শিরোনাম
ভাস্কর্য ভাঙ্গাই কি এই সময়ের বড় ইবাদত?
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২০, ১৩:২৯
ভাস্কর্য ভাঙ্গাই কি এই সময়ের বড় ইবাদত?
মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান
প্রিন্ট অ-অ+

অসংখ্য মূর্তি ও ভাস্কর্য রয়েছে দেশে। পথে পথে মোড়ে মোড়ে দেখতে পাওয়া যায় পশু ও মানুষের প্রতিমা। এমন মূর্তি-ভরা দেশে কোনো কল্যাণের আশা করা যায় না। মূর্তি-সংস্কৃতি অন্ধকারে আচ্ছন্ন করবে মানুষের মন। মূর্তি ও ভাস্কর্য মানব সমাজে কুসংস্কারের প্রসার ঘটায়। মূর্তি শয়তান ও শয়তানিয়াত বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার। শিরক ও কুফরের এমন বিস্তার কোনো ইমানদার এক মুহূর্তের জন্য মেনে নিতে পারে না। হযরত ইবরাহিম যেভাবে মূর্তি ভেঙ্গেছিলেন সেভাবেই একেকটি করে মূর্তি গুড়িয়ে দিতে হবে। মিল্লাতে ইবরাহিমের অনুসারীদের কর্তব্য মূর্তির সংস্কৃতিকে পুরোপুরি বিনাশ সাধন। তা না হলে যতই নামাজ রোজা করেন কোনোই লাভ নেই। কোনো আমল কাজে আসবে না। অন্য সব বিষয় রেখে এদিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত ইসলামী নেতৃবৃন্দের।


এ মানসিকতা নিয়েই কিছু ইসলামী নেতা বিভিন্ন বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন। তাদের কথায় আমরা সাধারণ মানুষও মুর্তি-ভরা দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যাই। ইসলাম শেষ হয়ে যাবার আশংকায় মুষড়ে উঠি। অন্য সব অসঙ্গতি থেকে কেবল একটি বিষয়ে আটকে যায় আমাদের চিন্তা। ইমান না থাকলে অন্য সব কিছু দিয়ে আর কি প্রয়োজন? কি হবে পড়ালেখা রাজনীতি সোশ্যাল এক্টিভিটিজ দিয়ে? ইবাদত বন্দেগি, সেবা, অধ্যাত্মসাধনা সবই বরবাদ, বৃথা। মুমিন হিসেবে বেঁচে থাকা অর্থহীন।


প্রাচীন ব্যাবীলনে বহু জাতির বসবাস ছিল না। গোত্র ও গোষ্ঠিয় জীবন যাত্রা ছিল সেসময়ের সভ্যতায়। হযরত ইবরাহিম যে মূর্তি ভেঙ্গেছিলেন তা তাদের পারিবারিক ও গোত্রিয় নিজস্ব মালিকানাধিন ছিল। পিতা আযরই গড়তেন এসব প্রতিমা। হযরত ইবরাহিম পাশের অঞ্চলের কোনো মন্দিরে গিয়েও হামলা করেননি। একই সময়ে মাহেঞ্জদরো হরোপ্পা ও অ্যাশেরিয় ও ক্যালদানি সভ্যতায় মূর্তি পূজার প্রচলন ছিল। সেখানে গিয়ে হযরত ইবরাহিম মূর্তি ভাঙ্গেননি। মিসরে তিনি হযরত সারাকে নিয়ে গিয়েছেন; সেখানেও কোনো মূর্তি ভেঙ্গেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। এর তিন হাজার বছর পর রাসূল সা. যখন পৃথিবীতে আসেন তখন মানব সভ্যতার বড় বিবর্তন হয়েছে। মক্কার পরিবেশ ব্যাবিলনের পরিবেশ থেকে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বহু গোষ্ঠির বসবাস ছিল মক্কায়। একেক গোত্রের একেক শাখার একেকটি মূর্তি ছিল। এইসব মূর্তি কাবাঘরে রাখা হয়।


রাসূল সা. মক্কা মুকররমায় ছিলেন ৫৩ বছর। নবুওয়াতের আগে ৪০ বছর, নবুওয়াত লাভের পর ১৩ বছর। নবুওয়াতের আগেও তিনি মূর্তি পূজা করতেন না। মূর্তি পছন্দ করতেন না। নবুওয়াতের পর তো মুর্তির বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলেছেন। লাত মানাতের দুর্বলতা, তাদের অক্ষমতা ও গাইরুল্লাহ পূজার অনর্থকতা ও ভয়াবহতা স্পষ্ট করেছেন। হিকমা ও মাওইজা হাসানার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন জাহিলি মানুষকে।


