শিরোনাম
সত্যিকারের নবীপ্রেম যেরূপ হওয়া উচিত
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২০, ০০:১৪
সত্যিকারের নবীপ্রেম যেরূপ হওয়া উচিত
মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান
প্রিন্ট অ-অ+

অফিসে আদালতে পথে ঘাটে সবখানেই কিছু কিছু নাস্তিক আছে। অনেকে কেবল নামে মুসলমান। কাজে কর্মে চিন্তা চেতনায় পুরো দস্তুর নাস্তিক। এই সব নাস্তিক এবং অনেক অপরিপক্ক মুসলমানও অনেক সময় বেয়াদবি করে ফেলে প্রিয় নবীজীর শানে। অমুসলিমরা তো আছেই। দেশের ভেতর যেসব হিন্দু বা খৃস্টান আর আদি বাসী আছে তাদের কোনো ভক্তি নেই প্রিয় নবীজীর প্রতি।


বিশেষ করে যারা বিভিন্ন অমুসলিম প্রধান দেশে বসবাস করেন তাদের জন্য সব সময় হাতে ধারালো বটি বা রামদা নিয়ে চলা ফেরা করা উচিত নবীপ্রেমীদের। ফ্রান্সের শাতিমে রাসূলকে চেচেন মুসলিমের মত আঘাত করে উচিত শিক্ষা দেওয়া জরুরি। তোমার মা বাবাকে নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে তো তোমার সহ্য হতো না, তাহলে প্রিয় নবীজীকে কেউ কটুক্তি করলে কেন তুমি সয়ে যাও? তোমার ভেতর কি কোনো ইমান নেই? ইমান থাকলে তুমি অবশ্যই এর প্রতিশোধ নিতে। তাকে সবার সামনে জবাই করে দিতে। ইসলামের শিক্ষা এমনই। ইমানের বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিশ্বাস যত দৃঢ় হবে মনোবল তত অটুট থাকবে। এভাবে নবীর প্রেমে কাউকে আঘাত করতে পারলে তুমি চেচেন যুবকের মত মারা গেলে নিশ্চিত জান্নাতে যেতে পারবে। কেউ তোমার জান্নাত আটকাতে পারবে না। কুরআন হাদীসে স্পষ্ট লেখা আছে এসব কথা।(??)


বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ না হলেও বড় একটা অংশ ধার্মিক লোকদের চিন্তা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এই মানসিকতা হবার পেছনে আমাদের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের একটা বড় দায় আছে। সত্যিকার ইসলামী মানসিকতা সৃষ্টির চেষ্টা আমাদের ভেতর নেই। আছে নিজেদের দল ভারি করার চিন্তা। কী ধরনের উত্তেজক কথা বললে দলের সমর্থন বাড়বে। জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে। মুসলিমদের কাচা আবেগ নিয়ে খেলা করা যাবে।


নেপোলিয়ান বা জর্জ বার্নাড শ মহাত্মা গান্ধি প্রমুখ কি ভাবে নবীজীর প্রশংসা করেছেন। আর কোন অমুসলিম বড় মনীষী রাসূল সা. সম্পর্কে ভালো কথা বলেছেন সেসব বর্ণনায় আমাদের মন জুড়িয়ে যায়। আর কখনও কোনো অমুসলিম আমাদের মন মত কথা না বললেই আমরা ক্ষেপে যাই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এমন ক্ষ্যাপা মন নিয়ে ইসলামের কাজ করা কি সম্ভব? কতদূর আপনি ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারবেন? যেসব অমুসলিম নেতারা প্রশংসা করেছে তারা নবীজীকে খুব জেনে বুঝে যে প্রশংসা করেছে এমন নয়, তারা মুসলিমদের খুশি করতে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। তার জন্য খুব একটা আনন্দিত হবার কিছু নেই। কোনো অমুসলিম নবীজীকে অপছন্দ করলেও আপনার হতাশ হবার কিছু নেই। কারণ খোদ আল্লাহ তো তার হাবীবের প্রশংসা করেছেন। আর কারও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই আপনার ভক্তির জন্য।


