শিরোনাম
বাজেট ২০১৮-১৯ : আবারও উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্য
প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৮, ১৯:৩৯
বাজেট ২০১৮-১৯ : আবারও উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্য
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

ত্বরান্বিত হচ্ছে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বাড়ছে অনুন্নয়ন ব্যয়। সবদিক সামাল দিতে দরকার অর্থ। আর সেই অর্থের বড় অংশই করের মাধ্যমে যোগান দেয় জনগণ। বেশ কয়েক বছর ধরেই সার্বিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎসে নির্ভরতা বাড়িয়েছে সরকার। তাই রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দেয়া হয় বড় অংকের লক্ষ্য।


কিন্তু রাজস্ব আদায়ে অনেকটাই পিছিয়ে সরকার। বাজেটে বড় অংকের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ঠিকই, কিন্তু বছর শেষে আদায় চিত্র হতাশাজনক। বাস্তবায়ন-অদক্ষতায় চলতি বছর লক্ষ্য থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। তারপরও আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারণ হচ্ছে উচ্চভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্য, যার সম্ভাব্য আকার তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের এই মেয়াদের শেষ বাজেটে কমানো হচ্ছে কর্পোরেট কর হার, বাড়ছে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা। পরিহার করা হবে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির দ্বৈত করহার।


কতো হচ্ছে রাজস্ব বাজেট?


২০১৮-১৯ অর্থবছরের মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা বা বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে চার লাখ ৬৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে রাজস্ব ব্যয়ের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআরের কর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৭ শতাংশ।


চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১.৬ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআর কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা হলো দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১০ দশমিক ১ শতাংশ।


নতুন বাজেটে যা থাকছে


অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে চায় সরকার। তাই কমতে পারে কর্পোরেট করহার। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কর্পোরেট করহার সহনীয় করার ক্ষেত্রে হিসেব-নিকাশ করছে এনবিআর। এছাড়া সাবসিডিয়ারি কম্পানির দ্বৈত কর পরিহার করা হতে পারে।


সরকারের এই মেয়াদের এটাই শেষ বাজেট, তাই এবছর নতুন করে কোনো কিছুতে কর বসাতে চায় না সরকার। ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর জোর দাবি তৈরী হয়েছে। এখন বছরে আড়াই লাখ টাকা আয় করলে কর দিতে হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা হতে পারে তিন লাখ টাকা।


অন্যদিকে, ভ্যাট অনলাইন বিধিমালা সংশোধন করার উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর। সিগিারেটের সম্পূরক শুল্ককর হার বাড়ানো হতে পারে। পাশাপাশি বিড়ির ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বাতিল করে সিগারেটের মতো সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় আমদানি শুল্ক সহনীয় করার উপায় খুঁজে বের করছে সরকার।


এনবিআরের আদায় পরিস্থিতি


চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। তবে আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক না হওয়ায় কাটছাঁট করে লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে আনা হয় দুই লাখ ২৫ হাজার ১ কোটিতে। গেল ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে এক লাখ ২১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থ বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারী প্রান্তিকে পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় এনবিআর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। তার মধ্যে আয়কর ও মূল্য সংযোজন করের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৭ ও ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ।


কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি


কর রাজস্ব আহরণে তৈরী হয়েছে মিশ্র প্রবৃদ্ধি। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরে রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআর কর রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তথ্য বলছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে কর রাজস্ব আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়। সেবার ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করে সরকার। কিন্তু পরের বছর ২০১২-১৩ বছরে সাত ভাগ করে কর রাজস্ব প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ১২ দশমিক ৮-এ। তার পরের বছরের চিত্র ছিল আরও হতাশাজনক, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয় আট শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কর রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয় ১১ শতাংশ। পরের বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কর আহরণ প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসময় এনবিআর কর রাজস্ব আহরণে গড় প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ, আয়কর প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর, ভ্যাটে প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ, আমদানি শুল্কে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সম্পূরক শুল্কে গড় প্রবৃদ্ধি হয় ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ।


বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করকাঠামো ঢেলে সাজানো দরকার।


এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবছরই বড় লক্ষ্য ধরা হচ্ছে, কিন্তু বছর শেষে সেই লক্ষ্য আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে অটোমেশন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পাশিাপাশি নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০১৯ সাল থেকে নতুন আইন কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কাছে ইসিআর মেশিন সরবরাহ করতে হবে।


তিনি আরও বলেন, অনেকেই সরকারের নজরের বাইরে আছে, করসক্ষম ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে হবে।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com