স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হয় ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে। আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এসময়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে। পুরো একাত্তর জুড়ে সেখানেই বন্দী থাকেন তিনি। তাঁর ৭ই মার্চের দেয়া ভাষণ ও নির্দেশনানুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তাঁর বিশ্বস্ত সহচর ও সহ-নেতারা। বঙ্গবন্ধু ফিরে আসবেন! আবার দেশ শাসন করবেন! এটি ছিল কল্পনাতীত। যাকে অনেকে অলৌকিক বলেও আখ্যায়িত করেন। নতুন প্রজন্মসহ পুরো জাতির সামনে আজও এটি একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। কিভাবে তিনি মুক্তি পেলেন? কিভাবে জীবিত অবস্থায় এলেন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায়? উত্তর পেতে দরকার ঘটনার পূর্বাপর তথ্য বিশ্লেষণ। লেখাটিতে সে প্রচেষ্টাই করা হয়েছে।
এখনও অনেকের বদ্ধমূল ধারণা পাকিস্তানিরা শুধু বহিঃবিশ্বের চাপের কারণে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। সেকেন্ডারি উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত করে সামরিক আদালতে গোপনে তাঁর বিচার কার্য শুরু করেন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলাতে পরিকল্পনামাফিক আনা হয় সাক্ষী, রাজসাক্ষীকে। মৃত্যুদণ্ড দেয়ার রায়ও দেয়া হয় সেই আদালতে। কিন্তু ঐ যে শিরোনামেই বলেছি, অলৌকিকভাবে রক্ষা পান তিনি। সেই রায় কার্যকর করার আগেই ইয়াহিয়া খান গদিচ্যুত হন।
ক্ষমতায় আসেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ভুট্টো জানতেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাঙালির ভালোবাসার কথা। জানতেন তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কথা। তিনি নিজেও তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিবিদ। তাই ধারণা করা হয় একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি অন্য একজন অবিসংবাদিত রাজনীতিকের প্রতি শ্রদ্ধার কারণে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে থাকতে পারেন। ভিতরে ভিতরে অন্য হিসেব হয়ত ছিল। যেমন ভুট্টোর রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থায় তিনি বঙ্গবন্ধুর পরোক্ষ সাহায্য পেলেও পেতে পারেন সেরূপ হিসাব-নিকাশও ভুট্টোর মনে থেকে থাকতে পারে। এটিও আপেক্ষিক। তবে আরও একটি বিষয় এখানে মুখ্য হয়ে দেখা দিয়েছিল তা হলো আটকে পড়া পাকিস্তানিদের কথা ভেবে তৎকালীন ৪২ জন পাকিস্তানি বিশিষ্ট নাগরিক ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শেখ মুজিবের মুক্তির জোর দাবি জানিয়েছিলেন।
তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, কারাগার থেকে মুক্তির কয়েকদিন আগে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে পাকিস্তানের একটি ফেডারেল বা তদানুরূপ সম্পর্ক রক্ষার অনুরোধ করেছিলেন পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো। বঙ্গবন্ধু শুনে কোনো মন্তব্য করেননি। শুধু বলেছিলেন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর যে জুলুম-নির্যাতন করেছে তার ওপর নির্ভর করছে দুদেশের সম্পর্ক। আর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ। মুজিবনগরে ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ সনে শপথ নেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী (জাতীয় বেঈমান বলে সর্বমহলে পরিচিত) খন্দকার মোশতাক ঠিক এরূপ একটি কুপ্রস্তাব নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রওয়ানা হচ্ছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের দক্ষ প্রশাসনের গোয়েন্দা জালে তার এ যাত্রা ভন্ডুল হয় এবং তিনি পদচ্যুত হন।
স্যার ডেভিড ফ্রস্ট (১৯৩৯-২০১৩) যিনি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ করেন, যা ভুট্টো নিজেই বঙ্গবন্ধুকে জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন বন্দী তখন ইয়াহিয়া খান ভুট্টোর নিকট আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “আমি মুজিবকে হত্যা না করে জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছি”। ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে আরও জানান, ইয়াহিয়া তাঁকে এমন অনুরোধও করেছিলেন, যাতে “ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে ব্যাকডেটে একটি আদেশ দেখিয়ে মুজিবকে ফাঁসি দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়”। ভুট্টো তার জবাবে বঙ্গবন্ধুকে জানিয়েছিলেন, “আমি এটা করতে দিতে পারি না। কেননা তখন এর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হবে। আর কোনোদিন বেঙ্গল থেকে একজনও পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে আসতে পারবে না”। উল্লেখ্য, ঐ সময় লক্ষাধিক সামরিক বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর হাতে আটক ছিল। তাছাড়া কয়েক লক্ষ অবাঙালি বাংলাদেশে বসবাস করত। ডেভিড ফ্রষ্টের সেই সাক্ষাৎকার বলে দেয় বঙ্গবন্ধুর বেঁচে ফেরাটা কতটা অলৌকিক!