একটা প্রশ্নের উত্তর দিন, মক্কার কোন কাফেরটা রাসূল সা.কে গালি দেয়নি? একজন কাফেরের নাম বলুন। উৎবা, শায়বা, রাবিআ, আবু জাহল, আবু লাহাব, উমাইয়াহ, উম্মু জামিল? আরও কত কাফের। হযরত উমর তো হত্যা করতেই উদ্যত হয়েছিলেন রাসূল সা.কে। উহুদ যুদ্ধে দান্দান মুবারক শহিদ করে যে কাফের তাদের জন্য বদ দুআ করতে হাত উঠাতে বলেন সাহাবায়ে কেরাম, রাসূল সা. হাত উঠিয়ে দুআ করে বলেন, হে আল্লাহ আমার কাওমকে তুমি মাফ করে দাও তারা আমাকে চিনতে পারেনি। তারা তো আমাকে জানে না।


সত্যি, রাসূল সা.কে চিনতে পারলে কি আর কেউ তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতে পারে? পারে নবীজীর শানে বেয়াদবি করতে? পারে না, কস্মিন কালেও না। জানে না, চিনে না প্রিয় নবীজীকে। সেই সুমামা ইবনু উসাল রা.র কথা শুনুন। বলেন, হে আল্লাহর রাসূল পৃথিবীতে আপনার চেহারা মুবারকের চেয়ে অপছন্দের আর কিছু ছিল না আমার কাছে, সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করতাম আপনার মুখমন্ডলকে। এখন আপনার চেহারায়ে আনওয়ার আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। আপনার দ্বীনের চেয়ে ঘৃণ্য কিছু আমার কাছে ছিল না। এখন আপনার দ্বীনের চেয়ে প্রিয় কিছু নেই। আপনার শহরের চেয়ে মন্দ কিছু আমার কাছে ছিল না, এখন এই মদীনার চেয়ে সুন্দর কোনো শহর আমার চোখে নেই।


নবী প্রেমের বিষয়টি এমনই; চরম শত্রুও নবীজীকে যখন জানতে পারবে বুঝতে পারবে তখন নবীজীকে ভালো না বেসে পারবে না। রাহমাতুললিল আলামীনকে ভালোবাসতে প্রতিটি মানুষ বাধ্য। এমন সুন্দর করে তো আর কাউকে পয়দা করেননি আল্লাহ। সবদিক দিয়েই তিনি ছিলেন পূর্ণতর। মানুষকে জানাতে হবে। বোঝাতে হবে। নবীজীর সিরাত ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়।


অনেক সময় অনেক অবুঝ লোক রাসূলের শানে বেয়াদবি করে। এই সব বেয়াদবের ব্যাপারে হতাশ না হয়ে গঠনমূলক কাজ করে যাওয়া মুসলিমদের কর্তব্য। মুসলিম কখনও অসহিষ্ণু হতে পারে না। বিশেষত রাসূল সা.-এর নিন্দা করা তো সম্ভব নয়। মক্কার কাফেররা রাসূল সা.-এর নাম বিকৃত করে বিভিন্ন কুৎসা রটাতো। সাহাবায়ে কেরাম মনক্ষুন্ন হয়ে রাসূল সা.-এর কাছে ছুটে আসত। রাসূল সা. বলতেন, দেখ না, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাকে কীভাবে রক্ষা করেছেন? তারা গালি দেয় মুযাম্মামকে। আমি তো মুহাম্মাদ। [বুখারী] কাফেররা রাসূল সা.কে গালি দেওয়ার সময় মুহাম্মাদ নাম উচ্চারণ না করে বলত, মুযাম্মাম এমন, মুযাম্মাম এমন। মুহাম্মাদ অর্থ সর্বাধিক প্রশংসিত। অর্থাৎ সর্বগুণের আধার। সর্বগুণের আধারকে তো আর গাল দেওয়া যায় না। তাই কাফেররা নাম বিকৃত করে বলত, মুযাম্মাম। মুযাম্মাম অর্থ নিন্দিত। রাসূল সা. সাহাবায়ে কেরামকে সান্ত¦না দিয়ে বললেন, ওরা তো আমাকে গালি দেয় না, ওরা গালি দেয় মুযাম্মামকে। আমি তো মুযাম্মাম নই, আমি মুহাম্মাদ।


