একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও আলবদরচক্র মনমগজে পাকিস্তানি আনুগত্য নিয়ে, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও এদেশে তাদের বংশবিস্তার অব্যাহত রাখতে পেরেছে।
আমাদের দ্বিধাগ্রস্ত সুবিধাবাদী বাঙালি সত্তার সুবিধা নিয়ে ধর্মীয় মগজধোলাই আর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠাদানের যূথবদ্ধ শয়তানি মোহে ফেলে আজও স্বাধীনতাবিরোধীরা এদেশে ওদের রাজনৈতিক উত্তরসূরি তৈরি করে চলেছে। আর সাধারণ নাগরিকের ছদ্মবেশ নিয়ে আশঙ্কাজনকভাবে ওরা ছড়িয়ে পরছে দেশের সর্বক্ষেত্রে।
আমাদের চিরায়ত শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস; আমাদের রুচি, প্রথা, সভ্যতা-সব ওরা গ্রাস করে নিচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্র যেমন ওদের জ্যামিতিক হারের পয়দা আটকাতে পারেনি, তেমনি আমাদের লোভজর্জর জেলিফিশ মগজে ওদের অপদর্শনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনও ঠেকাতে পারেনি।
আমাদের দেশে SSC ও HSC সমমানে মাদ্রাসাসনদ প্রচলিত আছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজের চাইতে অধিক হারে নম্বর প্রদানের প্রবণতা লক্ষণীয়। কাজেই সমান সমান পরিশ্রম করেও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের চাইতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ ভর্তির ক্ষেত্রে SSC/HSC/সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে একটা নম্বর যুক্ত করে তার সাথে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর মিলিয়ে মেধাতালিকা প্রকাশ করে। ফলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার সিস্টেমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার এই সিস্টেমের সুবিধা নিয়ে সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাথে বিপুল পরিমাণ রাজাকার শাবক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঢুকে পরে।
বর্তমান সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন যখন রাজনীতির গ্রুপিং আর পাল্টাগ্রুপিংসহ অনাবশ্যক সপ্তকাণ্ডে ব্যস্ত, তখন ওরা ঠাণ্ডামাথায় পড়াশোনাসহ নানান উপায় অবলম্বন করে, পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ঢুকে পরছে।
ভবিষ্যতে বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী পদে ওরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবে। তখন সরকারে যে দলই থাকুক, সরকারি নীতির বাস্তবায়ন পর্যায়ে পাকিস্তানপন্থী রাজাকারচক্রের একটা বিরাট প্রভাব থাকবে।
এমন বাস্তবতায়, আমি সীমিত পরিসরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের জোর সমর্থক। রাষ্ট্র দুইটি কারণে এই কোটা বাস্তবায়ন করবে।
প্রথমত, এটা ভবিষ্যতের বাংলাদেশ প্রশাসনে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থী রাজাকারচক্রের বিপরীতে স্বাধীনতার চেতনাবাহী ধারার বিদ্যমানতা জোরদার করবে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মহান অবদানকে শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ এবং তাঁদের শোণিতধারার সযত্ন লালন নিশ্চিত হবে। সুতরাং, দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই বংশপরম্পরায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবহমান রাখা উচিত।
আমাদের সমস্ত সাধারণ, সমস্ত সুশীল, সমস্ত সমাজ, সমস্ত রাষ্ট্র মিলে যেহেতু রাজাকারতন্ত্রের এই সর্বনাশা সংখ্যাবৃদ্ধি ঠেকাতে পারেনি, সেহেতু সমতা বা বৈষম্যনিরোধের নামে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাস্তব প্রয়োজনকে অস্বীকার করার কোনও অধিকার আমাদের নেই। এটা আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দাবিয়ে রাখতে চাওয়ার একটা ষড়যন্ত্র মাত্র।
স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধির কালোজাদুতে ক্রমশ দেশের ঈষাণ কোণে যে কালোমেঘের উত্থান ঘটিয়েছে, ভবিষ্যতে তার প্রভাবে দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, নারীর প্রতি বিদ্বেষ, তালেবানি কায়দায় ভিন্নমত দমনচেষ্টার মতো আরও অনেক সমস্যার উদ্ভব ঘটবে। সুতরাং, দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালনের জন্য রাষ্ট্রকে সীমিত পরিসরে হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল ও বংশপরম্পরায় লালন করতে হবে।
বিবার্তা/রোমেল/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]