কেমব্রিজ অভিধান অনুযায়ী ফোবিয়া (phobia) শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো –“an extreme fear or dislike of a particular thing or situation, especially one that cannot be reasonably explained”। এটি একটি মানসিক অবস্থা, যার কারণে কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই কোনো জিনিস বা ঘটনাকে প্রচণ্ডভাবে ভয় পায় বা ঘৃণা করে। এটি এক প্রকার anxiety disorder বা উদ্বেগ ব্যাধি। এ ধরনের anxiety disorder-এ যারা ভোগেন তাদের আচরণে কিন্তু বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এই যেমন, অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা, বিরক্তভাব, ক্লান্তিভাব, অন্যমনস্কতা, খিটখিটে মেজাজ, তন্দ্রাহীনতা, আতঙ্কগ্রস্ততা, অমূলক ভয় এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। এ রকম anxiety disorder-এ ভোগা ব্যক্তিরা তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য এমন কিছুকে দায়ী করে, যা কিনা তারা নিজেরা মানসিকভাবে ভয় পায় বা ঘৃণা করে। বিচারপতি সিনহার লেখা “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইটি পড়লে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয় আর তা হলো সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই সম্পর্কে বিচারপতি সিনহার একটা “ফোবিয়া” কাজ করে।

বিচারপতি সিনহা তাঁর লেখা “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের সুচনা অধ্যায়ে লিখেছেন- “Finally, in the face of intimidation and threats to my family by the country’s military intelligence agency called the Directorate General of Forces Intelligence, I submitted resignation from abroad.” অর্থাৎ বিচারপতি সিনহার বক্তব্য অনুযায়ী তাঁর পরিবারকে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেয়ার কারণে তিনি বিদেশে অবস্থাকালেই প্রধান বিচারপতি পদ হতে ইস্তফা প্রদান করেন।

আমি তাঁর লেখা “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইটি এরই মাঝে অন্তত গোটা দশেক বার পড়েছি। কিন্তু বইটির কোথাও বিচারপতি সিনহার পরিবারের সাথে ডিজিএফআই-র কোনো অফিসার কখনো যোগাযোগ করেছেন বা করতে চেয়েছেন তার তিল পরিমাণ উল্লেখ পাইনি। সেখানে তাঁর পরিবারকে ডিজিএফআই ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেয়া তো দূরের কথা। বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ে বেশ কয়েক বার ডিজিএফআই-র চীফ এবং কর্মকর্তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের কথা বলেছেন বটে, তবে বইয়ের তথ্য অনুযায়ী সেই দেখা-সাক্ষাত হয়েছে - (১) তাঁর নিজের সাথে (অধ্যায় ১৫-য ও অধ্যায় ২৯); (২) হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি কাজী রেজাউল হকের সাথে (অধ্যায় ২৭); (৩)। বিচারপতি সিনহার সেক্রেটারি আনিস (অধ্যায় ২৯) এবং (৪) ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়ের সাথে (অধ্যায় ২৯)। বিচারপতি সিনহার সেক্রেটারি আনিস, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক অথবা ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায় - এদের তিনজনের কেউই তো বিচারপতি সিনহার পরিবারের সদস্য নন। তাহলে এই যে বিচারপতি সিনহা দাবি করলেন যে, ডিজিএফআই তাঁর পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়েছে আর সে কারণেই তিনি একেবারে বিদেশে বসেই ইস্তফাপত্র দিলেন, সেই ঘটনাটি তাহলে কখন ঘটল? ডিজিএফআই সম্পর্কে বিচারপতি সিনহার এহেন মিথ্যাচার করা কি খুব জরুরী ছিল? ডিজিএফআই সম্পর্কে বিচারপতি সিনহার এ ধরনের অভিযোগ মূলত তাঁর ডিজিএফআই-ফোবিয়ারই বহিঃপ্রকাশ প্রমাণ করে; অন্য কিছু নয়।

বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ের অধ্যায় ১৫-য তে দাবি করেছেন যে তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর ডিজিএফআই-এর চীফ মেজর জেনারেল শফিউল আবেদীন দু’বার তাঁর সাথে তাঁর হাই কোর্ট চেম্বারে শর্মিলা শারমিন পোলেন হত্যামামলার আসামিদের পক্ষে তদবির করতে আসেন, যা তিনি মোটেও পছন্দ করেননি। ঘটনার বর্ণনায় বিচারপতি সিনহা ডিজিএফআই-র চীফ মেজর জেনারেল শফিউল আবেদীনের নাম বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছেন। বুঝলাম, ডিজিএফআই-র চীফ মেজর জেনারেল শফিউল আবেদীন খুব খারাপ কাজ করেছেন। একজন প্রধান বিচারপতির কাছে তিনি এরকম অনৈতিক তদবির নিয়ে কখনোই যেতে পারেন না। জাতি হিসেবে আমরা একজন ডিজিএফআই চীফ-এর এই আচরণ মোটেও মেনে নিতে পারি না। কিন্তু সমস্যাটি হলো অন্যখানে। আজ পর্যন্ত মেজর জেনারেল শফিউল আবেদীন নামে কোনো ব্যক্তি ডিজিএফআই-র চীফ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হননি। এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র! বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ে অসংখ্যবার নিজেকে একজন প্রথম সারির ক্রিমিনাল ল’ইয়ার হিসেবে দাবি করেছেন। তাহলে তিনি যার বিরুদ্ধে অভিযোগনামা দাখিল করলেন তার কোনো অস্তিত্ব নেই কেন? এটা তাঁর ডিজিএফআই-ফোবিয়া ছাড়া আর কী ই বা হতে পারে?

বিচারপতি সিনহা তাঁর “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের অধ্যায় ২৭-এ বর্ণনা করেছেন যে ২০১৬ সালের ৪ঠা মে তারিখে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি কাজী রেজাউল হক তাঁকে জানান যে, সুপ্রীম কোর্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজিএফআই অফিসার তাঁকে (বিচারপতি কাজী রেজাউল হক) তখন হাই কোর্ট বিভাগে চলমান ষোড়শ সংশোধনী মামলায় রাষ্ট্রের পক্ষে রায় দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। সাথে সাথে বিচারপতি সিনহা বিষয়টি এটর্নি জেনারেল এবং আইনমন্ত্রীকে অবহিত করেন। শুধু তা-ই নয়, বিচারপতি সিনহা দাবি করেছেন যে, বিষয়টি তিনি নিজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।

খুবই ভালো কথা। বিচার বিভাগের ওপর এধরনের হস্তক্ষেপ যদি ডিজিএফআই অফিসার করে থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াই উচিৎ। আমরা সকলেই সহমত। কিন্তু ২০১৬ সালের ৫ই মে তারিখে হাই কোর্ট বিভাগের ষোড়শ সংশোধনী মামলায় যদি বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বিভক্ত রায় দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা যে ডিজিএফআই-র চাপে পড়ে দিয়েছেন, এ কথা বিচারপতি কোথায় পেলেন? কী হাস্যকর! আমাদের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের বিচারপতিগণ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে স্বাধীন। হাই কোর্ট বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী মামলায় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী রেজাউল হক সরকারের বিপক্ষে এবং বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এই রায় তাঁরা নিজেদের বিচার-বিবেচনা-প্রজ্ঞা থেকে দিয়েছেন। তাঁরা সকলেই নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন রায়ের মধ্যে। ডিসেন্টিং রায় দেয়া তো কোনো পাপ নয়, বরং তাঁদের সেই এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু আমাদের বিচারপতি সিনহা ডিজিএফআই-ফোবিয়ার কারণেই তিনি ধরেই নিলেন, এখানে একটা চক্রান্ত করেছে ডিজিএফআই! আর তাই তিনি এব্যাপারে “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের অধ্যায় ২৭-এ লিখলেন- “Everything then became clear to me : the DGFI officials had changed the mind of Md. Ashraful Kamal. Quazi Reza-ul Hoque maintained his integrity and did not succumb to the pressure whereas Md. Ashraful Kamal possibly could not overcome the pressure.”

