শিরোনাম
বিজ্ঞাপনের ম্যাসেজ ১ টাকা, ফোন কল ২ টাকা
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০১৯, ১৩:২৭
বিজ্ঞাপনের ম্যাসেজ ১ টাকা, ফোন কল ২ টাকা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫ কোটি ছাড়িয়েছে।


এর মধ্যে গ্রামীণ ফোনের মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত কোটি, রবি আজিয়াটার সাড়ে চার কোটির উপরে, বাংলালিংকের সাড়ে তিন কোটির কাছাকাছি এবং টেলিটকের প্রায় ঊনত্রিশ লাখ।


যেহেতু একবার ব্যবহার শুরু করে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করে দেয় না, সেহেতু মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কখনো কমে না, বরং প্রতিদিনই বাড়ছে এ সংখ্যা।


মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সঠিক নিয়মে নিয়মিত ভ্যাট প্রদান ইতোমধ্যে বহুবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে নতুন সিম বিক্রির মাধ্যমে কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে ‘ফোর জি’ প্রতারণা- বস্তা বস্তা জিবির দুর্দান্ত গতির নামে জোঁকের মতো প্রতিদিন তারা শুষে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।


বাঙালি মেনে নিতে অভ্যস্থ বলে সব কিছু মেনে নেয়। সব কিছু বুঝেও এরা না বোঝার ভান করে। বিকল্প কোনো উপায়ন্তর না থাকায় মোবাইল কোম্পানিগুলোর এ সব স্বেচ্ছাচারিতাকে সঙ্গী করে চলছে প্রতিটি বাঙালির দৈনন্দিন জীবন।


আমাদের দৈনন্দিন জীবন যন্ত্রণায় বিরক্তির নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনি মেসেজ বা ফোন কল। প্রতিটি কোম্পানি প্রতিদিন গড়ে প্রতি কাস্টমারকে ১০ থেকে ১৫টি করে ‘অফার’ মেসেজ পাঠাচ্ছে। সময়ে অসময়ে, মাঝ রাতে ঘুমের মাঝে, প্রতিনিয়ত টুং-টাং করে মেসেজগুলো আপনার ইনবক্সে জমা হতে থাকে। ব্যাপারখানা এই রকম যে, ওই সব কোম্পানির মোবাইল সিম ব্যবহার করে আপনি নিজেকে ওদের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছেন। আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই। আপনি চান বা না চান এ সব মেসেজ আপনার মোবাইলে আসতেই থাকবে এবং সেগুলো আপনাকে দেখতে হবে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে পড়াশোনার মনোযোগ, কাজের একাগ্রতা, ও শখের ঘুম।


আরো মজার বিষয় হলো, আপনি চেষ্টা করলেও এসব মেসেজ বা ফোন কল বন্ধ করতে পারবেন না। অনেকে বলে, কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে মেসেজ বা ফোন কল বন্ধ করে দেয়া যায়।


আমার প্রশ্ন হলো, মেসেজ বা ফোন কল শুরু করার আগে কি আমাদেরকে বলা হয়েছে যে আপনি যদি আমাদের সিম ব্যবহার করেন, তবে আমরা আপনাকে যথেচ্ছাভাবে সময়ে অসময়ে ভুরি ভুরি মেসেজ পাঠাবো বা ফোন কল করবো, না কি সিম কেনার সময়ে আমরা এমন কোথাও স্বাক্ষর করেছি যেখানে বলা আছে এই সিম ব্যবহার করলে মোবাইল কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমত আমাদেরকে মেসেজ পাঠানো বা ফোন কল করার নিরঙ্কুশ অধিকার রাখে। যদি এগুলো কোনটাই না ঘটে থাকে, তবে আমাদেরকে কেন কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে নিজ উদ্যোগে মেসেজ বা ফোন কল বন্ধ করতে হবে?


তাছাড়া বাংলাদেশে এখনো এমন অনেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী আছে যারা ‘কাস্টমার কেয়ার’ নামক চিটিংবাজ প্রতিষ্ঠানটির সাথে পরিচিত নয়, অথবা তারা এখানে ফোন করতে সাহস পায় না।


কিন্তু বাস্তবতা হলো, কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে শতবার অনুরোধ করলেও আপনি তাদেরকে মেসেজ পাঠানো বা ফোন কল থেকে বিরত রাখতে পারবেন না। কয়েকদিন বন্ধ থাকবে, তারপরে বন্ধ রাখার মাশুল হিসেবে আগের থেকে দ্বিগুণ সংখ্যক মেসেজ আসতে শুরু করবে। ঘাম ঝরিয়ে আয় করা পকেটের টাকা দিয়ে আমরা প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। আমাদের টাকা নিয়ে আমাদের ঘাড়ে বসে স্বেচ্ছাচারী এ ব্যবসার অবসান হওয়া প্রয়োজন।


পুঁজিবাদের এ যুগে বিনা পয়সায় কোনো বিজ্ঞাপন দেবার বা গ্রহণের সুযোগ নেই। মোবাইল কোম্পানিগুলো যেমন বিনা পয়সায় আমাদেরকে এক মিনিট কথা বলার সুযোগ দেয় না, তেমনি আমরাও বিনা খরচে তাদের এ সব হীন কর্মকাণ্ড চলতে দিতে পারি না। যদি তারা এ সব বিজ্ঞাপন অব্যাহত রাখতে চায়, তবে বস্তা পচা বিরক্তিকর প্রতিটি মেসেজের জন্য কাস্টমারকে ১ টাকা এবং প্রতিটি ফোন কলের জন্য ২ টাকা করে ব্যালেন্স দিতে হবে। ফলে আমাদের কিছুটা আর্থিক সুবিধা হবে, বিরক্তি লাঘব হবে- মোটের উপর, পেটে খেলে পিঠে সয়।


প্রতিটি মেসেজের জন্য ১ টাকা এবং প্রতিটি বিজ্ঞাপনী ফোন কলের জন্য ২ টাকা করে দিলে, প্রতিদিন এক এক জন কাস্টমারের ১২ থেকে ১৫ টাকার ব্যালেন্স জমা হবে। এ টাকায় আমাদের অনেক দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন মোবাইল খরচের জন্য বাড়তি কোনো খরচের প্রয়োজন হবে না। যদি কোনো কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপন বাবদ এ খরচ করতে অনীহা প্রকাশ করে তবে আমরা সবাই মিলে তাদের বিজ্ঞাপন পরিহারের উদ্যোগ নিতে পারি।


এ দাবিকে গণদাবিতে রূপান্তর করা এখন সময়ের প্রয়োজন। যদি এ দাবিকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, তবে আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষেরা কিছুটা হলেও আর্থিক স্বস্তি পাবে।


আমরা সবাই হ্যাশট্যাগ (#বিজ্ঞাপনেরমেসেজ১টাকা) দিয়ে এ দাবিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে পারি।


লেখক: মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ভূইয়াঁ, পরিচালক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উইং, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com