মক্কার এই ৫৩ বছরের জীবনে কখনও মূর্তি ভাঙ্গেননি। হযরত ইব্রাহিমের মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা সম্বলিত আয়াত মক্কাতেই অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূল সা. কাবা ঘরে মূর্তি থাকা অবস্থাতেই সমাজের মানুষদের মাঝে দাওয়াতের কাজ করেছেন। মানুষকে তাওহিদ ও আখেরাতের দাওয়াত দিয়েছেন। এ বিষয়টি ভেবে দেখার মত।


এরপর মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। একে একে আটটি বছর বিভিন্ন লড়াই সংগ্রাম শেষে মক্কা মুকররমায় প্রবেশ করেন। বিনা রক্তপাতে বিজিত হয় মক্কা মুকররমা। বাইতুল্লাহয় প্রবেশ করে ভাঙ্গেন তিনশ ষাটটি মূর্তি। হযরত আলি ও বিভিন্ন সাহাবিকে পাঠিয়ে মূর্তি ভাঙ্গান। আরবের সব মূর্তিই একে একে ভাঙ্গা হয়।


আরবের সকল গোত্রই ছিল মূলত হযরত ইবরাহিম আ.-এর বংশধর। সে হিসেবে সামান্য সংখ্যক ইয়াহুদ নাসারা ছাড়া পৌত্তলিক সব মুশরিক-কাফির ছিল ইবরাহিমের মিল্লাতের অনুসারী। আমর ইবনু লুহাই সিরিয়া থেকে আমদানি করেছিল হুবাল নামক মুর্তির। তার পর ধীরে ধীরে লাত মানাত উযযা ও অসংখ্য মূর্তিতে ভরে যায় আরব ভূমি। মূর্তি সংস্কৃতি আরব সমাজের নিজস্ব নয়। সিরিয়া, ইরান ও ইয়ামেন থেকে আগত। যার কারণে পবিত্র কুরআনে হযরত ইবরাহিম আ.-এর মিল্লাতের কথা বলেই তাদেরকে তাওহিদের দিকে আহ্বান করা হয়েছে। যাযিরাতুল আরবে মূর্তি-ভাস্কর্যের বিলোপ সাধন এজন্য সুন্দরভাবে সমাধা পেয়েছিল।


আরব ছিল ওহি নাযিলের স্থান। এই ভূখণ্ডের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। বিধর্মীদেরকে আরব ভূখণ্ড থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাসূল সা.। আরবের যে বিধান তা সব দেশে প্রযোজ্য নয়। আরবের সাথে অন্য অঞ্চলের পার্থক্যের বিষয়টি ভিন্ন প্রবন্ধে স্পষ্ট করার ইচ্ছা আছে। আল্লাহ তাওফিকদাতা।


সাহাবিদের যুগেই ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বিভিন্ন দেশ ও সমাজের ভেতর কাজ করেছে মুসলিমরা। একেক অঞ্চলে একেক ধরণ তৈরি হয়েছে। এটিকে অস্বীকার করা যায় না। চার মাযহাব ও সুফিদের চার তরিকা সেই বৈচিত্রের স্মারক।


ভারত উপমহাদেশে বহু ধর্ম ও জাতির বসবাস। এমন মাল্টিকালচারাল ভূখণ্ডে পূর্ণ ইসলামিক এরিয়ার মত চিন্তা করা বাড়াবাড়িই বটে। এক স্থানের নিয়ম আরেক স্থানে প্রয়োগ করা হচ্ছে জ্বরের ওষুধ দিয়ে ডায়েরিয়া নিরাময়-চেষ্টার মত চরম নির্বুদ্ধিতা।


ভারতের দিল্লি, আগ্রা, সাহারানপুর এমনকি দেওবন্দেও পথে পথে বহু মূর্তি রয়েছে, এতে সেখানের মুসলিমদের ধর্মপালনে কোনোই বিঘœতা হয় না। খাটি ধার্মিক হবার পথে তা অন্তরায় হয়নি। এ বিষয়টি মাথায় থাকলে আশা করি আমাদের সমাজে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা দূর হবে। সাধারণ ধার্মিকদের মাথায় এটিকে যেভাবে ভয়ঙ্করভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ভেবে দেখতে বলব পাঠকদের। এসব বিষয়ে অতিরঞ্জন পরিত্যাগ করে সমাজের আরও বহু অসঙ্গতি আছে সেগুলি নিয়ে কাজ করাই বরং ভালো।


