শিরোনাম
শুদ্ধতার জাগরণে ফিরে আসুক তারা যারা গেয়েছিলো শিকল ভাঙার গান
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ১০:২৮
শুদ্ধতার জাগরণে ফিরে আসুক তারা যারা গেয়েছিলো শিকল ভাঙার গান
এফ এম শাহীন
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধু কন্যার দুর্নীতি ও ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে গণমানুষের মধ্যে যে আশার জাগরণ তৈরি হয়েছে তা স্পষ্ট লক্ষণীয়। দুর্নীতি যখন একটি দুরারোগ্য নিরব ঘাতকের মতো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশে প্রায় স্থায়ী রূপ নেয়ার পথে, তখন এই অভিযান ‘ম্যাজিক্যাল টনিক’ এর মতো কাজ করে চলেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্সে’র অঙ্গীকার করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।


তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন অভিযান শুরু করেছেন তিনি। নিজ ঘরে শুরু হওয়া এ অভিযানে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। ঘরের চৌকাঠ ডিঙ্গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় চলমান শুদ্ধি অভিযানের পরিধি বাড়ছে সব সেক্টরে। অভিযানে একটি বিষয় সবার সামনে এসেছে সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অবক্ষয় এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছে সমাজটাকে যা ভীষণ উদ্বেগজনক।


অর্থ লোভী একদল মানুষ নিজেদের একটি বিশেষ শ্রেণির প্রাণী হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন। সকল নিয়ম নীতিকে পাশ কাটিয়ে সিন্ডিকেটের নতুন রাজ্য নির্মাণ করেছেন। যার গোড়াপত্তন হয়েছে ৯০ দশকের শুরুর দিকে। আজ সেই মহা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কুঠরিতে ভীষণ জোরে আঘাত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের বিশ্বাস যা সম্ভব হয়েছে শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বলে নয় বরং বঙ্গবন্ধুর রক্ত যে প্রবহমান তার শরীরে। শুধু রাজনীতির অঙ্গনে নয় সর্বমহলে সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অসীম সাহসী শুদ্ধি অভিযানে জাতি নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে। তিনি বলেছেন “আমাদের দলের কে, কী- সেটা আমি দেখতে চাই না। আমার আত্মীয় পরিজন- আমি দেখতে চাই না। কে কত বেশি উচ্চবিত্ত সেটা আমি দেখতে চাই না। অনিয়ম যেখানে আছে, দুর্নীতি যেখানে আছে বা আমাদের দেশকে ফাঁকি দিয়ে যারা কিছু করতে চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।” দেশের রাজনীতি সচেতন জনসাধারণ মনে করে, একটি আধুনিক সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলে নাগরিকের সুষম বিকাশ বিঘ্নিত হয়। আর সে লক্ষ্য অর্জনের পথে দুর্নীতি সবচেয়ে বড় বাধা। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন এবং তারা সচেতন যে, সে লড়াই খুব সহজ হবে না।