কী মজার কাণ্ড দেখুন! বিচারপতি সিনহা হাই কোর্ট বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের পর নিশ্চিত হলেন যে, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ডিজিএফআই-র চাপকে পাত্তা দেননি, কিন্তু বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ডিজিএফআই-র চাপকে পাত্তা না দিয়ে পারেননি। আমাদের প্রশ্ন, প্রথমত, বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালকে যে ডিজিএফআই রায়ের ব্যাপারে চাপ দিয়েছে, এ তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? আর এটা কোনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ হলো? এখানে যে আরেকজন বিচারপতি (বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী) রয়েছেন তাঁর ব্যাপারে বিচারপতি সিনহা কিছুই বললেন না? নাকি ডিজিএফআই বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি! বিচারপতি সিনহার সূত্র অনুযায়ী বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী কি তাহলে ‘কাব্যে উপেক্ষিতা ঊর্মিলা’? বিচারপতি সিনহার কথাই যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে হাই কোর্ট বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী মামলায় কি ডিজিএফআই দড়ি টানাটানির খেলার আয়োজন করেছিল বিচারপতি কাজী রেজাউল হক আর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের মাঝে? আর সেই খেলায় বিচারপতি কাজী রেজাউল হক জিতে যাওয়াতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী নিজের জ্ঞান-বিজ্ঞতা-প্রাজ্ঞতা বিসর্জন দিয়ে বিচারপতি কাজী রেজাউল হকের পক্ষ নিয়েছিলেন? উফফ, বিচারপতি সিনহার কী ভয়াবহ ডিজিএফআই-ফোবিয়া!

এরপর আসা যাক আপিল বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়-পরবর্তী ডিজিএফআই নিয়ে বিচারপতি সিনহার লোমহর্ষক ঘটনাবলীতে। এখানে কিন্তু আমাদের সবাইকে “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইটির অধ্যায় ২৯ গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। কোনো কিছু বাদ দেয়া যাবে না।

বিচারপতি সিনহা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন জাপানে কনফারেন্সে অংশ গ্রহণ করতে যান, তখন জনৈক ডিজিএফআই অফিসার তাঁকে বাংলাদেশে না ফিরে কানাডা বা অস্ট্রেলিয়া যেতে বলে। ডিজিএফআই অফিসার তাঁকে বলে যে তিনি যেন ডিজিএফআই-র পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। বিচারপতি সিনহা বীরের মতো ডিজিএফআই-র নির্দেশনা মানতে অস্বীকৃতি জানান। ডিজিএফআই অফিসার তখন তাঁকে সাতদিন পর দেশে ফিরতে বলেন। বিচারপতি সিনহা বীরের মতো সেই নির্দেশনা মানতেও অস্বীকৃতি জানান। সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে আরেক ডিজিএফআই অফিসার তাঁকে একই অনুরোধ করে। কিন্তু কিসের কী? বিচারপতি সিনহা এসব ডিজিএফআই নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে বীরের বেশে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু এসেও বিপত্তি। ঢাকা বিমানবন্দরে নামামাত্রই আরেকদল ডিজিএফআই অফিসার তাঁকে ভিআইপি লাউঞ্জে চা পানের আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু সাহসী বিচারপতি সিনহা এসব মানবেন কেন? তিনি ডিজিএফআই নির্দেশনার নিকুচি করে নিজের গাড়িতে উঠে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এসব কিছুই বিচারপতি সিনহার নিজের লেখা ঘটনা।