সুবহানাল্লাহ, আল্লাহর কি রহমত। সত্যি আমাদের নবীকে গালি দেওয়া সম্ভব নয়। ফ্রান্সের সাপ্তাহিক কার্টুন পত্রিকাটি আমাদের দেশের পাক্ষিক উন্মাদের মতই। সেখানের কার্টুনগুলো আমি দেখেছি, সেখানে মহামেট নামের একজনকে গালি দেওয়া হয়েছে। আমাদের নবীর নাম মাহামেট নয়। নবীজীর নাম ফরাসি ভাষায় লেখার কোনো পদ্ধতিও নেই। কাজেই তারা মুহাম্মাদ সা.কে নয় কোনো কল্পিত মহামেট নামক ব্যক্তির ছবি এঁকে গাল দিয়েছে। আমাদের নবীজীকে তো গাল দেওয়া সম্ভবই নয়। তিনি সর্বাধিক প্রশংশিত। তিনি মুহাম্মাদ তিনি আহমাদ। তিনি মাহি হাশির আকিব। তার অসংখ্য সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। কিন্তু মহামেট শব্দের কোনো নাম তার ছিল না। মহামেটকে গালি দিতে পারলেও নরকের কীটরা মুহাম্মাদ সা.কে কখনওই গালি দিতে পারবে না। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা অলৌকিকভাবে অসম্ভব করে দিয়েছেন। কারণ যে বলবে মুহাম্মাদ এই দোষে দোষী।


তার কথার প্রথম অংশ দ্বিতীয় অংশকে মিথ্যা প্রমাণিত করবে। আকাশ ও পৃথিবীর সবাই বলবে তুমিই তোমার নিজেকে মিথ্যাবাদি বলছ। কারণ তুমি কথা শুরুই করেছো এভাবে যে তিনি সব গুণের আধার, সব কল্যাণের উৎস, তারপর তুমি নিজের মুখে উচ্চারিত শাশ্বত সত্যের বিরুদ্ধে সর্বাধিক প্রশংশিত সত্তার ত্রæটি বের করার চেষ্টা করছ। তিনি তো মুহাম্মাদ। প্রশংশিত। দুনিয়া ও আখেরাতে। মাকামে মাহমুদ তার জন্য। হামদের পতাকা থাকবে তার হাতে। হাউজে কাউসারের অধিকারী তিনি। আরশের কড়া নাড়বেন তিনি। তিনি যেমন আল্লাহর হামদ করেন, তার হামদও করে আকাশ ও জমিনের সব মাখলুক। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যার প্রশংসায় বলেছেন, ইন্নাকা লা আলা খুলুকিন আজিম। হে রাসূল আপনি মহান চরিত্র মহিমায় অধিষ্ঠিত সত্তা। আপনি রাহমাতুললিল আলামিন। আপনি আওয়ালিন ও আখিরিনের সর্দার। দো জাহানের বাদশা আপনি। সমস্ত সৌন্দর্য আর সমস্ত গুণ এসে শেষ হয়ে গেছে আপনার মাঝে। কোনো চোখ আপনার চেয়ে সুন্দর কিছু দেখেনি। আপনার মত উত্তম আখলাকও পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেনি।


রাসূল সা.কে পাথর নিক্ষেপ করেছিল আব্দুল্লাহ ইবন শিহাব যুহরি। তিনিই পরবর্তীতে মুসলিম হয়েছিলেন। নবীজীকে আঘাত করেও ইসলামের ছায়াতলে আসতে পেরেছেন। তার নাতি মুহাম্মাদ ইবনু শিহাব যুহরি এ উম্মতের সর্বপ্রথম হাদীস সংকলক। তাবেয়ি যুগের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ। শ্যামুয়েল প্যাটি, যে নবীজীর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শন করেছে স্কুলে, হতে পারত, সে নবীজীকে পরবর্তী জীবনে ভালোবাসতে পারতো। এখন তো সে চির দিনের জন্য জাহান্নামি হয়ে গেছে। তো সব অমুসলিমকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়াই কি আমাদের কর্তব্য? মানুষকে মহব্বতের সাথে নবীজীর সিরাত শোনান। নবীজী সম্পর্কে আলোচনা করুন। ইউরোপ জুড়ে ইসলামের উত্থান চোখে পড়ার মত। এভাবে চলতে থাকলে সেদিন বেশি দূরে নয় যখন ইউরোপের প্রতিটি ঘরেই ইসলামের আলো পৌঁছে যাবে। এ বিষয়টি বাস্তব হয়েই ছাড়বে। কিন্তু আমরা বড়ই তাড়াহুড়ো করি। ইসলামের আলো রুখে দেওয়া যাবে না। যে আলো হেরা গুহাকে আলোকিত করেছিল তা একদিন সমগ্র পৃথিবীর অন্ধকার দূর করে ছাড়বে।


