'কোটাবিরোধীদের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা নৃশংস হামলা চালিয়েছে'
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ২২:১৩
'কোটাবিরোধীদের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা নৃশংস হামলা চালিয়েছে'
সোহেল আহমেদ
প্রিন্ট অ-অ+

ধানমন্ডিতে কোটাবিরোধীদের সাথে সংঘর্ষে গত ১৯ জুলাই গুরুতর আহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এইচ এম মিজানুর রহমান জনী। তিনি মারা গেছেন, এমন খবর শুনে লাশ খুঁজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছুটে গিয়েছিলেন স্বজনরা। ভাগ্যক্রমে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরেন তিনি। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগে।


এইচএম মিজানুর রহমান জনী বিবার্তাকে বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলের সাথে নেত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ধানমন্ডি ৩-এ সভানেত্রীর কার্যালয় খালি এ খবর জেনে তারা (বিএনপি-জামায়াত) যখন আসছিলো, তখন আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি। তখনই আমার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওদের কাছে আর্মস, রামদা ছিল। ৫০ থেকে ৭০ জন মিলে হামলা করে।


তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারের পেছনে থেকে তারা ১০-১৫ দিন আগে থেকে এ কাজ শুরু করে। এটি ছিল তারই প্রতিফলন। আসলে ওরা একটা ব্লুপ্রিন্ট করেই মাঠে নেমেছে, যে সারা বাংলাদেশে ব্যাপক ভাঙচুর করে এ দেশকে কীভাবে পিছিয়ে জঙ্গি ভাবধারার রাষ্ট্র করা যায়।


অগ্নিসন্ত্রাস ও মৌলবাদীদের মূলোৎপাটন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা করে মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সারাবিশ্বে আধুনিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে- এটাই আমার প্রত্যাশা।


জুলাই মাসের শুরুতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল কোটাবিরোধীরা। গত ১৬ জুলাই সেই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। দেশজুড়ে চলা এই সহিংস ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ১২ নেতা-কর্মী। আর আহত হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সহস্রাধিক।


গুরুতর আহতদের আরেকজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মাসুদ। রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা দিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য ১৮ জুলাই শাহবাগে যাচ্ছিলেন তিনি। মোটরসাইকেলে যোগে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে আসলে তাকে পেছন থেকে ধাওয়া দিয়ে উপর্যুপরি হামলা চালায় কোটাবিরোধীরা। পরে মৃত ভেবে তাকে ফেলে চলে যায়। দশদিন আগে আহত হওয়া মাসুদ এখনো স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। বর্তমানে তিনি বিএমএসএসইউ’তে চিকিৎসাধীন আছেন।


তার সাথে হাসপাতালে থাকা মাসুদ রানা বিবার্তাকে বলেন, কর্ণফুলী গার্ডেনের সামনে আসার পর পেছনে থেকে ধাওয়া করে বিএনপি-জামায়াত হামলা করেছে। তিনি যে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন সেটি পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এরপর লাঠি, দেশীয় অস্ত্রসহ তার ওপর উপর্যুপরি হামলা হয়। তিনি মৃত ভেবে তারা চলে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারা জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। এরপর সেই জায়গা থেকে এখানে এসেছেন।


তিনি বলেন, পা থেকে শুরু করে শরীরের বাম পাশ পুরোটা রক্ত জমে আছে। শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে জয়েন্ট তারা মেরেছে। মাথায় ২৭টি সেলাই দিতে হয়েছে। তিনি কথাও বলতে পারছেন না।


কেবল রাজধানী ঢাকা নয়, কোটা আন্দোলনে দেশের নানা প্রান্তে সহিংসতায় আহত হয়েছেন হাজারো নেতাকর্মী। চট্টগ্রামের একটি পাঁচতলা ভবন থেকে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসেনকে ফেলে দিয়েছিল কোটাবিরোধীরা। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং তার কোমরের হাড় ভেঙ্গে গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল ঘুরে বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। ডাক্তার বলেছেন, অন্তত তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হবে। শরীরের অবস্থা কেমন জানতে চাইলে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি।


তার সাথে হাসপাতালে ছিলেন তার চাচা মাওলানা রুবেল আলম সিদ্দিকি। তিনি বিবার্তাকে বলেন, ইকবাল চট্টগ্রাম কলেজের ইতিহাস বিভাগ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক। কোটা আন্দোলনের সময় মুরাদনগরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিরোধে মাঠে নেমেছিল। একপর্যায়ে কোটা আন্দোলনকারীরা তাদের ঘিরে ফেলেছিল। পরে তারা একটি বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে লক করে দিয়েছিল। কিন্তু লক ভাঙি, তালা ভাঙি যে যেভাবে পেরেছে মেরে তাদেরকে নিচে ফেলে দিয়েছে। আমার ছেলেকেও ফেলে দিয়েছে।


তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছে অপারেশন সাকসেসফুল। তবে তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। তিন মাস পর্যবেক্ষণে থাকতে বলেছে।


কোটা বিরোধীদের হাত থেকে নেতা-কর্মীদের বাঁচাতে গিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক শীল। নেতা-কর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে নিজেই হয়েছেন হামলার শিকার। সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে থেতলে দিয়েছে তার মাথা। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।


মানিক শীল বিবার্তাকে বলেন, গত ১৮ তারিখে সারাদেশব্যাপী কমপ্লিট শাটডাউন ছিল। আমি টাঙ্গাইল পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ছিলাম। এসময় খবর পাই কোটা আন্দোলনকারীরা ছেলেদেরে ধাওয়া দিচ্ছে। সাধারণ লোকজন দোকানপাট খুলতে পারছে না। এখবর পেয়ে আমরা এগিয়ে যাই। যাওয়ার পর দেখি ওরা আমাদের দিকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসছে।


তিনি বলেন, পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলে ওখানে কি হচ্ছে দেখার জন্য আমরা ৩-৪ জন অবস্থান করি। ওদের হাতে রড, পাইপ ছিল। একপর্যায়ে তারা এসে আমাদের আঘাত করে। ডান হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। তারা যতক্ষণ না বুঝেছে আমি মারা গেছি ততক্ষণ আমাকে মেরেছে। পরে ছেলেরা এসে আমাকে উদ্ধার করে।


মানিক শীল বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমনভাবে সাধারণ মানুষের ওপর আঘাত করতে পারে না। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে ছাত্রদল, শিবিরসহ অন্যরা যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারা আছে। যারা (হামলায়) ছিল, তারাই আঘাত করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এভাবে কাউকে আঘাত করতে পারে না।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com