কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি, দুর্গম এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১৬
কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি, দুর্গম এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফেনীতে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে হলেও বন্যার পানি সরছে ধীরগতিতে। এই তিন জেলায় বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় সুপেয় পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। নৌযানের অভাবে স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে পারছেন না।


সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রবিবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অন্যদিকে নোয়াখালী থেকে রহমতখালী খাল হয়ে বন্যার পানি ঢুকছে লক্ষ্মীপুরে। এতে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় সাত লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকার প্রায় ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। অন্যদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছে। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।


লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলায় বর্তমানে ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।


এদিকে, ফেনী ও নোয়াখালীর দুর্গম এলাকার পানিবন্দি মানুষেরা ত্রাণের অভাবে কষ্টে আছেন। অনেক এলাকায় নৌযান সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে আটকে পড়াদের উদ্ধার অভিযান। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির জন্য বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের হাহাকার। শহরের আশপাশে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হলেও প্রত্যন্ত এলাকায় ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণ। মূলত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও নৌযানের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের অভাব তেমন না থাকলেও বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট রয়েছে।


এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নোয়াখালীতে  নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খুলনার বটিয়াঘাটায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে যশোর শহর। কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ও পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ কমপক্ষে আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।


উজান থেকে আসা পানির চাপ বাড়তে থাকার পাশাপাশি নতুন করে বৃষ্টির ফলে নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই বন্যার পানি বেড়েছে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়েছে সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায়। এসব উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।


নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নে বন্যার পানিতে ডুবে মো. আবদুর রহমান (২) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় বন্যায় পাঁচজনের মৃত্যু হলো।


নোয়াখালী জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার সকাল নয়টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মাইজদীতে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও বৃষ্টি হতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।


সেনবাগ উপজেলার উত্তর কাদরা গ্রামের ওছমান গণি বলেন, তাঁদের বাড়ির কাছে কাদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাশের একটি মাদ্রাসায় ৫০০ বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এত দিন চাঁদা তুলে তাদের দুই বেলা খাবার দিয়েছেন। আর খাবার দেওয়ার মতো টাকাও তাঁদের কাছে নেই। ওই এলাকায় দ্রুত ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।


বন্যা ও বৃষ্টির পানির চাপে গতকাল সকালে ধসে পড়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর স্লুইসগেট (রেগুলেটর)। পানি উন্নয়ন বোর্ড, নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির ফয়সাল বলেন, উজান থেকে ধেয়ে আসা পানি ও অতিবৃষ্টির চাপ নিতে না পারার কারণে স্লুইসগেটটি ভেঙে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা ধারণা করছেন। এর ফলে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, ফেনী সদর, দাগনভূঞা, সোনাগাজীর একাংশ এবং নোয়াখালীর সেনবাগ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একাংশে জমে থাকা বন্যার পানি দ্রুত নামতে পারবে। পাশাপাশি সাগরে যখন বেশি জোয়ার হবে, তখন লোনা পানিতে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হতে পারে।


এবার বন্যায় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়েছে ফেনীতে। এখানকার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী—এ ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত।


স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি কমছে ধীরে ধীরে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয়টি উপজেলার প্রত্যন্ত ও দুর্গম গ্রামগুলোয় পানি ও খাবারের সংকট রয়েছে। বিশেষ করে কহুয়া, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদী–লাগোয়া গ্রামগুলোয় ঢুকতেই পারছেন না স্বেচ্ছাসেবকেরা। ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা ঢলে এ তিন নদীর পানি গত কয়েক দিন বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গ্রামগুলোর দোতলা ভবন পর্যন্ত ডুবে গেছে।


চট্টগ্রাম থেকে ত্রাণ নিয়ে গতকাল ফেনী গিয়েছিলেন একদল স্বেচ্ছাসেবক। তাঁদের একজন নাফিজ উদ্দিন জানান, তাঁরা ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার নিয়ে গেছেন। কিন্তু নৌকা না পাওয়ায় দুর্গম গ্রামে যেতে পারেননি। তাই হেঁটে যত দূর যেতে পেরেছেন, সেখানেই ত্রাণ বিতরণ করেছেন।


গতকাল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুহুরী সেতুতে দাঁড়িয়ে ত্রাণবাহী ট্রাক থামানোর চেষ্টা করছিলেন লস্করহাটের শোয়াব মিয়া। তিনি বলেন, পানি বেশি হওয়ায় তাঁদের গ্রামে কেউ ত্রাণ নিয়ে যায়নি। বিশুদ্ধ পানি আর খাবারের জন্য মানুষ হাহাকার করছে।


শোয়াব মিয়া জানান, গত বুধবার বিকেলে পানিতে তলিয়ে যায় পুরো গ্রাম। আটকে পড়ে শ খানেক মানুষ। ছোট দোতলা একটি ভবনের ছাদে তাঁরা ১৮ জন আশ্রয় নেন। গত রোববার তিনিসহ গ্রামের আরও চারজন খাবারের খোঁজে বের হন। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় মুড়ি, চিড়া, মোমবাতি, পানির ২০টি প্যাকেট নিয়ে গেছেন।


ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও থেকে পাঁচজনের একটি দল ত্রাণের জন্য মহিপাল শহরে দুই দিন ঘুরেছেন। তাঁদের একজন আবদুল আল আজাদ বলেন, তাঁদের গ্রামে পানি অনেক বেশি ছিল। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কেউ বের হতে পারেননি। সেখানে ত্রাণ নিয়েও কেউ যাননি। পানি কমে যাওয়ার পর খাবার খুঁজতে তাঁরা বের হন।


সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী রেগুলেটরের ৮ ও ১২ নম্বর গেটের দুটি দরজা উজানের পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। আরও আটটি দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝুলছে। গতকাল দুপুরে পুলিশ মুহুরী প্রকল্প এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একজনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে।


বন্যায় জেলায় আট লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। তিনি বলেন, দেড় লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ১ হাজার ৩০০ টন চাল দেওয়া হয়েছে।


কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকেও একটু একটু করে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহিম জানান, যেখান থেকে যে তথ্য পাচ্ছেন সেভাবে বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।


চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায়ও পানি কমেছে। ফটিকছড়ির আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষজন বাড়িতে ফিরে গেছে। তবে পানি জমে থাকায় হাটহাজারীর কয়েক শ মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি।


ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, তাঁর উপজেলায় সাড়ে সাত হাজার কাঁচা বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৬০০ বসতঘর। সড়ক–মহাসড়কেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়। রাউজানের ইউএনও অংগ্যজাই মারমা বলেন, তাঁর উপজেলায় বাড়িঘরের চেয়ে সড়কের ক্ষতি হয়েছে বেশি।


যশোর অফিস জানায়, ২২৮ মিলিমিটার ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে যশোর শহরের রাস্তাঘাট, নিচু অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়েছে পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। তাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত নালা না থাকা, বিদ্যমান নালার অচলাবস্থা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পৌরসভার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, রবিবার রাত ১০টা থেকে ভারীবর্ষণ শুরু হয়। চলে সোমবার বেলা ১০টা পর্যন্ত। ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) চাঁচড়ার গ্রিড ফেলের সঙ্গে চাঁচড়া উপকেন্দ্রে পানি ওঠায় বন্ধ করা হয় বিদ্যুত্-সংযোগ। ফলে সোমবার ভোর ৪টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় ছিলেন শহরের ৫৫ হাজার গ্রাহক।


বটিয়াঘাটা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ভগবতীপুর গ্রামে পান্নি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে সোমবার রাতে গ্রামে পানি প্রবেশ করে। সকালে কয়েক গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধের কাজ শুরু করেন। তারা সমস্ত দিন কাজ করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনলেও যে কোনো মুহূর্তে বাঁধটি আবার ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে এমন আশঙ্কা গ্রামবাসীর। বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং গ্রামবাসী বাঁধ মেরামতে কাজ করছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত বাঁধ মেরামত হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।


কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে পানি নিষ্কাশন রেগুলেটর ভেঙে পড়েছে। এতে আশপাশের ব্যাপক ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গবাদি পশু মুহূর্তে পানির নিচে তলিয়ে যায়। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ৮০টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আমির ফয়সাল বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর পানির নিচে তলিয়ে গেলেও বন্যার পানি নিষ্কাশনে কোনে বাধা সৃষ্টি হবে না।


মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি নেমে গেলেও দেখা যাচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো অবস্থান করছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এদিকে মিরসরাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিডিএসপির (চর ডেভেলমমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট)  বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, বন্যার পানির চাপে নয়, কেউ অসাধু উদ্দেশে সিডিএসপি বাঁধ কেটে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড শুরু করেছে, দুই মাস সময় লাগবে পুরোপুরি মেরামতে।


চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, শাহারাস্তি উপজেলায় উজানের পানিতে গত দুই দিনে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার। উপজেলার সুচিপাড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িঘর পানির নিচে এবং রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।


চাটখিল ও সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টির কারণে নোয়াখালীর চাটখিলের ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। উপজেলার ৪০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং ৯০ ভাগ মাছের প্রজেক্ট ভেসে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ হাজারের অধিক  মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।


এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। আখাউড়ায় বন্যার পানি বাড়িঘর ও সড়ক থেকে পুরোপুরি নেমে গেছে। কসবাতেও পানি নামা শেষের পথে। তবে বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। গাজীর বাজার এলাকায় সেতু ভাঙার কারণে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ।


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১টি জেলায় ৭৪টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। এখন পর্যন্ত ২৩ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে দুজন নিখোঁজ আছেন। মোট ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩৪টি। এগুলোতে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। কুমিল্লা জিওসির তথ্য অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার সব উপজেলায় সড়কপথে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল ২০ হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার কথা ছিল। যার মধ্যে আট হাজার প্যাকেট হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বিতরণের কথা।


ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকেরা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে প্রচুর মেঘ তৈরি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু দ্রুত শক্তি অর্জন করছে। ফেনী–কুমিল্লার পর এবার দেশের উপকূলের অন্য তিন এলাকা চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ দেশের উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে নদ–নদীর পানি বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপ ও নিচু এলাকায় জলোচ্ছ্বাস এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com