শিরোনাম
জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে জিডি, তদন্ত করছে ডিবি
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:০৩
জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে জিডি, তদন্ত করছে ডিবি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সেনাপ্রধানকে নিয়ে মন্তব্যকে ‘অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল’ আখ্যায়িত করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা।


বেসরকারি সময় টেলিভিশনের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওই মন্তব্য করেছিলেন।


সেনা সদরে দায়িত্বরত মেজর এম রকিবুল আলম গত শুক্রবার ক্যান্টনমেন্ট থানায় এসে জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ওই জিডি করেন।


জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্যান্টনমেন্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার বলেন, সেনা সদরে দায়িত্বরত মেজর এম রকিবুল আলম গত শুক্রবার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি–দক্ষিণ) বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।


গত সপ্তাহে সময় টিভির আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পাদকীয়তে আলোচক হিসেবে উপস্থিত জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যখন চট্টগ্রামের জিওসি ছিলেন, সেখান থেকে সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি যাওয়ার ঘটনায় তার কোর্ট মার্শাল হয়েছিল।


এ বিষয়ে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে দুঃখ প্রকাশ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।


জাফরুল্লাহ বলেন, জেনারেল আজিজকে অসাবধানতাবশত কোনো মনঃকষ্ট দিয়ে থাকলে সে জন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ভুল বক্তব্য ও শব্দবিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং মর্মাহত।


সংবাদ সম্মেলনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি ইতিমধ্যে গত দুদিন কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে আমার বক্তব্যে ভুল শব্দচয়ন ও শব্দবিভ্রাটের বিষয়টি প্রকাশ করে সেনাপ্রধানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। চূড়ান্তভাবে ভুল বোঝাবুঝির অবসানকল্পে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।


তিনি বলেন, সময় টেলিভিশনের বিশেষ অনুরোধে শারীরিক দুর্বলতা নিয়েই আমি ৯ অক্টোবর রাত ১০টায় তাদের একটি টকশোতে অংশ নিই। ওই টকশোতে অন্য অতিথিরা ছিলেন সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান ও আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেলিন। আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করার কোনো চিন্তা বা উদ্দেশ্য আমার ছিল না।


জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ‘জিওসি’ ছিলেন না, ‘কমান্ড্যান্ট’ও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের একসময় চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়নি। ভুল বক্তব্য ও শব্দবিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং মর্মাহত।


ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, সেনাবাহিনী বা জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না এবং এরূপ কোনো অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত।


তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কালাতিপাত করেছি, তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হয়েছি এবং যুদ্ধ শেষে আমিই প্রথম কুমিল্লা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি। পরে আমি ও ডা. আজিজুর রহমান ঢাকা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি। আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত।


সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি ভয় পাওয়ার লোক নই। আমি জীবনে ৪৭ বছর অতিরিক্ত বেঁচেছি। আমার কোনো ভয় নেই।


চ্যানেলে দেয়া ডা. জাফরুল্লাহর ওই বক্তব্যের বিষয়ে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে জনাব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য। কারণ বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরিজীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের মে পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং ২০১২ সালের মে থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ, বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরিজীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।


আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, চাকরিরত একজন সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির এরূপ দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা সেনাবাহিনীপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসমক্ষে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত প্রতীয়মান।


আইএসপিআরের বক্তব্যে আরও বলা হয়, ডা. জাফরুল্লাহর দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবল সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ণ করেনি বরং তা সেনাবাহিনীপ্রধানের পদকে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। যা প্রকারান্তরে সেনাবাহিনীর চাকরিরত সব সদস্যকে বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া এরূপ অপপ্রচার সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।


বিবার্তা/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com