শিরোনাম
পাকিস্তানে আজ নির্বাচন : তারপর?
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০১৮, ২০:৫৩
পাকিস্তানে আজ নির্বাচন : তারপর?
হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী
প্রিন্ট অ-অ+

অনেক নাটকের পর পাকিস্তানে আজ একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে লড়ছে আহত ও বন্দী 'বাঘ' নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ, ক্রিকেটতারকা থেকে রাজনীতির মাঠের খেলোয়াড় ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), ভুট্টো ডাইন্যাস্টির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), অন্য আরো মাঝারি ও ছোট দল এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক দল।


কারা জিতবে আজকের নির্বাচনে?


এ প্রশ্নের জবাব দেয়া সহজ নয়। পৃথিবীর যে কোনো দেশেই এ প্রশ্নের জবাব দেয়া খানিকটা কঠিন হলেও পাকিস্তানের বেলায় কঠিনতর। কারণ, দেশটার নাম পাকিস্তান। এই সেই দেশ, যে দেশ তার ৭০ বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কাটিয়েছে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে। সামরিক শাসনের বাহ্যত অবসানের পরেও ক্ষমতার মসনদের ওপর থেকে সামরিক চক্রের শ্যেনদৃষ্টি এতটুকু সরেনি। পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতির কারণে তারা কেবল লালাই ঝরিয়ে চলেছে, ক্ষমতা নামের হালুয়া-রুটির ওপর থাবা বসাতে পারছে না - এই যা।


পাকিস্তানের সর্বশেষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, যিনি এখন দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সকন্যা কারাবন্দী, তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েও একবারও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। প্রতিবারই তাঁকে, কখনো অস্ত্রের মুখে, কখনো 'আইনের' অস্ত্রে, ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এর প্রতিটি ঘটনার সামনে-পেছনে সেদেশের অভ্যূত্থানপ্রবণ সামরিক বাহিনীর হাত সক্রিয় ছিল।


আজকের নির্বাচনেও নেপথ্যের এ খেলোয়াড়দের 'সক্রিয়তা' তাবৎ বিশ্ববাসীর জানা। শঙ্কাটা এখানেই। শঙ্কাটা এ নিয়ে নয় যে কারা হারলেন, কারা জিতলেন। বরং ভয়টা এখানেই যে কাদের হারার কথা ছিল আর কারা হেরে গেল। তার চাইতেও বড় ভয় হচ্ছে, নির্বাচনের পরে কী?


নির্বাচনের পরে কী - সে প্রশ্নে যাওয়ার আগে নির্বাচনে কী সেটা একটু দেখা যাক।


এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনী 'দেশ পরিচালনায় অনভিজ্ঞ' ইমরান খান ও তাঁর দল পিটিআইকে বিজয়ী দেখতে চায় - এমন ধারণা এতোটাই ব্যাপকতা পেয়েছে যে এক পর্যায়ে খোদ সেনাবাহিনীকে সংবাদ সম্মেলন করে বলতে হয়েছে যে নির্বাচনে তারা কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না।


কিন্তু নির্বাচনের তিন দিন আগে সেনবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ায় জনমনে সেই পুরনো সন্দেহই ফিরে এসেছে যে পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে আসলেই তলে তলে আটঘাট বেঁধে নেমেছে সেনাবাহিনী।


ইতিমধ্যে জনমত জরিপেও ইমরানের দলের জনপ্রিয়তার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। তা দেখে সদ্যসাবেক ক্ষমতাসীন দল পিএমএল (এন)-এর অনেক সাবেক এমপি 'ভবিষ্যতের সরকারি দল' পিটিআই-তে গিয়ে ভিড়েছেন। কেউবা আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। সব মিলিয়ে আপাতদৃষ্টিতে ইমরান খানের পিটিআই বেশ ফর্মেই আছে বলা যায়।


তাহলে কি কিছু সামরিক মদদ আর কিছু জনসমর্থন - এ দু'য়ের ওরস্যালাইন হবেন ইমরান খান? হতেও পারেন। রাজনীতিতে এবং আরো বেশি করে পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসম্ভব বলে খুব বেশি কিছু নেই। যেটুকু 'অসম্ভব' আছে তার নাম দেশ শাসন। জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা।


