তাবলিগ জামাতের বিভক্তি আর বিরোধের জেরে সহিংসতা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির অনুসারীরা। তাদের অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের ওপর বিরোধীরা হামলা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কার কথা বলেন সা'দপন্থীরা। সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, গত শনিবারের (১ ডিসেম্বর) সংঘর্ষে নিহত ঈসমাইল মণ্ডল ছিলেন সা’দ অনুসারী। মাদ্রাসার ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে হামলা চালানো হয়েছে। আগে থেকে অস্ত্র, বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা। তারা আগে থেকেই রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল প্রতিটি ওজাহাতি জোড়ে। তারা সারা বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।
সংর্ঘষ তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে— এমন আশঙ্কা করে মাওলানা আশরাফ বলেন, ‘সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছিল, যে যার মতো কাজ চালাবে, এক পক্ষ অন্য পক্ষের কাজে বাধা দেবে না। কিন্তু সরকার সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল করার পর থেকে তারা (সা’দবিরোধীরা) মারমুখী হয়ে উঠেছে।’
সেদিনের সংঘর্ষের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সাথীরা সকাল থেকে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। ২৫ নভেম্বর আমরা গাজীপুরের ডিসি ও পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে ৩০ তারিখ জোড় করার ব্যাপারে চিঠি দিয়েছিলাম। সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তারা (সা’দবিরোধীরা) মাঠ প্রস্তুত ও ৭ ডিসেম্বের জোড়ের ঘোষণা দিতে থাকে। আমাদের দাবি ছিল, আমরা যেন মাঠ প্রস্তুত করার ব্যাপারে সমান সুযোগ পাই। তাই আমাদের সাথীরা গত শনিবার (১ ডিসেম্বর) শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে মাঠের চারপাশে বসে ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতা দাবি করছিলাম যাতে তারা (সা’দবিরোধীরা) শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের মাঠে ঢুকতে দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করে। আমাদের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ এবং অহিংস। আমরা টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের আশপাশের কোনও রাস্তা অবরোধ করিনি, বরং যানবাহন যেন স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারে সে জন্য আলাদা জামাত গঠন করা হয়েছিল। আমাদের দাবি প্রশাসনকে জানালে তারা মাঠ খালি করে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রশাসনের সবাইকে অনুরোধ করছিলাম আমাদের যেসব জামাত আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে যাবে তাদের যেন অন্ততপক্ষে মাঠে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু তারা পুলিশকে লক্ষ্য করেও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আমাদের সাথীরা অনেকেই আহত হলে ছাত্রদের ইটপাটকেল বন্ধ করতে ভেতরে ঢুকে পড়ে।’
সংর্ঘষের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান সা’দ অনুসারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন সা’দ অনুসারীরা। দাবিগুলো হলো-
অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত ও বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা; হতাহতদের ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের দায় গ্রহণ; ইজতেমা ময়দান সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দখলমুক্ত করা ও মাদরাসা ছাত্রদের বিরোধে কোনোভাবে ব্যবহার না করা; দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে ওয়াজারহাতি জোড়ের নামে সারাদেশে উসকানিমূলক সভা ও প্রোপাগান্ডা বন্ধ করা; জামাতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগতদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং আগামী ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা যথা সময়ে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সহায়তা করা।
এসব দাবি প্রসঙ্গে মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, ‘তারা (সা’দবিরোধীরা) যদি কোনও সমাধানে না আসেন, আমরা কোনও বিরোধ চাই না। তারা (সা’দবিরোধী) তাদের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করুক, আমরা আমাদের মতো করবো। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেওয়া হোক, যেটি সরকারের পরিপত্রে ঘোষণা করা হয়েছিলো। তারা তাদের পছন্দ মতো সময়ে ইজতেমার করবে, আমরা আমাদের মতো ইজতেমা করবো। আমাদের ইজতেমায় দেশ-বিদেশ থেকে মুরব্বিরা আসবেন, সেক্ষেত্রে তারা যেন বাধা না দেন।’
সংবাদ সম্মেলনে শনিবারের সংঘর্ষে নিহত ঈসমাইল মণ্ডলের ছেলে জাহিদ হাসান উপস্থিত ছিলেন। বাবা হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বি মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ, মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ, মাওলানা আবদুল্লাহ, মাওলানা সাইফুল প্রমুখ।
বিবার্তা/হাসান/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]