শিরোনাম
অভিযানের এক বছর : কেমন আছে সেই আতিয়া মহল
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০১৮, ১৫:৩৬
অভিযানের এক বছর : কেমন আছে সেই আতিয়া মহল
সংস্কারের পর আতিয়া মহল, এ মহলের পাঁচতলায় ছিল জঙ্গীরা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

সিলেটের আতিয়া মহলে গত বছর ২৪ মার্চ জঙ্গি অভিযান শুরু করেছিল পুলিশ। টানা ৫ দিন চলা ওই অভিযানে সেনাবাহিনীরা পর্যন্ত অংশ নেয়। অভিযান শেষে ওই ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু এক বছর পার হলেও মামলা দু’টির তেমন অগ্রগতি হয়নি।


জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি নামক স্থানে আতিয়া মহল নামের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলে। পরে পুলিশ ওই বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে সোয়াত টিমের সদস্যরা সেখানে গিয়ে অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। 'অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলা অভিযানে একজন নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়।


একই রাতে আতিয়ার মহলের জঙ্গি আস্তানা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গোটাটিকর নামক স্থানে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয় জন নিহত হন। আহত হয়েছিলেন র‌্যাবে গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ। পরে ওই রাতে তাকে হেলিকপ্টারে সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। পরদিন সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছিল।


পরে আতিয়া মহলে অভিযান এবং বোমা বিস্ফোরণে নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এক পর্যায়ে মামলা দুটির তদন্ত পুলিশ শুরু করে। পরে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে। কিন্তু এরপর বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, মামলা দুটির বেশ কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে উচ্চমহলের নির্দেশে তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।



পরে মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে যোগাযোগ করা হয় সিলেটে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল করিম মল্লিকের সাথে। এ সময় তিনি জানান, গত বছরের মে মাসে মামলা দুটির তদন্তভার তাদের হাতে যায়। ইতোমধ্যে আতিয়া মহলের নিহত চারজনের মধ্যে একজনের ডিএনএ পরীক্ষা করে পরিচয় সনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও আতিয়া মহলে প্রাপ্ত বিস্ফোরকের রাসায়নিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এগুলো শক্তিশালী বিস্ফোরক ছিল। এখনও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। খুব শিগগির তদন্ত শেষ হবে।


এদিকে, অভিযান চলাকালে ওই ভবনের সকাল ভাড়াটিয়াকে নিরাপদ স্থলে নিয়ে গিয়েছিল সেনাবাহিনী। পরে দীর্ঘ ১০ মাস ওই ভবনে কোনো ভাড়াটিয়া অবস্থান করেনি। তবে ভবনটি মেরামতের পর ভাড়াটিয়ারা বসবাস করা শুরু করেছেন।


সিলেটের স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম কামাল সরেজমিন আতিয়া মহল ঘুরে বিবার্তাকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।


তিনি জানান, অভিযানের সময় ভবনটির দেয়াল, দরজা, জানাল সব গুড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর ভবনটি পরিত্যক্ত করা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে ভবনটির মালিক উস্তার আলী সংস্কার কাজ করান এবং ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেয়া শুরু করেন। তবে ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাট ভাড়া নিলেও যে ফ্ল্যাটে জঙ্গিরা অবস্থান করেছিলো সেই ফ্ল্যাট কেউ ভাড়া নিচ্ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেছে একটি পরিবার।


ওই ফ্লাটের বাসিন্দা নুরজাহান বেগমের বরাত দিয়ে কামাল জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওই ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেছেন নুরজাহান। তার গ্রামের বাড়ি রাখালগঞ্জে। প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা ভাড়ায় দুই মেয়ে ও তিন নাতনি নিয়ে বসবাস করছেন নুরজাহান।


সাংবাদিক কামাল আরো জানান, নির্ভয়েই ওই ফ্ল্যাটে নুরজাহান বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছেন।


এছাড়াও ভবনটির মালিক উস্তার আলীর বরাত দিয়ে কামাল জানান, প্রথম প্রথম আতিয়া মহলের ভাড়টিয়াদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করত। কিন্তু এখন আর সেই আতঙ্ক নেই।


তিনি আরো জানান, আতিয়া মহলের পাঁচতলা ভবনে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় ২৮টি পরিবার বসবাস করতো। সেই পরিবারগুলোর মধ্যে চারটি পরিবার এখনও রয়ে গেছে। বাকিরা বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন। তবে অন্য ফ্ল্যাটগুলোতে নতুন ভাড়াটিয়া ওঠেছেন, দুটি ফ্ল্যাট খালি আছে।


বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com