এমন ঈদ আমাদের জীবদ্দশায় দেখিনি আমরা। এমন নিরানন্দ আলোকহীন উৎসব কখনো আসেনি যেন এ বসুন্ধরায়! যে দিনে মানুষে মানুষে মিলনে থাকতো মুখরিত আজ সব কিছু যেন স্তব্ধতায় ঘিরে ফেলেছে। "অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।" প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ-এর কবিতার কয়েকটি লাইন বারবার মনে পড়ছে। সত্যি অদ্ভুত আঁধার আজ মানব জাতিকে ঘিরে ধরেছে। একটি অচেনা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কাছে পরাজিত হতে চলেছে মানব জাতির সমস্ত আস্ফালন ও অর্জন।
আজ মানুষ মারছে মানুষকে কোনো অস্ত্র দিয়ে নয়, নয় কোনো বোমা বারুদ দিয়ে! যুদ্ধক্ষেত্রের কথাও বলছি না। একটি ভাইরাসকে বহন করে মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে মানুষ। কত অসহায় হলে শ্রেষ্ঠ জীব দাবি করা মানুষেরা শুধু সংখ্যায় পরিণত হয়! পিতা-মাতার মৃত্যুর কারণ হয় সন্তান।
নিজের অজান্তে মৃত্যুকে ফেরি করে চলেছে এক স্বজন থেকে আরেক স্বজন! কেউ কেউ আবার আক্রান্ত হতে পারে জেনেও অন্যান্য মানুষের ঘাতক হয়ে উঠছে। কোথাও দেখছি সভ্য সমাজের রক্ষাকারী দাবি করা রাষ্ট্রের অবহেলা ও উদাসীনতায় ছড়িয়ে পড়ছে এই মহামারী। উদাসীনতা ও অবহেলার মাত্রা অতিক্রম করে মানুষের জীবনকে তুচ্ছ ভেবে করণীয় ঠিক করছে এইসব রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকগণ! তার কারণও আমাদের অজানা নয়। সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ ও জীবনবোধকে ভুলে ক্ষমতার লোভে কিছু মানুষের করায়ত্বের কারণে আধুনিক পৃথিবী আজ চরম সংকটের মুখোমুখি। অথচ যে মহৎ মানুষগুলোর অন্তরে মানুষকে ভালোবাসা তথা দেশপ্রেমের এক সহজাত অনুভব, উজ্জ্বল আলোর মতো জেগে আছে তারা আজ অবহেলিত, উপেক্ষিত।
অবহেলা আর উদাসীনতায় যা ক্ষতি হবার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত এই রোগে দেশে আক্রান্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখন ভয় পেলে চলবে না। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। না হলে মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো সম্ভব নয়।
বর্তমান সংকটে দেশ তথা বিশ্বের অর্থনীতিতে কি পরিমাণ বিরুপ প্রভাব পড়বে তার ধারণা এখনই বিশ্লেষণ করা যাবে না। কত সংখ্যক মানুষ মারা যাবে তারও হিসাব মেলানো সম্ভব নয়। দিনমজুর শ্রমিক থেকে শুরু করে কত শিক্ষিত বেকার তৈরি হবে তা নিরূপণ করা কঠিন। তাই আগামীতে দেশের সকল মানুষের জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারিভাবে পরিকল্পিত সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি। মানুষ যদি একবার নিজেদের অনিরাপদ ভাবতে শুরু করে তাহলে সামাজিক যে বিশৃঙ্খলা শুরু হবে তা এই সঙ্কটকালীন সময়ে মোকাবেলা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মানুষকে বাঁচাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিকল্প নেই।
তাই দ্রুত খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাতীয় তহবিল এর পাশাপাশি সম্মিলিত দুর্যোগ তহবিল গঠন করা হোক। এই তহবিলে যারা লুটপাট ও দুর্নীতি করে যারা দেশের সম্পদ পাচার করেছে সেই অর্থ ফিরিয়ে এনে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে ব্যবহার করা হোক। ব্যক্তিক পর্যায়ে যারা শত থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক আছে তাদের প্রত্যেকের ১০ শতাংশ অর্থ কর্তন করে রাষ্ট্রীয় তহবিলে যুক্ত করে ওয়ার্ড, গ্রাম ও ইউনিয়ন ভিত্তিক সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নেয়া হোক। বিশ্বাস করতে চাই, সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত ও সম্মিলিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ, ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্ব।
আর এই করোনাকালে যারা দুর্নীতি ও লুটপাটে সক্রিয় তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে। সে যেই হোক আর কোন ছাড় দেয়া চলবে না। মাস্ক ও পিপিই কেলেঙ্কারির হোতাদের শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
এমন সময়েও যাঁরা বাইরে যাচ্ছেন আমাদের ভালো রাখতে, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে । সেই সকল ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, ওষুধের দোকানের কর্মী, খাবারের দোকানের কর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জরুরি সেবাদানকারী, পণ্য পরিবহনকারী, পোশাকশ্রমিক, এমনি আরও অনেকে। অন্তরের গভীর থেকে জানাই আপনাদের স্যালুট।
এবারের ঈদ হোক তাই নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার। আমাদের চারপাশের কেউ যেন কষ্টে না থাকে সেই প্রত্যাশায় সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে জানাই ঈদ মোবারক ও শুভকামনা।
লেখক, এফ এম শাহীন
সম্পাদক ডেইলি জাগরণ ডট কম
বিবার্তা/এনকে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]