শিরোনাম
মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শই হোক পথপ্রদর্শক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২০, ১৪:৪৯
মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শই হোক পথপ্রদর্শক
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মুজিব নামটা শুনলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরনে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা, সাথে কালো ওয়েস্ট কোর্ট, চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। অতি সাধারণ পোশাক পরিহিত একজন অসাধারণ মহৎ প্রাণ মানুষের ছবি। মানুষটির সকাল শুরু হতো দেশের মানুষের কথা মনে নিয়ে আবার চোখে ঘুমও নাম তো মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে। আপামর জনতার ভালোবাসা তাকে শুধু জাতির পিতাই করেননি, করেছে বাংলার বন্ধু, বাংলার মানুষের বন্ধু, তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি একাধারে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’, ‘স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা’, এবং ‘বাঙালির জাতির জনক’। কিন্তু সার্বিকভাবে তিনি একটি আদর্শের নাম। তার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নির্দ্বিধায় এবং বিশ্বের বুকে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।


আমরা সবাই জানি, বাঙালি জাতিকে দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে। দেশ ও জাতি গঠনে জাতির পিতার কর্মতৎপরতা এবং চিন্তা-ভাবনাই আমাদের অনুসরণীয় আদর্শ। ব্যক্তি স্বার্থ, লোভ, মোহ, পদ-পদবির ঊর্ধ্বে এ আদর্শের মূলে রয়েছে ত্যাগ-তিতিক্ষা আর আন্দোলন-সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা যায় এভাবে- ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়া, অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা আর মানুষের জন্য ভালোবাসা। আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা, সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ২০২০ সালে পূর্ণ হবে তার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম তারিখ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালিত হবে। এখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও থাকবে। এই সময়ের মধ্যে যেসব জাতীয় ও দলীয় আওয়ামী লীগের দিবস পড়বে সেগুলোকেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হবে। দেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যন্ত এই বর্ষ পালন করা হবে। মুজিববর্ষ সরকারিভাবেও পালিত হবে।’


শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউনেস্কোর সহযোগিতায় বিশ্বের প্রায় ১৯৩টি দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী। মুজিববর্ষ পালন করার এ সিদ্ধান্ত দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের অভিনব দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ। জাতীর জনকের জন্মশতবার্ষিকী পালনের এই মাহেন্দ্রক্ষণেই তার জীবনী নতুন করে চর্চা করার সময় এসেছে।


বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমাদের প্রত্যয় হোক তার আদর্শের অনুসরণ ও বাস্তবায়ন। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু যা করতে চেয়েছিলেন সেইসব বাস্তবায়ন করলে বিনির্মাণ হবে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা। তার জীবন ও কর্মের থেকে শিক্ষা নিলে দেশ ও দেশের মানুষের জীবন উন্নত ও সমুন্নত হবে। উনাকে চর্মচোখে না দেখলেও, পরিবারের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি, ইতিহাস পাঠে যতটুকু জেনেছি বা তার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী আর কারাগারের রোজনামচা পড়ে যতটুকু জেনেছি এবং তার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তারই হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাথে রাজনীতির পথপরিক্রমায় যতটুকু বুঝেছি, তা আমার যাপিত জীবনে যদি অনুসরণ করতে পারি, তা হবে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া।


দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বারবার জেলজুলুম সহ্য করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয়েছেন জাতির পিতা। ইতিহাসের সেই উজ্জল মহিমা থেকে শিক্ষা নেয়ার সময় এসেছে নতুন প্রজন্মের। দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে চাওয়া যে কোনো মানুষের জন্য তাই জাতির পিতার জীবনী পাঠ করা এবং তার আদর্শকে বুকে ধারণ করে পথচলা অবশ্যই দরকার। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে পূর্বপাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান করেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং পাকিস্তানের গোষ্ঠীগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বাঙালিদের আন্দোলনকে স্বাধীনতার পথে ধাবিত করে তিনি হয়েছেন বাংলার ইতিহাসের অবিসংবাদিত নেতা। জেল-জুলুম, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার- সবকিছু সহ্য করেছেন। ১৯৫২এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, এরপর ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, সবগুলো আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য।


পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন, মোট সাড়ে ১১ বছর জেলে কাটিয়েছেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দু’বার। তারপরও তিনি দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভেবে পিছু হটেননি কখনও, যেখানেই অন্যায় দেখেছেন সেখানেই বীরবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অধিকার রক্ষায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন লড়েছেন বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আর সেজন্যই বাঙালি জাতির ভাগ্যকে তিনি জয় করতে গিয়ে নিজের জীবনের প্রতি তাকিয়ে দেখার সুযোগ পাননি।


ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত-উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। আর তাতে অবিচল থেকে তিনি সমসাময়িক আরও অনেক বড় রাজনীতিবিদকে ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-প্রগতিশীল দেশ গড়ার লক্ষ্যে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জীবনের শেষ সায়াহ্ন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন করা।


আজ শেখ মুজিবের সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশকে যিনি এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের যাত্রায় নিয়ে এসেছেন। ২০২১ সালের মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত দেশে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পা রেখেছে উন্নয়নের মহাসড়কে ডিজিটাল দেশের কাতারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন আর স্বপ্ন নয়। এখন তা অনেকাংশে দৃশ্যমান বাস্তবতা। তাই মুজিববর্ষের প্রাক্কালে জাতির জনকের জন্মলগ্নে তার প্রতি রইলো অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।


লেখক: যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com