সরকারের ভুল নীতির কারণে বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে: সিপিডি
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ২০:৩০
সরকারের ভুল নীতির কারণে বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে: সিপিডি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভুল নীতির কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে বলে মন্তব্য করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দায় চাপিয়ে দিচ্ছে জনগণের ওপর। অথচ সরকার চাইলে বিকল্প ছিল। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই সমন্বয় নয়। এটি ভোক্তার ওপর সরাসরি বাড়তি দাম চাপানো। দাম বৃদ্ধি না করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) সমন্বয় করা দরকার।


১৩ মার্চ, বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলন করে এমন কথা বলেছে বেসরকারি নীতি-গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি: ভর্তুকি সমন্বয়ের অন্য বিকল্প আছে কী?’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি এমন মন্তব্য করে।


সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির গবেষকেরা বলেন, দ্রব্যমূল্যের উচ্চগতির কারণে মানুষ কষ্টে আছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি না করে লোকসান কমানো যেতো, সেটা সরকার করেনি।


গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার প্রেক্ষিতে ‘সাম্প্রতিক বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ভর্তুকি সমন্বয়ের অন্য বিকল্প আছে কি’ এ নিয়ে সিপিডির সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানাতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।


লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ শর্ত মেনে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য সমন্বয় চালু করা হয়েছে। আইএমএফের আরেকটি শর্ত ছিল বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভর্তুকি সমন্বয় করা। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভর্তুকি সমন্বয় করা হবে আগামী ৩ বছরে ধাপে ধাপে। আইএমএফের শর্ত পূরণে বিদ্যুতের দাম গত বছর ৩ দফায় ৫ শতাংশ করে দাম বাড়ানো হয়েছে। গত মাসে ১ দফায় বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। কিন্তু এভাবে পুরোটা ভোক্তার ওপর না চাপিয়ে খরচ কমাতে পারে সরকার।


লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যখন দাম বাড়াতো তখন ভোক্তার এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল। এতে সরকারি সংস্থার আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হতো। সরকার ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আইন সংশোধন করে দাম সমন্বয়ের ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেয়, এতে নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধি করায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে না। এটি আবার বিইআরসির হাতে ফিরিয়ে দেয়া উচিত।


সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাড়া সরকারের মাথা ব্যথার বড় কারণ হয়েছে। শুধু কেন্দ্র ভাড়া নয়, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনাও খরচ বাড়ার কারণ। এর পাশাপাশি এ খাতে প্রতিযোগিতার অভাব। ইচ্ছেমতো সমঝোতা করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কম হতো।


উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার কারণে সরকার তার দায় ভোক্তার ওপর চাপিয়েছে মন্তব্য করে সিপিডি জানায়, গ্যাস থেকে এলএনজি বিদ্যুতে যেতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির কারণ। এই মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তার পর বাড়তি চাপ ফেলবে, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।


এসময় সিপিডির পরিচালিত জরিপের তথ্য তুলে ধরা বলা হয়েছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে বাসা বাড়িতে গড়ে বাড়তি বিল দিতে হবে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। শীতে গড়ে মানুষকে অতিরিক্ত ১০৬ টাকা আর গরমকালে ১১৮ টাকা বাড়তি বিল দিতে হবে।


নির্বাহী আদেশ নয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে গ্যাস বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সার্থে গণশুনানির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি বা কমার কাজটি করার দাবি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির। সংস্থাটি বলছে, যে হারে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে তা ভোক্তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে। যদিও সরকার বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার ওপর চাপ পড়বে না বলেছে।


এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, এতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে সিপিড।


অনতিবিলম্বে সরকারকে বিদ্যুৎ জ্বালানি অ্যাক্ট এর ওই ধারা রোহিত করে বিইআরসি এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং ও গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। নো ইলেকট্রিসিটি নো পে এর ভিত্তিতে সরকারকে যেতে হবে উল্লেখ করে আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকারকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়াসহ ৪টি বিকল্প পথরেখাও দিয়েছে সিপিডি ।


কোন প্রেক্ষাপটে সরকার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলো সম্মেলনে সে প্রশ্নও রেখেছে সিপিডি। আইএমএফের পরামর্শে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা বলে সরকার যেভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে এটার প্রয়োজনই পড়বে না। সরকার যদি এই ৪ পদক্ষেপ নেয় বিদ্যুৎ খাতে তাহলে ২০২৯ সাল থেকে আর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে না। ক্রমান্বয়ে তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বের হওয়া, বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি বাবদ অর্থ পরিশোধে নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পে ব্যবস্থাসহ ৪ বিকল্প পন্থা জানিয়ে সিপিডি বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়ালেই আর ভর্তুকি দিতে হবে না সরকারকে।


এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত, মাশফিক আহসান ও ফয়সাল কাইয়ূম।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com