প্রতিবাদ করুন, ইমানুয়েল ম্যাক্রোর। সাথে সাথে মুসলিম যুবকদের সঠিক বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করুন। এমন কোনো পরিস্থিতি হলে যেন তারা হত্যার মত জঘন্য কাজের দুঃসাহস না করে। বরং রাসূল সা. যেভাবে সাহাবায়ে কেরামকে উত্তম আখলাক ও সবরের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত দিতে শিখিয়েছেন সেভাবে দাওয়াত পৌঁছে দিতে উৎসাহিত করুন। একবারে না হলে বারবার চেষ্টা করুন। হতাশ হওয়া যাবে না। রাসূল সা. আবু জাহলের কাছে যে কবার গিয়েছিলেন স্যামুয়েল প্যাটির কাছে কি ততবার গিয়েছি আমরা? তাকে তো জাহান্নামে পাঠিয়ে দিতে পেরেই খুশি। মোটেও না, কাল কেয়ামতে আমাদের জাওয়াব দিতে হবে। নবীজীর সামনে কি আমরা মুখ দেখাতে পারব? রাসূল বলবেন না, তোমরা আমার একটি উম্মতিকে কেন এভাবে হত্যা করলে? তাকে কেন সত্যের দাওয়াত দিলে না। কেন এমন ইসলামের বদনাম করলে? ইসলামকে তো এমন অসহিষ্ণু হিসেবে আমি রেখে যাইনি। তোমাদের তো এমন নির্বোধ ও ধৈর্যহারা হবার নসীহত করিনি? তবে কেন এমন মনগড়া ভাবে ইসলামকে ফলো করো তোমরা?


অবশ্যই আমাদের যেসব নেতৃবৃন্দ ফ্রান্সকে বয়কটের ডাক দিচ্ছেন তাদের অনুসারীদের সহিষ্ণু হবার শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
ইসলামী কোনো শিক্ষিত আলেম নেতার সামনে কোনো নাস্তিক যদি রাসূল সা.কে গালি দেয় তাহলে সে তাকে, আমার বিশ্বাস, সঠিক বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করবে। তাকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে ফেলবে না। কোনো অবস্থায় সে না বুঝলে তার কথা উপেক্ষা করে সেখান থেকে উঠে যাবে।


কিন্তু এই নেতাই যখন মাঠে আছেন তখন সেই চেচেন যুবকের পক্ষে কথা বলছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। এ আচরণ ডাবল স্টাÐার্ড-এর শামিল। এমন দ্বিচারিতা করে ইসলামের খেদমত আঞ্জাম দিবেন আপনারা? আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত করুন। আমীন।


রাসূলের যুগে কিছু কিছু শাতিমে রাসূল সা.কে হত্যা করা হয়েছে। রাসূল সা.কে গালি দিয়েছে অনেক কাফের সবাইকে হত্যা করা হয়নি। বিশেষ কিছু কাফেরকে বিভিন্ন কারণে প্রাশাসনিকভাবেই হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিচার করা হয়েছে। ইসলাম কখনওই সাধারণ মানুষকে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া অধিকার দেয় না। কখনওই নয়। কারণ এভাবে চরম বিশৃংখলা দেখা দিবে সমাজে, বিশ্বে। তাই কয়েকটি হাদীসকে ঢাল বানিয়ে অপব্যাখ্যার জবাব দিতে হবে উলামায়ে কেরামকে। সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে প্রতিটি মসজিদে। তা না হলে অসংখ্য কল্লা পড়ে থাকতে দেখবেন পথে ঘাটে। অসংখ্য মানুষকে জাহান্নামে পাঠানোর আয়োজন হবে। যা দেখে রাসূল সা.-এর রুহ মুবারক কষ্ট পাবে।


