
আগামীকালের মধ্যেই নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
৩০ জুলাই, মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে নিষিদ্ধ করা নিয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হবে আজকের মধ্যে।
মন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হবে না। আদালত নয়, কোন দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার। বলেন, এর আগে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছিল সেটা সঠিক আছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে দেশে ধ্বংসাত্মক কাজ বন্ধ হবে বলেও উল্লেখ করেন আনিসুল হক।
এর আগে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে গণভবনে মহাজোটের প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে একমত হয়। এসময় সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করা হয়।
১৪-দলীয় জোটের গতকালের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে যে নাশকতা, আগুন দেয়ার ঘটনা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে, এর পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তারাই এসব অপকর্ম করেছে।
জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলে ধরেন। এ সময় কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায় দাঁড়িয়ে এ প্রস্তাব সমর্থন করেন এবং উপস্থিত ১৪ দল নেতারা এতে সমর্থন করলে হাত তুলে জানানোর আহ্বান জানান। বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলের সব নেতাই দুই হাত তুলে এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
এর আগে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী তাঁর দলের পক্ষে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট এবং ২০১৩ সালে এ-সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের আংশিক রায় ও ২০২৩ সালে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কথা তুলে ধরেন।
১৪ দল নেতাদের ঐকমত্য পোষণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে বলেন, তিনিও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। দু-এক দিনের মধ্যে সরকারের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসবে। আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায়ের পরই এই অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধের সুযোগ ছিল। তখনই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে আজ এতগুলো লাশ দেখতে হতো না।
বৈঠক শেষে গণভবনের ফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবিরোধী নৈরাজ্য, অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সুযোগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট ১৪ দল।
তিনি বলেন, ১৪ দলের এ সিদ্ধান্ত সরকার বাস্তবায়ন করবে। বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সূচনা বক্তব্যের পর তাঁর সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়ে রাত প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলা এ বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা কোটা আন্দোলনে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য’ সৃষ্টির বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]