দেশের নব্বই ভাগ মানুষ মুসলিম হলেও নামাজ পড়ে কত ভাগ মুসলিম? যারা নামাজ পড়ে তাদের ভেতর জরুরিয়াতে দ্বীনের জ্ঞান আছে কত শতাংশের? ইসলামী জ্ঞান ও আখলাকের প্রসারে কাজ করাই উলামায়ে কেরামের জন্য এসময়ে অধিক জরুরি। আমাদের আকাবির আসলাফ এভাবেই কাজ করেছেন। এতদিন এভাবেই কাজ হয়ে এসেছে।


৭৩ সালে শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক ৪২ ফুট বিশাল ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। জাগ্রত চৌরাঙ্গ নামের সেই মূর্তি আজও রয়েছে। এরপর আরও বহু ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে বিগত পঞ্চাশ বছরে। আমরা কোনো বড় আলেমকেই এসব বিষয় নিয়ে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে দেখিনি। তাদের যে ইসলামের জন্য দরদ ছিল না এমন নয়। মূলত এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিমগ্ন ছিলেন তারা। রুট লেবেল থেকে তারা মানুষের ইমানি চেতনা সৃষ্টির কাজ করেছেন।


বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠ গরম করার চেয়ে ইতিবাচক গঠনমূলক কাজ সমাজের অধিক উপকার করবে। সঠিক শিক্ষা ও ইসলামী মূল্যবোধ যখন সমাজের সর্বস্তরে আমরা ছড়িয়ে দিতে পারব তখন অসংখ্য মূর্তির ছড়াছড়িও মুসলিম সমাজের ক্ষতির কারণ হবে না। সঠিক আমল আখলাকে যখন উম্মতে মুসলিমা অভ্যস্থ হয়ে যাবে তখন মূর্তি বা ভাস্কর্য তৈরির যে মানসিকতা দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে রয়েছে তা দূর হয়ে যাবে। হুমকি ধমকি দিয়ে জোরপূর্বক মুসলমান বা মুরিদ বানানোর চেয়ে এই গড়ার মানসিকতা কি আরও বেশি কার্যকর নয়?


উপরে বলেছি, এর আগে কখনই আলেম উলামা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বিরাট গণআন্দোলনের চেষ্টা করেনি। ব্যতিক্রম ২০১৭ সাল। থেমিস দেবীর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বিরাট প্রতিবাদ হয়েছিল। সুপ্রিমকোর্টের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধ বা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন এক নয়। থেমিস দেবির ভাস্কর্য নির্মাণের বিপরীতে সবাই একমত হতে পেরেছিল কারণ তাতে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। দেশীয় সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে পরামর্শ দিতে হলে আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্ববোধ আত্মস্থ করে নিতে হবে। আলেমদেরকে যে এতকাল মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে সেখান থেকে কেবলই বের হয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে। আরো অপেক্ষা করতে হবে পূর্ণ পরিচ্ছন্ন হতে।


মুহাম্মাদ বিন কাসিম আরব থেকেই এসেছিলেন। তিনি মূর্তির সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠেননি, খাটি ইসলামী সমাজে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তা সত্তে¡ও ভারত জয়ের পর মূলতান শহরের আদিত্য তথা সূর্যদেবতার প্রতিকৃতিটি তিনি রেখে দিয়েছিলেন। ভারতের তৎকালীন সবচেয়ে বড় মূর্তি ছিল সেটি। পরবর্তীতে কারামিতা ফিরকার লোকেরা যখন সেখানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো, সূর্যদেবতার মন্দির ভেঙ্গে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছিল। পরবর্তীতে আবারও যখন সুন্নিরা কারামিতাদের হাত থেকে মুলতান উদ্ধার করে সেই মসজিদ পরিত্যক্ত করা হয়। মন্দিরের স্থলে মন্দিরটি আর মসজিদ থাকেনি। [ দেখুন, ভারততত্ত¡, আলবিরুনি, পৃষ্ঠা ৬৫]


মুহাম্মাদ বিন কাসিমের আগে হযরত মুআবিয়া যখন সিসিলি বিজয় করেন তখন সেখানের স্বর্ণনির্মিত বহু বিগ্রহ ভারতের রাজাদের কাছে বিক্রি করে দেন। আলবিরুনি ভারততত্তে¡ এ তথ্য দিয়ে বলেন, মূলত হযরত মুআবিয়া এটিকে ধর্ম দিয়ে বিচার না করে রাজনীতি দিয়ে বিচার করেছেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ছিল মূর্তিপূজার সহযোগিতা কিন্তু রাজনৈতিক দৃষ্টিতে ভারতের সাথে সুসম্পর্কের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের উপায় ছিল এ মূর্তি হস্তান্তরে।


