শিরোনাম
কোভিড ১৯: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের নামান্তর
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২০, ২১:৩২
কোভিড ১৯: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের নামান্তর
ড. সিদ্ধার্থ দে
প্রিন্ট অ-অ+

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কোভিড ১৯ বা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত আলোচনা যখন সকল কিছুর শীর্ষে রয়েছে ঠিক তখনই পরবর্তী পরিস্থিতি কি হতে পারে তাই মূলত এই লেখার বিষয়বস্তু। মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে খানিকটা চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।


১ম বিশ্বযুদ্ধ, সময়কাল:২৮ জুলাই, ১৯১৪–১১ নভেম্বর, ১৯১৮।


১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ২৮ জুলাই ১৯১৪ অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী সার্বিয়ার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পরদিন রাশিয়া সৈন্য সমাবেশের মাধ্যমে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে মোট ৪০ কোটি বা ৪০ মিলিয়ন মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে। (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সময়কাল: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯–২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫।


১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই ঘটনাটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে গণ্য করা হয়।


মিত্র শক্তি ও অক্ষ শক্তির সামরিক ও বেসামরিক মিলে প্রাণহানি হয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি। (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)


তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কখনোই আমাদের কাম্য নয়। মানুষের মৃত্যু মানুষের হাতে, এই করুণ পরিণতির নাম যুদ্ধ। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই কোভিড ১৯ এর সাথে মোকাবেলা করাই হয়ে উঠেছে যুদ্ধের আরেক উদাহরণ। আর এই যুদ্ধে মানুষ যুদ্ধ করছে মানুষকে বাঁচানোর। মানুষের প্রতি মানুষের এই দায়িত্ববোধ ও সম্প্রীতিই এই যুদ্ধের শক্তি।


এর আগেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংক্রামক ব্যাধিতে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে কিন্তু সারা পৃথিবী জুড়ে এমন মহামারী পূর্বে কখনো দেখা যায়নি।


সারা পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত প্রাণহানি ৮৮ হাজার। আক্রান্ত ১৫ লাখ। বাংলাদেশে সর্বমোট আক্রান্ত ৩৩০ জন। সর্বমোট মৃত্যু ২১ জন। আক্রান্ত হয়েছেন সব বয়সেরই মানুষ। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ সহ সকল শক্তিধর দেশগুলোও আজ বড়ই অসহায়। এই অসহায়ত্বে মানুষ হয়ে মানুষের পাশে যদি না-ই দাঁড়াতে পারলাম তাহলে অর্জিত জ্ঞান আজ পুরোটাই মূল্যহীন হয়ে পড়বে। মূল্যহীন হয়ে পড়বে সকল ধর্মের বাণীগুলো, যে ধর্ম নিয়ে আমাদের এত গর্ব। যে ধর্মের নামে এখনো থেমে নেই আমাদের হানাহানি। এই যুদ্ধে নেই কোনো অস্ত্রের ঝনঝনানি। নেই কোনো দেশের শক্তিশালী মারণাস্ত্র দেখানোর প্রতিযোগিতাও। যেখানে মানুষের প্রতিপক্ষ শুধুই ভাইরাস। এটাতো ভিনগ্রহীদের ছুঁড়ে দেয়া নয় কোনো রাসায়নিক অস্ত্র। আর তাতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি, ঠিক যেন পেরে উঠছি না। এই যুদ্ধের হাতিয়ার মারণাস্ত্র নয়; বরং সচেতনতা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ইত্যাদি, যা সকল দেশেরই কমবেশি রয়েছে। অপেক্ষাকৃত বেশি যাদের রয়েছে তারা নিজের পরিস্থিতি সামলে অন্যদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াটাই হবে যুক্তিযুক্ত।


সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। সময় এসেছে ধর্মীয় বিভেদ ভুলে গিয়ে মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার। যে বিভেদ কখনো কখনো যুদ্ধের দামামা বাজায় প্রয়োজন আছে কী সেই বিভেদের? আমরা না হয় মানুষ নামেই মানব ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হই। সৌদি জোট ইয়েমেনে যুদ্ধ স্থগিত করেছে। এতে আপাতদৃষ্টিতে হানাহানি বন্ধ হলেও, এটা প্রকৃতপক্ষে কোনো সমাধান নয়। আর নয়, আর নয় রক্ত ক্ষয়, আর নয় মৃত্যু। সময় এসেছে যুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তনের। সময় এসেছে মহামিলনের। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমরা যা হারিয়েছি তা আর ফিরে পাবার নয়। আমরাই বলি "যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই"। আবার আমরাই করি যুদ্ধ। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রপ্রধানদের এক হয়ে সম্মিলিতভাবে মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো এই ভাইরাসকে মোকাবেলার নামই হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই দুঃসময়ে নিজেরা না হয় শান্তির পথটি খুঁজে নেই, চলমান সকল যুদ্ধ কেবল স্থগিত নয়, আসুন চিরতরে বন্ধ করি। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সর্বোচ্চ সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব মানবজাতির প্রতি প্রদর্শন করে এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করাই হোক এই যুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের একে অন্যের প্রতি দোষারোপ বয়ে আনতে পারে পূর্বের ন্যায় নতুন কোন যুদ্ধের বার্তা। আর যা-ই হোক ভাইরাস নিয়ে অপরাজনীতি হয়।


আমরা কখনোই চাইনা মানুষ দ্বারা মানুষ হত্যার নাম হোক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মানুষ দ্বারা সৃষ্ট সীমানা/প্রাচীর ভুলে গিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং রাষ্ট্রপ্রধানরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে শিখিয়ে যেতে পারেন, কি হতে পারে সৃষ্টির সেরা জীবের বৈশিষ্ট্য এবং গড়ে দিতে পারেন বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী। নতুন পৃথিবীতে শুধু মানুষ নয়, পশু পাখি গাছপালাসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি আমাদেরকে যত্নশীল হতে হবে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এ প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো শুধু মানুষের ভোগের জন্য নয় বরং সকল প্রাণীর জন্য। তাই প্রাণীকূলের স্বাভাবিকভাবে বাঁচার পরিবেশ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এখনই।


লেখক: ড. সিদ্ধার্থ দে, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com