২০১৭ সালের ২রা অক্টোবর। বিচারপতি সিনহা তাঁর “এ ব্রোকেন ড্রিম” বই-এ লিখেছেন যে, সেদিন আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে ডিজিএফআই-র ডিজি সুপ্রীম কোর্ট ভবনে বিচারপতি সিনহার সাথে দেখা করতে আসেন এবং বিচারপতি সিনহাকে ২০১৮ সালের ৩১শে জানুয়ারী পর্যন্ত ছুটিতে যেতে বলেন। তিনি বিচারপতি সিনহাকে সেই সময় আরও জানান যে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের প্রমাণ ডিজিএফআই-র কাছে আছে। আমাদের বীর বিচারপতি সিনহা লিখেছেন ডিজিএফআই-র ডিজির এহেন স্পর্ধা দেখে বিচারপতি সিনহা হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন। ফলশ্রুতিতে ডিজিএফআই-র ডিজি বিচারপতি সিনহার কোর্ট চেম্বার থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন।

ঘটনাটি সত্য না মিথ্যা তা আরেকটু পড়লেই আমরা বুঝতে পারবো। বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ে লিখেছেন যখন ডিজিএফআই-র ডিজি ২০১৭ সালের ২রা অক্টোবর তারিখে বিচারপতি সিনহার সাথে তাঁর কোর্ট চেম্বারে অবস্থান করছিলেন তখন নাকি পুরো সুপ্রীম কোর্ট ভবনটি সাদা পোশাকে ডিজিএফআই অফিসাররা দখল করে নেয়। ওরে বাবা, এটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়! এত বড় একটি ভবন! এতজন ডিজিএফআই অফিসার! দিনটি ছিল সোমবার অর্থাৎ কর্মদিবস! সময়টি ছিল মধ্যাহ্ন বিরতির পূর্বে! অতএব, সুপ্রীম কোর্ট চত্বরে বিচারপতিগণ, অগণিত আইনজীবী, অসংখ্য বিচারপ্রার্থী, বহু সাংবাদিক ও সুপ্রীম কোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী সেদিন সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুরো সুপ্রীম কোর্ট দালান দখল হয়ে গেল, আর কিনা কেউ সেটা টেরও পেল না! কোনো গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হলো না? কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ একটা টু শব্দটি পর্যন্ত করল না? কেমন করে এই খবর বিশ্বাস করি? কি করে বিশ্বাস করা সম্ভব?

বিচারপতি সিনহার মতে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে পরেরদিন ২০১৭ সালের ৩রা অক্টোবর। সেদিন ডিজিএফআই অফিসাররা সুপ্রীম কোর্টের আইটি সেকশন দখল করে আগের দিনের সিসিটিভি ফুটেজ সরিয়ে নিয়ে যায়, যেন ডিজিএফআই চীফের আগের দিনের সুপ্রীম কোর্টে আগমনের কোনো প্রমাণ না থাকে। আশ্চর্য, এই ঘটনাটিও কিন্তু গণ অথবা সামাজিক মাধ্যমের কোথাও প্রকাশিত বা প্রচারিত হলো না! এছাড়া আরো একটি অসঙ্গতিপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজ সরানোর জন্য ডিজিএফআই অফিসাররা কেন ২৪ ঘন্টা সময় নিলেন, এটা ঠিক বুঝলাম না! কেননা, আগের দিনের সিসিটিভি ফুটেজ এই ২৪ ঘন্টা সময়ে যে কারো পক্ষে সহজেই কপি করে রাখা সম্ভব ছিল।