একটি কুযুক্তির কথা উল্লেখ করেন আবেগি সাধারণ মানুষ। আপনার বাবার নামে কেউ কুৎসা রটালে আপনি কি মুখ বুজে সয়ে যেতেন? মুখ বুজে হয়ত সয়ে যেতাম না কিন্তু কাউকে এজন্য হত্যাও করতাম না। কোনো সুসভ্য মানুষ কথার জবাবে হাত তোলে না। সুন্দর কথার মাধ্যমেই কথার উত্তর দেয়।



মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. দেওবন্দের হাদীসের মসনদে বসে আছেন। এসময় একজন মুসলিম লীগি লোক একটি কাগজ পাঠালো, তাতে লেখা, শুনেছি আপনার বাবা মা বিয়ে ছাড়াই সংসার করতেন, আপনি নাকি একজন হারামজাদা? আমি/আপনি হলে কি করতাম? তার সাথে মারামারিই বাধিয়ে দিতাম। মাওলানা মাদানি সুসভ্য ছিলেন। ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। জ্ঞানী প্রজ্ঞ। বুযুর্গ আল্লাহ ওয়ালা। আওলাদে রাসূল। তিনি বললেন, ভাই আপনার কাছে ভুল সংবাদ পৌঁছেছে। আমার বাবা মায়ের বিয়ের মজলিসে যারা ছিলেন তাদের কয়েকজন এখনও ফয়জাবাদে বেঁচে আছেন। আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি আপনি গিয়ে তাদের জবানেই শুনে আসুন।


এমনই বিস্ময়কর ছিল সেসব মুসলিম। আজকের মুসলিমদের এসব মনীষীদের অনুসরণ করা উচিত। চরম মনোকষ্টের সময়ও নিজেকে সংযত করতে শিখতে হবে। তা না হলে আপনি ইসলামের দাওয়াত কি করে পৌঁছে দিবেন? অমুসলিমরা তো কেউ আমাদের মত করে ভালোবাসবে না নবীজীকে। তারা তো ঘৃণা ব্যঙ্গ করবেই। তাদের অবিশ্বাসের কারণেই করবে। আমরা বেশি থেকে বেশি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা লড়তে পারি।


তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কার্টুন ছাপানোর পর এরদোয়ান মামলা দিয়েছেন। কোনো মিছিল মিটিং বা বয়কটের ডাক দেননি। ঠিক কাজটিই করেছেন। এ হচ্ছে কার্যকরী পদক্ষেপ। কিন্তু রাসূল সা.-এর ক্ষেত্রেও এত মাঠ গরম না করে এই কার্যকরী পদক্ষেপটি নিলে আরও বেশি উপকার হতো। বড় বড় উকিল নামিয়ে নেদারল্যান্ডের হেগে যে আন্তর্জাতিক আদালত রয়েছে সেখানে মামলা লড়লে এর একটা সুফল অবশ্যই আসত। এখনও এধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায়।


বিশ্বের জাতিসমূহ যেন বাক স্বাধীনতার নামে এমন বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে। ইসলামের প্রতি মানুষের ভেতর ঘৃণা সৃষ্টি করতে না পারে। সে কাজটি কিন্তু এখনও হয়নি। কয়েকদিনের উত্তেজনা শেষে মানুষ সব ভুলে যাবে। আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে পরিস্থিতি। কাজের কাজ কিছু না করে এভাবে লাফানো কতটা যুক্তিযুক্ত ভেবে দেখতে বলব সচেতন পাঠককে। প্রিয় নবীজীর উপর দরুদ পড়েই শেষ করব আজকের নিবন্ধ। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ। ফিদাকা আবি ওয়া উম্মি ইয়া রাসূলাল্লাহ। ইয়া হাবিবাল্লাহ। ইয়া শাফিয়াল মুজনিবিন। ইয়া সায়্যিদাল আওয়ালিন ওয়াল আখিরিন।


লেখক: মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ ইকরা বাংলাদেশ


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com