শিরোনাম
উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা: চ্যালেঞ্জ অর্থনীতির ভিত মজবুত করা
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০১৮, ১৭:২৫
উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা: চ্যালেঞ্জ অর্থনীতির ভিত মজবুত করা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিপত্র পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে জাতিসংঘের বিবেচনায় উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।


জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) উন্নয়ন নীতিবিষয়ক কমিটি (সিডিপি) শুক্রবার বাংলাদেশের এ যোগ্যতা নিশ্চিত করেছে।


সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ হবে বাংলাদেশ।


তবে নতুন এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কেননা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাণিজ্য ও বৈদেশিক ঋণে যেসব বাড়তি সুযোগ রয়েছে, সেগুলোর সবকিছু থাকবে না। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে মানুষের জীবনমানের ক্রমাগত উন্নতি করা সম্ভব।


বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন যেভাবে আছে, তার কোনো বড় ধরনের ব্যত্যয় না ঘটলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাবে।


উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ কি হবে, জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘এর আগে বহু দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্য বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা - এ তিনটি সূচকেই যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ, যা এর আগে অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে ঘটেনি। তবে উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে বাণিজ্যে যে অগ্রাধিকার পায় তার সবটুকু পাবে না। আবার বৈদেশিক অনুদান, কম সুদের ঋণও কমে আসবে।’’


তিনি বলেন, ‘‘এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ আঞ্চলিক বা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অধীনে বিভিন্ন দেশে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি সুবিধা পায়। এর সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) আওতায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক দেশ আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। আবার এলডিসি হিসেবে ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান থেকে আমাদের অব্যাহতি রয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। এলডিসি না থাকলে তখন সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে কি সেটা একটা প্রশ্ন। যেমন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন যে জিএসপি দেয়, তা ২০২৭ সাল পর্যন্ত থাকবে। এরপর জিএসপি প্লাস পাওয়ার কথা রয়েছে।’’


ড. জাহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। মাথাপিছু আয়ের বিবেচনায় এ শ্রেণীকরণ করে বিশ্বব্যাংক। জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত (এলডিসি), উন্নয়নশীল এবং উন্নত - এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করে। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে এলডিসি পর্যায়ে রয়েছে।


পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘উত্তরণের সব পর্যায়েই কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। এগুলো মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটার তিন বছর পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বর্তমান জিএসপি সুবিধা থাকবে না। উন্নয়নশীল দেশগুলো ইইউতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পায়। বাংলাদেশকে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এলডিসি না থাকলে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশেও অনেক ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। এজন্য বিমসটেক, বিবিআইএনের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগের সুবিধা কীভাবে কার্যকরভাবে নেয়া যায় তার প্রস্তুতি থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। কেননা শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকলে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। পাশাপাশি আমাদের যেসব ইনস্টিটিউশন এখনো দুর্বল, সেগুলোকে আরো উন্নত করতে হবে - সেটা অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউশনই হোক আর রাজনৈতিক ইনস্টিটিউশনই হোক।’’


বাংলাদেশ ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ উদ্যোগের আওতায় পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার, পরিবেশ ও সুশাসন বিষয়ে ইইউর নিয়ম-কানুনের শর্ত পূরণ করলে জিএসপি প্লাস নামে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা পাবে বলে জানান ড. মনসুর। সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com