শিরোনাম
রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের দাবি
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০১৮, ২০:০৭
রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের দাবি
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা এদেশের বিরোধিতা করেছে, সেই রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ ও তাদের নাগরিক অধিকার সংকোচনের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।


শুক্রবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রজন্ম চত্বরে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সংগঠন গৌরব’৭১ এ সমাবেশের আয়োজন করে।


সমাবেশে প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে ৪টি দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো-


১. যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব বাতিল ও তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।


২. ভিয়েতনামের মত দেশদ্রোহীদের অধিকার সংকুচিত আইন জারি করতে হবে।


৩. প্রশাসনে রাজাকারদের বংশধরদের অনুপ্রবেশ আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।


৪. যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া যাবে না।



সমাবেশে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ও জাতীয় সংসদ সদস্য হাজেরা সুলতানা এমপি, ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ ইয়াসিন আলী এমপি, আওয়ামী লীগের শিক্ষা উপ-কমিটির সদস্য নুরজাহান আক্তার সবুজা, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, কবি ও লেখক আসলাম সানি, নারীনেত্রী মাসুদা খানম মেধাসহ আরো অনেকে বক্তব্য দেন।


সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গৌরব’৭১ এর সভাপতি এস এম মনিরুল ইসলাম মনি এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন।


সমাবেশে বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, আজকে এদেশের মানুষ দুইভাগে বিভক্ত। এদের একপক্ষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আরেক পক্ষ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা এখন পর্যন্ত এদেশকে মেনে নিতে পারেনি। তারা যেকোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।


তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজাকারদের বাড়িগুলোতে আলাদা রং দেয়া উচিত। যাতে সাধারণ মানুষ সেই রং দেখে তাদের দিকে ঘৃণার চোখে তাকায়। রাজাকারদের প্রতি মানুষের ঘৃণা বাড়াতে ঘৃণাস্তম্ভ তৈরিরও পরামর্শ দেন তিনি।


সমাবেশে হাজেরা সুলতানা এমপি বলেন, আজকে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আমরা রাজাকারদের নিয়ে কথা বলছি। তাহলে এতোবছর আমরা কী করেছি? জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী গোলাম আযমদের এদেশে এনেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। এমনকি তাদের এমপি-মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছেন। আর এসব কারণে এখনো এদেশে রাজাকাররা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি রাজাকারদের সন্তানরা আজকে এদেশের বিরুদ্ধে লেগেছে।



তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে রাজাকারদের সন্তানরা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করেছে। কোমলমতি শিশুদের আন্দোলনেও গুজব ছড়িয়ে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছিল রাজাকারের দোসররা।


তিনি আরো বলেন, আমাদের সচেতন থাকতে হবে, যাতে রাজাকারের দোসররা এদেশের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও তাদের নাগরিক অধিকার সংকোচনের বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন বলে জানান এই এমপি।


ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, অনেকে বলেন রাজাকারদের বংশধররা কেন তাদের পূর্ব পুরুষের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পাবে? আমি বলতে চাই, আপনারা দেখেন, এদেশ বিরোধী যেকোনো চক্রান্তে রাজাকারের দোসরদের যোগসূত্র রয়েছে। এরাই হচ্ছে নব্য রাজাকার। ‘সাপের বাচ্চা সাপ’ হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


তিনি বলেন, ভিয়েতনাম যদি রাজাকারদের অধিকার সংকুচিত করতে পারে, তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ কেন রাজাকারদের অধিকার সংকুচিত করতে পারবে না?


জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ ইয়াসিন আলী এমপি বলেন, আজকে গৌরব’৭১ সংগঠন যে দুটি দাবি নিয়ে সমাবেশ করেছে, সেই দাবিগুলোর সাথে একাত্মতা জানিয়ে বলতে চাই, এগুলো সময়ের দাবি। যেদেশে দীর্ঘ সময় পরেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে, সেদেশে রাজাকারদের তালিকা করা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। আর এ তালিকা করা গেলে বোঝা যাবে কারা এদেশের বন্ধু আর কারা শত্রু।


তিনি বলেন, আজকে শিশু-কিশোরদের নিরাপদ সড়কের যৌক্তিক আন্দোলনেও রাজাকারের দোসররা ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। রাজাকারের তালিকা করে এদের চেহারা প্রকাশ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।


সমাবেশের সঞ্চালক ও গৌরব’৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন বলেন, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হলে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা অতীব জরুরি।



কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে শাহীন বলেন, আপনারা দেশপ্রেমিক হলে আপনাদের এলাকার রাজাকারের তালিকা করে দেশপ্রেমের পরিচয় দিন।


বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীকে কানাডা থেকে ফেরত আনতে গৌরব’৭১ এর উদ্যাগে ১ কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠানো হবে বলেও জানান এ সংগঠক।


সমাবেশে বিবার্তা২৪ডটনেট-এর সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসিসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/রাসেল/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com