বিচারপতি সিনহা তাঁর “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের অধ্যায় ২৯-এ লিখেছেন – “I realized that all the judges were against me and if the administration was totally hostile to me, how could I survive? Finding no other alternative, I decided to go on leave for one month only instead of three months for the interest of the judiciary. ... After taking the President’s permission to leave for Australia I decided to leave the country on October 13, 2017.” অর্থাৎ বিচারপতি সিনহা অনুধাবন করলেন যে বিচার বিভাগের সকল বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে চলে গেছেন এবং এখন বিচার-প্রশাসনব্যবস্থাও যদি তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে তিনি কী করে টিকে থাকবেন? তাই আর কোনো উপায় না দেখে তিনি বিচার বিভাগের স্বার্থে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মহামান্য প্রেসিডেন্ট এরপর বিচারপতি সিনহার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ছুটি মঞ্জুর করলে ২০১৭ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো কি? বিচারপতি সিনহার বাংলাদেশ ত্যাগের ব্যাপারটি তাঁর নিজ সিদ্ধান্তে নেয়া। কারণ দুটি – (১) বিচার বিভাগের সকল বিচারকের তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া; এবং (২) বিচার-প্রশাসনব্যবস্থাও তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে এই ভয়। এখানে ডিজিএফআই বিচারপতি সিনহাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে - এ কথাটি একেবারেই ভুল। তারপরও বিচারপতি সিনহা তাঁর ডিজিএফআই-ফোবিয়া থেকে বের হতে পারেন না। তাঁর ইচ্ছাকৃত দেশত্যাগের জন্য তিনি ডিজিএফআই-কেই শেষ পর্যন্ত দায়ী করেন। তিনি লিখেছেন - “... I was pressurized from the very beginning by the DGFI to say that I was sick. When they failed to get me admitted to a hospital, they tried to send me abroad for treatment.”

এ তো গেল বিচারপতি সিনহার দেশত্যাগের আগের কথা। কিন্তু হায়! বিচারপতি সিনহা দেশ ত্যাগ করলেও তাঁর ডিজিএফআই-ফোবিয়া তো তাঁকে ত্যাগ করে না!

২০১৭ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখে তিনি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। কিন্তু তিনি তাঁর “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের অধ্যায় ২৯-এ লিখেছেন – “After one day of arriving in Canada, the Indian dailies, the Hindu and the Indian Express, in their issues dated October 14, 2017 published reports criticizing the government’s role over the verdict of the Sixteenth Amendment.” অর্থাৎ বিচারপতি সিনহা কানাডা পৌঁছানোর এক দিন পর ২০১৭ সালের অক্টোবরের ১৪ তারিখে ভারতের ‘দি হিন্দু’ এবং ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকা তাঁর ওপর রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০১৭ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখে তিনি ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়া রওনা দিলেন আবার ওই একই তারিখে তিনি ঢাকা থেকে কানাডা পৌঁছলেন। পুরোই মাথা নষ্ট! অবশ্য “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিচারপতি সিনহা নিজে এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে তিনি বহুদিন ধরে Alzheimer (স্মৃতিভ্রম) রোগে ভুগছেন। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর memory loss হয়, ফলে তাঁদের জন্য ভুলে যাওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। সাক্ষাতকারটি দেখতে কেউ আগ্রহী হলে নিচের লিঙ্কে যেতে পারেন –
https://www.youtube.com/watch?v=gD0RTg9DPOE&fbclid=IwAR1w7ARnPBbinYBusLItWRd_ZqTLjq2003poVS4pInpkSyO9Eth-2Nnhp9A

যা-ই হোক, বিচারপতি সিনহা তাঁর “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের অধ্যায় ২৯-এ লিখেছেন যে, তিনি ‘দি হিন্দু’ এবং ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকার রিপোর্ট দেখেই সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। আর তাঁর সেই সিদ্ধান্তের কথা তিনি তৎক্ষণাৎ টেলিফোন করে এটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানান। তিনি “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের অধ্যায় ২৯-এ লিখেছেন – “Accordingly, I communicated with the Attorney General over phone expressing my intention that I had decided to step down and to intimate decision to the Prime Minister.”

