোসেন বিবার্তাকে বলেন, আমি এর আগে কোনো টেন্ডারে অংশ নেইনি। আমরা সরকারি দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়ে বাজার নেয়ার জন্য দরপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম। মামলার আসামিরা সিডিউল ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। তাদের বাধার কারণে অনেকই সেখানে সিডিউল ফেলতে পারেনি। আমাকে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে।



মামলায় অভিযুক্তরা যা বলছেন:



ঘটনার পর গণমাধ্যমে মামলায় অভিযুক্তদের নাম জড়িয়ে খবর প্রকাশ পেলে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আফিল উদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেন, আমি একটি দরপত্রে অংশ নিয়েছি। মিউনিসিপ্যাল বাজারের সর্বনিম্ন মূল্য ২২ লাখ ১১ হাজার টাকা। অথচ ইব্রাহিম তার এজাহারে সে বলেছে তার সবগুলোর সিডিউল মূল্য ১৭ লাখ টাকা। এরকম যদি হয় তবে আমি কেন তাকে বাধা দিতে যাবো?


প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, আমার বয়স ৬৫ এর ওপরে। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোন যোগসূত্রই নেই। অথচ আমার নামে মামলা হয়েছে। বিষয়টা আমার জন্য অনেক কষ্টদায়ক।


কুষ্টিয়া শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী বলেন, বিগত বছর আমি পশু জবাহর ইজারা পেয়েছিলাম। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও দরপত্র জমা দেয়ার জন্য পৌরসভায় যাই। আমি শুধু পশু জবাহর টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলাম। এটির বেইজড প্রাইস ছিলো দেড় লাখ টাকা। পশু জবাহর ইজারার দরপত্র আমিসহ ৮ জন দাখিল করেছেন। যদি আমি বাধাই দিয়ে থাকি তাহলে কিভাবে ৮ জন অংশ নিলো?


তিনি বলেন, উন্মুক্ত টেন্ডার বক্স খোলা হলে এবার অন্য ঠিকাদার পশু জবাহর ইজারা পান। আমি এ বছর ইজারাই পাইনি। তাহলে আমি কেন আরেকজনকে বাধা দিতে যাবো। অথচ আমার ওপর দোষ চাপান হচ্ছে। পশু জবাহর ইজারা দরপত্র জমা দেয়া ব্যাতীত আর অন্য কোন কর্মকাণ্ডে আমি বা আমার সংগঠন শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোন নেতা-কর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও মনগড়া। এ ঘটনার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পৃক্ততা নেই।


অভিযোগ প্রসঙ্গে ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর আনিস কোরাইশীর ছেলে শহর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসিব কোরাইশী বলেন, আমার বাবা কাউন্সিলর। বিভিন্ন কাজে পৌরসভায় যেতে হয়। সেদিনও একটা কাজে গিয়েছিলাম। তবে কারো দরপত্র জমা প্রদানে বাধা দেইনি।


কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ বলেন, আমি বা কুষ্টিয়া পৌরসভার কোন কাউন্সিলর টেন্ডারবাজির সাথে কখনো জড়িত ছিলাম না। আর সবচেয়ে বড় প্রমাণ ভিডিও ফুটেজ। ঘটনার সময় আমি পৌর কার্যালয়ে প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দিনের সাথে অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। আমি এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।


কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস খন্দকার বলেন, পৌর ভবনস্থ মেয়রের কার্যালয়ের যেখানে টেন্ডার বক্স রাখা হয়েছে আমি তার আশে পাশেও ছিলাম না। বাদির অভিযোগ আমি উনাকে দরপত্র ফেলতে বাধা দিয়েছি। কিন্তু সেখানে আমার উপস্থিতি পৌরসভার কোনো ফুটেজেই পাওয়া অসম্ভব। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য একটি পক্ষ আমাকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।



আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা যা বলছেন:



কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা বিবার্তাকে বলেন, মামলাটা একদমই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে- ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে ছবি তো দূরে থাক তাদের কোনো চিহ্নই নেই। যাদের আংশিক ছবিও নেই তাদের নামে মামলা হলো আর সেই জায়গায় যাদের ছবি দেখা যাচ্ছে তাদের কেউ কিন্তু আসামি নয়। আমরা মনে হয় এই পাঁচজনকে দলীয়ভাবে ঘায়েল করার জন্য অন্য কারো ইন্ধনে এই মামলা হয়েছে।


