শিরোনাম
কিশোরদের বেপরোয়া জীবন ও পরিবারের সচেতনতা
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৪২
কিশোরদের বেপরোয়া জীবন ও পরিবারের সচেতনতা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সাম্প্রতিক সময়ে কিশোরদের বেপরোয়া চলাফেরা নিয়ে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সচেতনতা মূলক কাজ সবার নজর কেড়েছে। সেখানকার স্কুল কলেজগামী ছেলে মেয়েরা কোচিং ক্লাস বা অন্য কোনো বাহনা দিয়ে শহরের ভিন্ন জায়গাতে আড্ডা দেয়। আবার পড়ালেখাকে বিসর্জন দিয়ে এলাকাতে নানা ধরনের অপকর্ম করছে।


উভয় ধরনের কিশোররা ইভটিজিং, মোটরসাইকেল রেইস, মাদকসহ ভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রামের এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এসব কিশোরদের আটক করা হয়। একই সাথে এদের বাবা মায়েদের সামনে তুলে ধরে, তাদের সন্তানদের ভুলের পরিণত কতটা ভয়াবহ হবে।


ছেলে মেয়েরা যখন স্কুল কলেজ থাকার কথা তখন পুলিশের হাতে আটক হয়ে থানাতে থাকাটা সত্যি মেনে নেয়া কষ্টকর। একদিনের জন্য হলেও পুলিশ যখন ফোন করে বলে 'আপনার ছেলে থানায়' এটা বাবা মায়ের জন্য লজ্জাজনক।


কিশোর বয়সটা এমনই এক সময়, তখন স্বভাব বশত নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ থাকে বেশি। ফ্যান্টাসির জগতে থেকে হিরোইজমের ভাব নিয়ে ভুল পথে চলে যায়। আর এখন তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে সারা দুনিয়া তাদের হাতের মুঠোতে। বয়সের আগেই বাবা মা সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোবাইল ফোন। সাধারণত বলা হয়ে থাকে যোগাযোগ রাখার জন্য এ বয়সের সন্তানকে মোবাইল দেয়া হয়। কিন্তু কজন বাবা মা লক্ষ্য করেন তার ছেলে মোবাইলটি কি কাজে ব্যবহার করছে। সে স্কুল বা কোচিং যাবার নাম করে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যায় ও অপরাধ দমনের নিয়ন্ত্রণকারী। কারো সন্তানকে সুপথ কুপথ চিনিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তাদের নয়। আর সে কারণে ঘরের বাড়ন্ত ছেলে মেয়েকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বাবা মা সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের।


বর্তমান সময়ে 'কিশোর গ্যাং' শব্দটি বিষফোঁড়ার মতো হয়ে আছে সমাজে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত তিন বছরে কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় ৪শ’ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এর মধ্যে চলতি বছর ১৮৫ জন এবং গত দুই বছরে ১৯০ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করে তারা। ঢাকার শিশু আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের নথি অনুযায়ী গত ১৫ বছরে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং কালচার ও সিনিয়র-জুনিয়র ধন্ধে ৮৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।


মূলত এ কিশোর গ্যাং কালচার অপসংস্কৃতির প্রতিফলন। নানা নামে এরা নিজেদের পরিচিত করে তুলে। পাড়া মহল্লার মোড়ে, স্কুল কলেজের সামনে বা পার্কে চলে এদের আড্ডা, নেশা, চাঁদাবাজি, মেয়েদের উত্যক্ত করা, কার বা মোটররেসিংয়ের উগ্রতাতে অতিষ্ঠ হয়ে যায় পথচারীরা। সামাজিক অবস্থানে সব শ্রেণির পরিবারের ছেলেরা থাকে এসব গ্যাংয়ে। কল্পলোকের জগত থেকে এদের কর্মকাণ্ড শুরু হলেও পরবর্তীতে এদের আশ্রয় দাতা হয় রাজনৈতিক ত্রাস হিসাবে পরিচিত এলাকার বড় ভাইরা। যার ছায়াতে তারা নানা অপকর্ম সহ হানাহানি এমনকি খুনের ঘটনাতে জড়িয়ে পড়ে।


এ কিশোর গ্যাং কালচারকে রোধ করতে হলে পরিবারকে সচেতন হবার বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু আজকাল পরিবারে সম্পর্কগুলো অনেক বেশি আলগা। একটি ডিভাইসে সীমাবদ্ধ জীবন। কেউ কারো খবর রাখে না। এছাড়া পারিবারিক জটিলতাতে অনেক ছেলে মেয়ে হতাশা গ্রস্থ হয়ে বিপথে চলে যায়। এ ক্ষেত্রে মা বাবাকে সন্তান নিয়ে ভাবতে হবে।নিজেদের সমস্যার কারণে সন্তান যেন প্রভাবিত না হয় তা উপলব্ধি করতে হবে।


আর স্বাভাবিক পারিবারিক জীবনে সময় আর ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে সন্তানের প্রতি বেখেয়ালি হলে বিপদ আসার সম্ভাবনা থাকবেই। ছেলে বুঝে, একা চলতে জানে এই ভেবে নিশ্চিত না হয়ে তার জগতে কাদের বিচরণ তা জানতে হবে। অধিক শাসন করার আগে বন্ধু হতে হবে বাবা মাকে। তাহলে সে অকারণে মিথ্যা বলবে না। স্কুল কোচিংয়ে খোঁজ রাখতে বাবা মাকে সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎকে চিন্তা করে। সমাজ বা দেশকে নষ্ট হবার জন্য দায়ী করার আগে ভাবতে হবে এর অন্তরালে পরিবার নিজের দায়িত্ব কতটা পালন করছে। কেননা রাষ্ট্র সমাজ থেকে শিক্ষার পাবার আগে; পারিবারিক শিক্ষাটা সন্তানকে সঠিক ভাবে দিলে পুলিশের থেকে শুনতে হবে না, 'আপনার ছেলে থানায়।'


হাসিনা আকতার নিগার
লেখক, কলামিস্ট


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com