ভালো কথা! এই যে ২০১৭ সালের অক্টোবরের ১৪ তারিখে বিচারপতি সিনহা প্রধান বিচারপতি পদ হতে ইস্তফা দিতে চাইলেন, এটা কিন্তু তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত। কেউ তাঁকে বা তাঁর পরিবারকে জোর করেনি। কেউ তাঁকে বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখায়নি। তাহলে “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের সূচনা অধ্যায়ে তিনি কেন দাবি করলেন যে, তাঁর পরিবারকে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়ার কারণে তিনি বিদেশে অবস্থাকালেই প্রধান বিচারপতি পদ হতে ইস্তফা প্রদান করেন? আমার জানামতে বাংলাদেশের ডিজিএফআই-র ‘দি হিন্দু’ বা ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকাতে কোনো মালিকানা নেই। এখন বিচারপতি সিনহা কানাডাতে বসে ‘দি হিন্দু’ এবং ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকা পড়ে যদি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন তবে তার জন্য ডিজিএফআইকে কেন তিনি দায়ী করছেন? এরকম “উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে” ফেলার কোনো মানে আছে?

তবে হ্যাঁ, ২০১৭ সালের নভেম্বরের ১০ তারিখে বিচারপতি সিনহা যখন সত্যি সত্যি সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর পদত্যাগপত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করলেন সেই ঘটনার অন্তরালে যে ডিজিএফআই-ফোবিয়া ভরপুর কাহিনী বিচারপতি সিনহা তাঁর “এ ব্রোকেন ড্রিম” বইয়ের অধ্যায় ২৯ এ বর্ণনা করেছেন তা কিন্তু লোমহর্ষক! কিন্তু বিশ্বাস করা কঠিন! তার কারণ ব্যাখ্যা করছি।

বিচারপতি সিনহার ভাষ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের নভেম্বরের ৫ তারিখে বিচারপতি সিনহা পূর্বনির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনুযায়ী মেডিকেল চেক-আপের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন শহর হতে সিঙ্গাপুরে আসেন। কেউ তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সিঙ্গাপুরে আসতে বলেনি। সিঙ্গাপুর হতে তাঁর অস্ট্রেলিয়া ফেরার টিকিট করা ছিল নভেম্বরের ৮ তারিখ সকালের ফ্লাইটে। খেয়াল করুন, বিচারপতি সিনহা কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থেকে সাথে করে তাঁর পদত্যাগপত্র টাইপ করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে আসেন। আর সেই পদত্যাগপত্রটি হুবহু তিনি তাঁর বই-এ ছেপে দিয়েছেন। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো কী? বিচারপতি সিনহা স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগপত্র হাতে করেই সিঙ্গাপুরে আসেন। যেহেতু তাঁর অস্ট্রেলিয়া ফেরার টিকিট করাই ছিল সেহেতু বাংলাদেশে এসে পদত্যাগপত্র দাখিল করার কোনো প্ল্যান তাঁর ছিল না। আর এর কোনো কিছুর বিষয়ে কেউ তাঁকে বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের কোনো রকম ভয়ভীতি দেখায়নি।

এখন বিচারপতি সিনহা কেন পদত্যাগ করলেন তার আবার একটি বিকল্প ব্যাখ্যা তিনি নিজেই তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন। বিকল্প ব্যাখ্যাটি শুধু ভিত্তিহীনই নয়, বরং চরম অবিশ্বাসযোগ্য! বিকল্প ব্যাখ্যাটি হলো অনেকটা এরকম -

- সিঙ্গাপুরে আসার পরই ডিজিএফআই কর্মকর্তা বিচারপতি সিনহার ফেরার টিকিট নভেম্বরের ৮ তারিখের পরিবর্তে নভেম্বরের ১০ তারিখ করতে বলেন এবং বিচারপতি সিনহা তা করেন;