বাঙালির মাহেন্দ্রক্ষণ তখনও আসেনি। ৮ই জানুয়ারি ১৯৭২। খুব সকালে খবর এলো বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে লন্ডন পৌঁছেছেন। ব্যাপক গোপনীয়তা বজায় রেখে বিশেষ উড়োজাহাজটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ভারত বাংলাদেশের কেউ বঙ্গবন্ধুর গন্তব্য সম্পর্কে অবগত নহে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি রাওয়ালপিন্ডি ছেড়ে আসার পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত এর গন্তব্যের কোনো খবর ছিল না। ধারণা করা হয় কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ষড়যন্ত্র করে কিছুক্ষণের জন্য এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে একটা নিদারুণ রহস্য তৈরি করা হয়।
রেডিও পাকিস্তানের খবরে বলা হয়, শেখ মুজিব পাকিস্তান সরকারের একটি চার্টার্ড বিমানে স্থানীয় সময় রাত তিনটায় রাওয়ালপিন্ডি ত্যাগ করেছেন। ঐ ঘোষণায় আরও বলা হয়, শেখ মুজিবের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর গন্তব্য গোপন রাখা হচ্ছে। শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দরে বিদায় সংবর্ধনা জানিয়েছেন। রেডিও পাকিস্তানের খবরে এ তথ্যও প্রচার করা হয়।
১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ-এর সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘণ্টা বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু ৯ জানুয়ারি। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টি হিথের সামনে উত্থাপন করেন তিনি। এসময় পাকিস্তান কারাগারে বন্দি অবস্থায় তাঁর জীবন রক্ষার প্রচেষ্টার জন্য এডওয়ার্ড হিথকে ধন্যবাদ জানান শেখ মুজিব।
পরদিন অর্থাৎ ৯ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী টেলিফোন করেন এবং অনুরোধ করেন, ঢাকার পথে যেন তিনি দিল্লিতে যাত্রা বিরতি করেন। বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীর এ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। আধা ঘণ্টার এ ফোনালাপে শেখ মুজিব কিভাবে ঢাকা পৌঁছাবেন সে বিষয়ে আলোচনা হয়। ইন্দিরা গান্ধী প্রথমে ভারতীয় ভিআইপি বিমানের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু হিথের পরামর্শে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ব্রিটিশ এয়ার ফোর্সের জেটে করে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। তাঁরা উভয়েই চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সুস্থ শরীরে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি গড়ে তুলুক। অতঃপর ব্রিটিশ বিমানটি সাইপ্রাস-ওমান হয়ে দিল্লিতে অবতরণ করে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলেও এই সহযোগিতার মধ্যেই কিন্তু স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার মনোভাব প্রকাশ পায়।
দেশ ব্যতিরেকে অন্য কিছু যে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় নেই এটি বুঝা যায় এই একটি ঘটনায়, তা হলো দিল্লি অবতরণের পূর্বেই বিমানে থাকা অবস্থায় তাঁর সফরসঙ্গী ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শশাঙ্ক এস. ব্যানার্জির মাধ্যমে ভারতকে জানিয়ে দেয়া হয়, ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা বঙ্গবন্ধুর কাছে সবচেয়ে জরুরি। পরদিন দিল্লিতে পরামর্শকদের সাথে আলোচনার শুরুতেই ইন্দিরা গান্ধী জানালেন মুজিবের প্রস্তাবে তিনি রাজি। ইন্দিরা-মুজিব বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি যৌথ ইশতেহারে স্থান পায়। প্রথমে কথা ছিল ভারতের সৈন্য প্রত্যাহারের তারিখ হবে জুন, ১৯৭২। বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায় তা হল মার্চ, ১৯৭২।
নয়াদিল্লির পানাম বিমানবন্দরে কালো ধূসর ওভারকোট পরিহিত বঙ্গবন্ধু বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলেন। এসময় ভারতের সর্বোচ্চ মর্যাদায় প্রেসিডেন্ট শ্রী ভরাহগিরি ভেঙ্কট গিরি বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে স্বাগত জানান। ২১ বার তোপধ্বনি বেজে উঠে। তিন বাহিনীর ১৫০ সদস্যের গার্ড অব অনার প্রদান করে। ভিআইপি প্যান্ডেলে তাঁর উপর গাঁদা ফুলের পাপড়ি বর্ষণ করা হয়। তিনি অভিবাদন মঞ্চে বসার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় গুর্খা বাদক দল বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা...” বাজাতে শুরু করে। প্রেসিডেন্ট ভি.ভি. গিরি তার ভাষণে এসময় বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দেশের প্রধান হিসেবে আপনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এই অঞ্চলে স্থায়ী ও অটুট শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা জোরদার এবং সুনিশ্চিত করবে।’ শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাগত জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, মুজিব তাঁর জনগণের নিকট স্বাধীনতার ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং তিনি তা এনে দিয়েছেন’।