মূর্তিপূজা শুধু হারাম নয়, কুফুর ও শিরক। কেউ কোনো মূর্তিকে পূজা করলে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। যারা ভাস্কর্য আর প্রতিমার মাঝে পার্থক্য করছেন তারা এই বিধানগত পার্থক্যের কারণে বলছেন মূর্তি আর ভাস্কর্য ভিন্ন। কিন্তু ভাস্কর্যকে কোনো অবস্থায় হালাল বলার অবকাশ নেই। ছবি তোলা যেমন হারাম, ভাস্কর্য বানানোও হারাম। দারুল উলুম দেওবন্দ সব ধরনের ছবি তোলা হারাম ঘোষণা করেছে; তারপরও আমাদের দেশের কতজন আলেম আছেন যিনি মোবাইলে ছবি তোলেন না, বা ছবি তোলার ক্ষেত্রে খুব বেশি রক্ষণশীল? অসংখ্য হারাম কাজের মতই ভাস্কর্য নির্মাণও একটি হারাম। যে হুকুম যে স্তরের তাকে সেই স্তরে রাখা আবশ্যক। তা না হলে দ্বিনের ভেতর তাহরিফ হবে।


সমাজে অসংখ্য হারাম কাজ হচ্ছে, সর্বপ্রকার হারাম থেকেই মানুষকে বাঁচাতে হবে। এর জন্য গড়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। উত্তম আখলাক ও আদর্শ উপস্থাপন করতে হবে সবার সামনে। হুমকি ধমকি দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করা ভালো লক্ষণ নয়। জানি না এই গর্জন আমরা কোত্থেকে শিখলাম। এদেশে বহু আগ থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয়ের ভাস্কর্য নির্মাণ হয়ে আসছে, হাফেজ্জি হুজুর থেকে নিয়ে মরহুম চরমোনাই পীর, মুফতি আমিনি ও মাওলানা আজিজুল হক সাহেব কেউ এটিকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেননি। অন্য আরও বহু অসঙ্গতির জন্য চিন্তিত হয়েছেন। সমাজের সার্বিক কল্যাণ ও শৃঙ্খলার জন্য বর্তমান ইসলামী নেতৃত্বকে আরও বুদ্ধিমান ও কৌশলি হতে হবে। তা না হলে অন্য সব মুসলিম দেশের সাথে তুলনা করা হলে আমাদের দেশ ও জাতির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হবে।


বহু মুসলিম প্রধান দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে। অন্যান্য মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে বলেই যে তা হালাল হয়ে গেছে তা বলছি না। কিন্তু অন্য সভ্য দেশগুলোর মুসলিম মনীষীরা এটাকে মুকাবেলার জন্য কী পন্থা অবলম্বন করেছেন বা তারা এটাকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন তা দেখার বিষয়। এভাবেই আমাদের কর্মপন্থা ঠিক করা উচিত। আমরা দেখতে পাচ্ছি পাকিস্তান, ইরান, মিশর, মরোক্ক, তিউনিসিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে নিয়ে প্রায় সব মুসলিম দেশেই প্রচুর ভাস্কর্য রয়েছে। প্রতিবছরই তৈরি হচ্ছে কোথাও না কোথাও। কোনো দেশের মুসলিমরাই চরম উত্তেজনা প্রদর্শন করেনি। আমরা কি তাদের চেয়ে বেশি ধার্মিক হয়ে যাচ্ছি? ইঁচড়ে পাকামো বা বকধার্মিকতা হয়ে যাচ্ছে না তো?


শেষ কথা বলব, ভাস্কর্য হারাম, কোনো সন্দেহ নেই। ছবি তোলাও হারাম আমাদের দেওবন্দিদের গবেষণায়। হয়ত ভাস্কর্য তুলনামূলক বড় হারাম। কিন্তু হারাম তো হারামই। সব হারাম থেকেই বাঁচতে হবে। যতটুকু পারি মানার চেষ্টা করি। বাকিটার জন্য তাওবা করি। অন্যদেরও দাওয়াত দেই যেন তারা সবধরনের কুফর শিরিক ও হারাম থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখেন।


আবারও বলছি, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সমাজে কাজ করুন। হুমকি ধমকি দিয়ে কোনো বিষয় যতটুকু গুরুত্ব পাবার উপযোগী তার চেয়ে বাড়িয়ে তুলবেন না। এতে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হবে।
বিশেষ দল বা গোষ্ঠির উপকারে শক্তি ব্যয় না করে দ্বীনি মানসিকতা নিয়ে কাজ করাই উলামায়ে কেরামের কাছে কাম্য। আল্লাহ আমাদের সহি সমঝ নসিব করুন। আমীন।


লেখক: মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ ইকরা বাংলাদেশ।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com