- ডিজিএফআই কর্মকর্তার মাধ্যমে বিচারপতি সিনহা জানতে পারেন যে ব্যাবসায়ী অনিরুদ্ধ রায় ডিজিএফআই-র হেফাজতে বন্দী আছে আর ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়ের মুক্তি চাইলে বিচারপতি সিনহাকে পদত্যাগ করতে হবে;

- বিচারপতি সিনহা এতটাই মানবিক, এতটাই জনদরদী যে ডিজিএফআই-র হাত থেকে ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়ের জীবন বাঁচাতে, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়ের পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং ডিজিএফআই যেন ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়ের একমাত্র পুত্রকে পিতৃহারা করতে না পারে, সেই কারণে তিনি প্রধান বিচারপতি পদ হতে ইস্তফা প্রদান করেন।

আচ্ছা, এই ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায় ব্যক্তিটি কে? তার সাথে বিচারপতি সিনহার সম্পর্কটা আসলে কী? বিচারপতি সিনহার বিকল্প ব্যাখ্যা অনুযায়ী তাঁর পদত্যাগের অন্যতম কারণ এই ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়। কিন্তু বিচারপতি সিনহার ভাষ্য অনুযায়ী, “Aniruddha Roy ... I had no acquaintance with him previously. ... He introduced himself to me in the Officers’ Club two years back when I visited the place to attend Saraswathi Puja.” অর্থাৎ বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ে লিখেছেন যে তিনি অনিরুদ্ধ রায়কে চিনতেন না। তাঁর পদত্যাগের মাত্র দুই বছর আগে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে সরস্বতী পূজার সময় তিনি অনিরুদ্ধ রায়ের সাথে পরিচিত হন। তাঁর মানে বিচারপতি সিনহার দাবি অনুযায়ী অনিরুদ্ধ রায়ের সাথে তাঁর তেমন কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই। তাহলে এই অনিরুদ্ধ রায়ের মুক্তির জন্য বিচারপতি সিনহা এত বড় একটা সাংবিধানিক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কেন? যতক্ষণ না পর্যন্ত বিচারপতি সিনহা নিশ্চিত হয়েছেন যে অনিরুদ্ধ রায় ডিজিএফআই-র কব্জা থেকে নিরাপদে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেছেন, বিচারপতি সিনহা ততক্ষণ পর্যন্ত কেন পদত্যাগপত্রে সই করলেন না? আরো বড় প্রশ্ন হল, ডিজিএফআই কী করে জানলো যে বিচারপতি সিনহার প্রাণ-ভ্রমরা ‘অনিরুদ্ধ রায়ের মুক্তির মধ্যে বাস করে? এ তো আরব্য রজনীর গল্পকেও হার মানায়!

বিচারপতি সিনহা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে একেবারে রূপকথার গল্পের সেই ভয়ংকর রাক্ষস বানিয়ে ছেড়েছেন। তিনি লিখেছেন – “I realized that it was nothing, but systematic and organized state terrorism perpetrated by an elite force keeping hostage a perfect gentleman and their treatment was so cruel that it could be compared with none other than the Gestapo Force of Hitler. They may even kill Aniruddha Roy and members of my family.” অর্থাৎ বিচারপতি সিনহার মতে ডিজিএফআই হলো হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো নৃশংস একটি বাহিনী, যারা কিনা অনিরুদ্ধ রায় এবং তাঁর (বিচারপতি সিনহার) পরিবারের সদস্যদের হত্যা পর্যন্ত করতে পারে! কী কাণ্ড! প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দানের সিদ্ধান্ত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সিনহা নিজেই নিলেন। প্রথমবার, আপিল বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় প্রদানের আগের রাতে মহামান্য প্রেসিডেন্টের বাসায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। দ্বিতীয় বার, ২০১৭ সালের ১৪ই অক্টোবর তারিখে কানাডায় বসে ‘দি হিন্দু’ এবং ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকা পড়ে। আর, তৃতীয়বার, ২০১৭ সালের ৫ই নভেম্বর তারিখে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন থেকে সিঙ্গাপুর রওনা হওয়ার আগে পদত্যাগপত্র সাথে করে নিয়ে এসে। তাহলে সব কিছুর জন্য ডিজিএফআইকে কেন তিনি টানাটানি করছেন? ডিজিএফআই কবে কখন কোথায় অনিরুদ্ধ রায় বা বিচারপতি সিনহার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে গেছিল বা হত্যা করার চেষ্টা করেছিল?

বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ের কোনো জায়গাতেই এ ধরনের কোনো ঘটনার সামান্যতম অবতারণা করেননি, বরং বইটিতে তিনি নিজেই তাঁর ডিজিএফআই-ফোবিয়ার অসংখ্য প্রমাণ রেখে গেছেন। তিনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা কার কাছে – প্রধানমন্ত্রী নাকি ডিজিএফআই-এর কাছে? [I was … wondering who had control of state power: The Prime Minister or the DGFI?] একবার বিচারপতি সিনহা মনে করেন যে প্রধানমন্ত্রী হলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আর তাই তিনি লিখেন – “... there was none in the country to challenge her authority and she does not tolerate anyone who has any courage to speak against her desire...”। আবার কখনো বিচারপতি সিনহা তাঁর ডিজিএফআই-ফোবিয়ার কারণে মনে করেন যে, না, আসলে ডিজিএফআই-ই হলো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আর তাই তখন বিচারপতি সিনহা লিখেন – “... the DGFI had the final say over the Prime Minister.”

বিচারপতি সিনহা ডিজিএফআই-ফোবিয়াতে এতটাই আক্রান্ত যে তিনি যুক্তিসঙ্গতভাবে সঠিক কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন না। তিনি চিন্তার গোলকধাঁধায় ঘুরতেই থাকেন। তিনি লিখেছেন – “I was … convinced that even the Prime Minister’s opinion had been negated by the DGFI. Either that or the Prime Minister had indicated to them to humiliate me.”

ডিজিএফআই-ফোবিয়ার কারণে বিচারপতি সিনহার মনে এই চিন্তাও আসে যে, রাষ্ট্রপতি কার কথায় চলেন – প্রধানমন্ত্রী নাকি ডিজিএফআই-র? [...the President, proved himself as a stooge in the hands of the Prime Minister or DGFI?] আবার ডিজিএফআই-ফোবিয়ার কারণে বিচারপতি সিনহা ভাবনার সাগরে ডুব দেন এই প্রশ্ন নিয়ে – ডিজিএফআই কি আইনমন্ত্রীর কলকাঠি হিসেবে কাজ করে? [...It was a device of the Law Minister...] প্রধানমন্ত্রী কি তাহলে ডিজিএফআই-র উপদেশ শুনেই একজন প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করলেন? [The Prime Minister...debased a Chief Justice... as per advice of the...DGFI] নাকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ডিজিএফআই একজন প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করল?

এমন হাজারো আজগুবি প্রশ্নের চোরাবালিতে বিচারপতি সিনহা দেশে ফেরার পথ হারিয়ে ফেলেছেন। প্রকৃত সত্য হলো, ডিজিএফআই বিচারপতি সিনহাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়নি, তাঁকে পদত্যাগ করতে বলেনি, তাঁর বাংলাদেশে আসার পথও রুদ্ধ করেনি। ডিজিএফআই তাঁকে বই লিখতে মানা করেনি। তাঁকে বিশ্বজুড়ে অনলাইন ইন্টারভিউ দিতে মানা করেনি। আসলে মনের বাঘে খেয়ে ফেললে বনের বাঘকে কি দোষী করা ঠিক? সুতরাং বিচারপতি সিনহার অন্যান্য চিকিৎসার সাথে সাথে তাঁর ডিজিএফআই-ফোবিয়ারও চিকিৎসা করানো জরুরী হয়ে পড়েছে।

লেখক : আইনজীবী ও আইনের শিক্ষক

বিবার্তা/জহির/হুমায়ুন