তিনি বলেন, এই পৌরসভায় চুরির নাটক সাজানো হয়েছে। আমি শুনেছি পৌরসভার ইন্টার্নাল তদন্ত চলছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা থেকে কাগজ চেয়েছে। আমার মনে হয় তাই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।


আতাউর রহমান আতা বলেন, টেন্ডারে দলের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ থাকতে পারে। আপনি একটা ঘটনাই দেখেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মানব চাকী যাকে আসামি করা হয়েছে তিনি যে গ্রুপে টেন্ডার দিয়েছে গত বছর এই গ্রুপে দিয়ে পেয়েছিল। কিন্তু এবার ঐ গ্রুপের নয়টা টেন্ডার পড়েছে এবং কাজও পায়নি। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সুকৌশলে, সুপরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।


কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মেহেদী বিবার্তাকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক। যারা অপরাধী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তি হোক। আরেকটা ঘটনা হলো যদি কেউ নিরপরাধ হয় তাকে যেন ন্যূনতম হয়রানি না করা হয়। কারণ যে নিরপরাধ তার পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যারা দোষী তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।


কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বিবার্তাকে বলেন, দরপত্র বক্সে ফেলার নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর একটায়। সেই জায়গায় ইব্রাহিম হোসেন মিরাজ দরপত্র দিতে গেছে ১টা ২০ মিনিটে। যারা দরপত্র ফেলতে বাঁধা দিয়েছে তারা বলেছে, পৌর কর্তৃপক্ষ সময়মতো বক্স সিলগালা করেনি তাই তারা বাধা দিয়েছে।


তিনি বলেন, তারা নির্ধারিত সময়ে না গিয়ে অতিরিক্ত সময়ে হট্টগোল করতে গেছে। কারণ তাদের যে রেট দেখলাম, ওরা সবগুলো মিলিয়ে টোটাল দিয়েছে ১৭ লাখ টাকা। অথচ একটা বাজারেই রেট ছিল ২২ লাখ টাকা। তারা জানে কাজ পাবে না। এছাড়া কোনো হাটবাজারের টেন্ডারেও এর আগে অংশ নিয়েছে এমন রেকর্ড নেই।


রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য এ মামলা করা হয়েছে। আমাদের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের যেসব নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো না তাদের নামে তারা মামলা করেছে। যাদের নামে মামলা দিয়েছে তারা কোনো কাজও পায়নি। মামলায় যাদের নাম এসেছে তারা কুষ্টিয়া শহরে মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকে। আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।


সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বিবার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। যদি অপরাধী আমাদের নিজের দলের লোকও হয় তবু তাকে কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড় দেন না। তবে আমরা চাই এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হোক।


তিনি বলেন, আমরা একটি ভিডিও ফুটেজ দেখেছি, যে হাত থেকে কাগজ কেড়ে নিয়েছে সে ভিন্ন লোক। যাদের নামে কেস হয়েছে তারা কেউ এর সংশ্লিষ্ট নয়। আমার মনে হয়, সামনে নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াতের কেউ সুকৌশলে, সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার পাঁয়তারা করছে।


জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু বিবার্তাকে বলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভার ঘটনায় আমাদের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলে বুঝা যায় এতে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোন নেতা-কর্মী জড়িত নয়। একটাই দাবি জানাব সিসি ক্যামেরা রেকর্ডিং দেখে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।


তিনি বলেন, দলের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে অপরাধীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া যারা পৌরসভার সিসি ক্যামেরা চুরি করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।


জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেবুন্নেছা সবুজ বিবার্তাকে বলেন, ঠিকাদারি একটা ব্যবসা। ঠিকাদারি তিনি করবেন যিনি ব্যবসায়ী, যার কোনো কালার নেই। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনিয়ম-দ্বন্দ্ব হয়ে থাকলে সেটাকে অনেকে পরবর্তী পর্যায়ে রাজনৈতিক কালারে নিয়ে আসে। আমি চাই এ ঘটনার সঠিকভাবে তদন্ত হোক। যিনি অপরাধী দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।


জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বিবার্তাকে বলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভায় যে ঘটনা ঘটেছে ওই ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সংগঠনের কেউ জড়িত এমন প্রমাণ কিন্তু কেউ দিতে পারেনি। সেই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখেছি, সেখানেও কিন্তু আওয়ামী লীগের কেউ নেই। এ ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দোষীরা আইনের আওতায় আসুক।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com