শিরোনাম
দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৬
দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ হবে: প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের পর এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেন্টার ফর রিসার্স অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এটা আমার লক্ষ্য আছে। আমি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আভিযান চালিয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এরপর দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' ঘোষণা করা হবে।''


সম্প্রতি রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বিভিন্ন পেশাজীবী, উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীসহ ১৫০ তরুণ-তরুণীর মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠানটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচার করা হয়।


অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মত তরুণদের মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনা দেশ নিয়ে তাদের ভাবনার কথা তিনি শোনেন এবং শোনান। নানা প্রশ্নের উত্তরে উঠে আসে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন আর অতীতের দুঃসহ সব স্মৃতি।



বাংলাদেশ কবে দুর্নীতিমুক্ত হবে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ''আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের আয় উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেখানে দুর্নীতি করার দরকার কী? অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসতে পারলে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব।”


স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পথ কীভাবে বন্ধ হবে, কবে বন্ধ হবে?, এক তরুণের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কারো ভেতরে যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বা দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তারা কখনও দেশের উন্নয়ন করবে না, করতে চাইবেও না। পরাজিত শক্তির দোসর যারা তারা তো দেশকে পিছিয়েই রাখতে চায়। এর ফলাফল আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সাল থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি দাবি করতে পারি, আমরা প্রমাণ করেছি, সরকার জনগণের সেবক। গত ১০ বছর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের চিত্র একবার খুঁজে দেখার চেষ্টা করলে তোমরাই দেখতে পাবে কতোটা এগিয়েছি আমরা। এর একমাত্র কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। আগে যারা ছিল, সেখানে ভেজাল ছিল। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধ শক্তি, মুক্তিযোদ্ধা সব মিলিয়ে এক জগাখিচুড়ি অবস্থা।”



মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে, এটি পুনর্বিবেচনা করবেন কি না- প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান একজন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করা হয়েছে। সে কারণে কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে। অনেকে বলেছে, এই দাবি মেনে নেওয়া মানে হেরে যাওয়া। আমি বলেছি, না হেরে যাওয়া নয়। কেননা বাচ্চারা দাবি করেছে, সেই দাবির প্রেক্ষিতে কোটা বাতিল করা হয়েছে। যারা প্রতিবন্ধী, নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছেন তাদের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে নতুন দিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।”



প্রান্তিক পর্যায়ের উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে চাই। আমরা কাজ করছি। গ্রাম আর গ্রাম থাকবে না, শহরে পরিণত হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ার সময় শহরকেন্দ্রিক বা রাজধানীকেন্দ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় না, বরং দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কথাও ভাবা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। হাওর অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যও কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ নিয়ে যে দীর্ঘ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, আমি হয়ত ততোদিন বাঁচব না। কিন্তু তোমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”


দেশে জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, “আমি চেয়েছি দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। কিন্তু সারা দেশে যখন একযোগে ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়, বোমা পুঁতে রাখা। এ ধরনের কাজ আমি পছন্দ করিনি। আর আমি এর আগে ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করে সেখানকার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে প্রতিবেশী দেশে হামলা করা হত।



তিনি বলেন, “আমি বুঝেছিলাম, জঙ্গিবাদ থাকলে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। বিরোধী দলে থাকি, আর সরকারি দলে; যেটা নীতির ব্যাপার সেটার বিষয়ে সোচ্চার হওয়া শুধু সরকারি দলে আসলেই করব, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় করব না, এমন নয়। আমার দেশকে আমি ভালোবাসি। আর সে কারণেই এ বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদ করেছি।”


শেখ হাসিনা বলেন, “আর আমাকে তো অনেকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। কয়েকবার না অনেকবার। এমনকি সামনে থেকে গুলি করেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে আমাকে। যখন বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছি তখনও বাধা পেয়েছি। কিন্তু একটা বিষয়, এ দেশের মানুষ, যেখানে গিয়েছি সেখানে এতো ভালোবাসা পেয়েছি! এই ভালোবাসা আমার শক্তি। সেটাই আমার প্রেরণা। আজকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এটাও তো বড় বিষয়।”



তরুণদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। আমি দেশের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটা দিতে পারলাম, তা ভাবতে হবে। পরশ্রীকাতরতা থেকে বের হয়ে এসে নিজেকে নিজের বলতে হবে, আমি পারি। আমি আমার মতো করেই ভালো করব। কেউ দ্রুত উপরে উঠে গেল দেখে আমাকে একটা অশুভ প্রতিযোগিতা করতে হবে, সেটা ঠিক নয়। সেই সাথে দেশপ্রেম এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে।”


শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হই তাহলে একটি মানুষও অবহেলিত থাকবে না। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। আর তোমাদের দায়িত্ব নিজের মাঝে সেই ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করে দেশের প্রতি দায়িত্ব, নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব এবং প্রতিবেশী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। আর সব সময় একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চললে দেশকে কিছু দিতে পারবে, নিজেও জীবনে কিছু করতে পারবে। হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। জীবনে অনেক ঝড়-ঝাপ্টা আসবে। কিন্তু ইচ্ছা শক্তি প্রবল থাকলে যে কোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যদি কেউ এগিয়ে যায় তাহলে কোনো বাধাই বাধা বলে মনে হবে না। দেশকে এতো দূর নিয়ে আসতে পেরেছি, তার প্রধান কারণ এই ইচ্ছা শক্তি।”



বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “জাতির জনক বলে গেছেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন। ত্যাগের মধ্য দিয়েই অর্জন করা যায়। আর সৎ থাকতে হবে। যদি সৎ না থাকতাম তাহলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করতে পারতাম না। পদ্মা সেতুর কাজও শুরু করতে পারতাম না। আমার এই একটি সিদ্ধান্ত বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদাকে অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমি তোমাদের কাছে এটাই চাই যে, সেই আত্মমর্যাদা তোমরা ধরে রাখবে। যেখানে আমরা বাংলাদেশকে রেখে যাচ্ছি, তোমরা সেখান থেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাদের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দিচ্ছি কারণ তোমরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।”


বিবার্তা/হাসান/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com