এ অসম্ভব যাতে কোনোভাবেই 'সম্ভব' না হয় সেজন্যই ইমরান খানকে সামনে রেখে 'দেশ শাসনের' পাঁয়তারা করছে নেপথ্যের কারিগররা - এমনই অভিমত বিশ্লেষকদের।


ধরা যাক, ইমরান খান পাকিস্তানের ক্ষমতায় এলেন। তারপর কি দেশটির ক্ষমতাপ্রবণ সেনাবাহিনী চুপচাপ আপন দায়িত্ব পালনে ফিরে যাবে? মোটেই না। তারা যথাস্বভাব সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে। ইমরান খান কি তা মেনে নেবেন?


জঙ্গি দমনের নামে মার্কিন বাহিনী বহুদিন থেকে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। এর পেছনে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীরও সায় আছে। তবে সায় নেই স্বয়ং ইমরান খানের। তিনি বহুদিন ধরেই এর প্রকাশ্য বিরোধিতা করে আসছেন। ক্ষমতা পেলে তিনি কি এ অবস্থান থেকে ইউ টার্ন করবেন?


করতেও পারেন। ক্ষমতায় গিয়ে মানুষ কত কিছুই না ভুলে যায়! তবে এখন পর্যন্ত মনে হয় না যে ইমরান খান এটা ভুলে যাবেন। আর যদি না-ই যান, তবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সংঘাত অনিবার্য। সেক্ষেত্রে তারও নওয়াজ শরীফের পরিণতি পেতে সময় লাগবে না।


এসব হলো, 'যদি' ইমরান খান পাকিস্তানের ক্ষমতায় যান, তার পরের কথা। কিন্তু সেনাবাহিনীর সমর্থন পেলেও তিনি যে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন, তা কি নিশ্চিত?


ইমরান খান এবং তার মদদদাতারা নিশ্চিন্ত হলেও হলেও হতে পারেন, কিন্তু ভোটের হিসাব খুব-একটা ভরসা দেয় না। পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাব হচ্ছে শরীফ পরিবার তথা মুসলিম লীগের ঘাঁটি। এ প্রদেশের সিংহভাগ আসন এবং দেশের অন্যান্য স্থানে আরো কিছু আসন পেলেই রাষ্ট্রক্ষমতা নিশ্চিত। সুতরাং পিএমএল-কে একেবারে উড়িয়ে দেয়ার কিছু নেই। প্রশ্ন হলো, যদি সত্যি-সত্যিই শরীফের দল আবার ক্ষমতায় চলে আসে? তখন আবার কি সেই পুরনো খেলার বৃত্তে ফিরে যাবে পাকিস্তান?


সিন্ধু প্রদেশের কথাই ধরা যাক। ভুট্টো পরিবার তথা পিপিপি'র দুর্গবিশেষ এ প্রদেশটি। পাকিস্তানের অন্য তিন প্রদেশে যা-ই ঘটুক, সিন্ধুতে পিপিপি-ই এগিয়ে থাকবে, যদি অলৌকিক কিছু না ঘটে।


ধরা যাক, সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো দলই পেল না, তখন? তখন স্বাভাবিক নিয়মেই প্রশ্ন আসবে জোট গড়ার। জোট হবে কার সাথে কার? ইমরান খান বহু আগেই বলে দিয়েছেন তিনি পিপিপি'র সাথে জোট করবেন না; পিএমএল-এর সাথে তো নয়ই।


সেক্ষেত্রে পিপিপি-পিএমএল জোট সরকারের সম্ভাব্যতা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ দু'টো দলই রাষ্ট্রীয় কাজে সেনা হস্তক্ষেপের ঘোর বিরোধী এবং সে বিরোধিতার চরম মূল্যও তাদের দিতে হয়েছে ও হচ্ছে। সেনাবাহিনী কি ওই সরকারকে মেনে নেবে? তখন আবার কি সেই পুরনো খেলার বৃত্তে ফিরে যাবে পাকিস্তান?


তা-ই যাবে। দেশটির সামনে বিস্তীর্ণ অন্ধকার। সুড়ঙ্গের ওপাশে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। আজকের নির্বাচনও কোনো আলোর দিশা দেখাতে পারবে - অতি আশাবাদী না-হলে তেমনটি ভাবারও কোনো কারণ নেই।


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com