তবে সৎ পথ অবলম্বন করে বেঁচে থাকা মানুষগুলো যেন ভুল পথে নেই সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন জাগরণে ভাবছে দেশপ্রেমিক ছাত্র-যুবক। বিগত সময়ে তারা ভীষণ পিছিয়ে পড়েছিল কিছু আদর্শহীন অর্থ লোভী অমানুষদের চাওয়া-পাওয়ার কাছে। সেই সকল ছাত্র-যুবক যারা বুক চিতিয়ে দেশের জন্য কাজ করেছিল, দলের জন্য কাজ করেছিল তারা যেন হতাশার গ্লানিতে হারিয়ে যাচ্ছিল দিনের পর দিন। জীবনের সোনালি সময় ছাত্রজীবনে নিজের ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে যারা সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের সামনে, গুলির মুখে মিছিল বের করে জয় বাংলা স্লোগান ধরে উচ্চস্বরে বলেছিল, শেখ হাসিনার মুক্তি চাই, জেলের তালা ভাঙবো-শেখ হাসিনাকে আনবো। সেই সকল বীর সেনানী ছাত্রনেতাদের বেশিরভাগই অবমূল্যায়নে, অপমানে রাজনীতি থেকে যেন দূরে সরে যাচ্ছিল। আজ সুবিধাভোগীদের দাপটে সেই সকল আপোষহীন রাজপথের যোদ্ধারা কোণঠাসা। আজ তাদের কাছে আশার বাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একমাত্র শেখ হাসিনা।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ওয়ান ইলেভেনে দেখেছি অনেক তুখোড় নেতাদের আপোষকামিতা, দেখেছি ভিন্ন সুরে কথা বলতে। অথচ গুটিকয়েক ছাত্রনেতারা সেদিন মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমেছিল, আপনার মুক্তির আন্দোলনে। সেদিন তাদের দেখে সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত আপনার হাজারো নিবেদিত কর্মীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তুমুল আন্দোলনের মুখে আপনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন সেনা শাসিত সরকার। আজ সেই সকল নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের যারা দূরে রাখতে চায়, তারা সেই দুর্বৃত্ত যারা চায় না বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়তে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়তে। তারা ভিন্ন আদর্শের লোকেদের অনুপ্রবেশ করিয়ে আপনার হাতকে দুর্বল করতে চায়। আপনার সকল অর্জনকে বিতর্কিত করতে চায়।


অথচ তারা কি অস্বীকার করতে চায় এদেশর ভূখণ্ডের জন্মের সঙ্গে মিশে থাকা ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা? বিশেষ করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‌’৬২-র কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা, ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-র নির্বাচন, ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি ও আন্দোলন সফল করার ভ্যানগার্ড হিসেবে তৎকালীন ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা। তারা কি অস্বীকার করবে ’৯০-র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ওয়ান ইলেভেনে নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন, ২০১৩ তে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনে এদেশের ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক ভূমিকা?


আজ যখন আপনি শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে জনগণের ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম-লড়াই করছেন। আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। আপনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। তখন নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে ঘরে বাইরে। এই সকল বাঁধা সংকট উত্তরণে আপনার পাশে দরকার দুঃসময়ের পরিক্ষিত কর্মীদের। যারা জীবনবাজি রাখতে প্রস্তুত সকল সংকটে। আজ তারা ফিরে আসুক সকল সিন্ডিকেট ভেঙে আপনার মমতার ছায়াতলে।


শুদ্ধি অভিযান যেমন দেশবাসীর কাছে নতুন বার্তা দিচ্ছে তেমনি দলের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের মনেও আশার সঞ্চার ঘটেছে। ইতিহাস ঘাঁটলে জানতে পারবো এরশাদ, খালেদা জিয়া ও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যার শুদ্ধি অভিযানের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। আগের অভিযানের লক্ষ্য ছিল সরকারের প্রতিপক্ষ, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি কিংবা ব্যবসায়ী। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলেও তাই দেখা গেছে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যাদের ধরা হতো, কিছুদিন পর তারাই জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতো। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় নিজ দলের সন্ত্রাসী নেতা-কর্মীদের ধরলেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।


সময় এসেছে, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপনার হাত ধরে একটি পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে যা দলের ভিতরে-বাইরে সকল ধরনের দুর্নীতি, অসততা ও অন্যায্যতা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তাই, আগামী দিনের সকল চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলায় তারুণ্য ও আগামীর নেতৃত্বকে প্রস্তুত করতে হবে। তাই, আপনার শুদ্ধতার জাগরণে ফিরে আসুক তারা, যারা জীবনবাজি রেখে গেয়েছিলো শিকল ভাঙার গান। যারা দলের দুঃসময়ে জেল, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছে। দলের জন্য বিভিন্ন সময়ে ত্যাগ করেছে তারা এবার সঠিক মূল্যায়নের অপেক্ষায়, আপনার ইশারার অপেক্ষায়।


লেখক : এফ এম শাহীন, সাধারণ সম্পাদক গৌরব ’৭১, সংগঠক গণজাগরণ মঞ্চ।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com