১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন দিল্লি হয়ে প্রাণের শহর ঢাকা ফিরে আসেন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে। ঢাকায় অবতরণের পূর্বে কমেট বিমানটি বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাবশতঃ প্রায় ৪৫ মিনিট বিমানবন্দরের উপর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। ওপর থেকে তাঁর “সোনার বাংলা”কে অবলোকন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বিমানবন্দর থেকে লাখো জনতার ভিড় ঠেলে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে। সেদিন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, তাঁর দুই চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ছিল বারবার। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “কবি গুরু তুমি বলেছিলে, সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি; বিশ্বকবি তোমার সেই আক্ষেপ মিথ্যা প্রমাণিত করে সাত কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে।” আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকার মত করে নির্মিত ১০০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চ থেকে ৩৫ মিনিটের ভাষণে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বললেন, “আমি জানতাম না আবার আপনাদের মধ্যে ফিরে আসতে পারব। আমি ওদের বলেছিলাম, তোমরা আমাকে মারতে চাও মেরে ফেলো। শুধু আমার লাশটা বাংলাদেশে আমার বাঙালিদের কাছে ফিরিয়ে দিও...। আমার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল, জীবন দেবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মানুষ একবারই মরে... মরার আগে বলে যাব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ, জয় বাংলা...।” বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, “গত ৭ মার্চ আমি এই রেসকোর্সে বলেছিলাম ‘দুর্গ গড়ে তোলো’। আজ আবার বলছি আপনারা একতা বজায় রাখুন। আমি বলেছিলাম, ‘বাংলাদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো “ইনশাল্লাহ”। বাংলাদেশ আজ মুক্ত স্বাধীন। ...আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয় নেতা হিসেবে নয় আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি ...যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায় তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে- পূর্ণ হবে না। ...বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোনো ধর্মীয় ভিত্তি হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।”
শেষ করবো ডেভিড ফ্রষ্ট এর সাথে বঙ্গবন্ধুর একটি সাক্ষাৎকারের কয়েকটি উদ্ধৃতি দিয়ে। বঙ্গবন্ধু সেই সাক্ষাৎকারের বলেছিলেন, ‘আকস্মিকভাবে একদিনে কেউ নেতা হতে পারে না। তাকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসতে হবে। যথার্থ নেতৃত্ব আসে সংগ্রামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কেউ একজন তাঁকে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজকে উৎসর্গ করতে হয়। নেতার আদর্শ থাকতে হয়। এসব গুণ যার থাকে, সেই নেতা হতে পারে। আমি আব্রাহাম লিংকনকে স্মরণ করি। স্মরণ করি মাও সে-তুং, লেনিন, চার্চিলকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট জন. এফ. কেনেডিকেও আমি শ্রদ্ধা করি। ... মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত জওহারলাল নেহেরু, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, কামাল আতাতুর্ক এঁদের জন্য আমার মনে গভীর শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। আমি ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামী নেতা ড. সুকর্ণকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা করি। এরা সকলেইতো দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নেতা হয়েছিলেন’। (সাক্ষাৎকারটি ১৯৭২ সালের ১৮ই জানুয়ারি নিউইয়র্ক টেলিভিশনে প্রচারিত ‘ডেভিড ফ্রস্ট প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান থেকে আংশিক উদ্ধৃত)।
৫২ বছর আগে ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখের শুভ দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা হিসেবে বীরের বেশে বাংলার মাটিতে পা রাখলেন। অথচ তিনি যে ফিরবেনই তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তথ্য বিশ্লেষণে প্রতীয়মান নয় কি যে, পুরোটাই একটা অলৌকিক ঘটনা!
লেখক: প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল, ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
বিবার্তা/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]