কুষ্টিয়ায় মতবিনিময় সভায় মিল মালিকদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী
'মুনাফালোভী ধান ব্যবসায়ীদের হাতকড়া পরাতে না পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব'
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:০৮
'মুনাফালোভী ধান ব্যবসায়ীদের হাতকড়া পরাতে না পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব'
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চালের দাম বৃদ্ধির কারসাজিতে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। দরকার পড়লে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি করবে সরকার।


৩১ জানুয়ারি, বুধবার বিকালে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশের অন্যতম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের চালকল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।


সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের বাজার নয় মাস স্থির ছিল। করোনা অতিমারিতেও চালের দাম বাড়েনি। এখন বাড়ছে কেন মিল মালিকদের কাছে এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।


মন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে চালকল মালিকরা বলেন, চিকন ধানের দাম বেড়ে গেছে। এ ধানের প্রধান মোকাম নওগাঁসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা বর্তমানে ১৫৭০ টাকা মণ দরে এ ধান কিনতে হচ্ছে।


এসময় মন্ত্রী চাল কল মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের কোন মোকাম থেকে ১৫৭০ টাকা মণ ধান কিনছেন, সেই বিক্রেতার নাম বলুন, আমি এখানে বসে যদি তার হাতে হাতকড়া পরাতে না পারি তাহলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব।


মন্ত্রীর এই চ্যালেঞ্জে নিশ্চুপ থাকেন চালকল মালিকরা। মন্ত্রী মিল গেটে মিনিকেট চালের (সরু) দাম ১ টাকা কমিয়ে ৬১ টাকার করার প্রস্তাব দিলেও ব্যবসায়ীরা তাতে সাড়া দেননি।


মতবিনিময় সভায় সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ধান চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েক জেলার ব্যবসায়ীরা। আমরা তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। মিল মালিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিবেক জাগ্রত করুন। বেপরোয়া না হয়ে মানব সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করুন।’


তিনি বলেন, ‘কৃষক ধানের দাম বেশি পেলে খুশি হতাম। এখন বেশি দামে ধান বিক্রি হলেও কৃষকের লাভ হচ্ছেনা। সুবিধা নিচ্ছে মজুতদাররা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


মন্ত্রী আরো বলেন, চালের বস্তায় মিলগেটে চালের দাম কত তা লিখতে হবে। সাথে থাকতে হবে উৎপাদনের তারিখও। নতুন আইন করা হয়েছে। দ্রুত কার্যকর হবে। এ আইন কার্যকর হলে মিনিকেট নামের কোন ধান চাল থাকবেনা।


সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীর সঙ্গেও বাদানুবাদে জড়ান চালকল মালিকরা। আজগর আলী মতবিনিময় সভায় বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, 'চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী।' এতে সব চাল কল মালিক এক সাথে হৈচৈ শুরু করেন।


কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহতেশাম রেজার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বক্তব্য দেন।


এর আগে দুপুরে খাদ্যমন্ত্রী সাধারণ চন্দ্র মজুমদার খাজানগর মোকামে অভিযান চালান। এ সময় একটি মিলের গুদামে প্রায় ৪০০ টন ধানের মজুদ খুঁজে পান মন্ত্রী। সুবর্ণা অটো রাইস মিলের মালিক জিন্নাহ আলম অন্য একটি মিলের গুদামে অবৈধভাবে এ ধান মজুদ করেছিলেন। মন্ত্রীর নির্দেশে তাৎক্ষণিক গুদামটি সিলগালা করা হয়। এছাড়া একই ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি আটা মিলের গুদামে ১৫০টন গমের অবৈধ মজুদ পেয়ে সেটিও সিলগালার নির্দেশ তিনি। এছাড়া ওই মিল মালিকের ১ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।


মন্ত্রী পর্যায়ক্রমে খাজানগর মোকামের অন্যতম মিনিকেট চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেশ এগ্রো ফুড, সুর্বণা এগ্রো ফুড, স্বর্ণা এগ্রো ফুড, আল্লার দান এগ্রো ফুড এবং রশিদ এগ্রো ফুডে যান। এসব চালকল ও এর গুদাম ঘুরে ঘুরে দেখেন মন্ত্রী। প্রায় প্রতিটি মিলেই কিছু না কিছু অসংগতি খুঁজে পান তিনি। এর মধ্যে আল্লার দান এগ্রো ফুডের একটি গুদামে প্রায় ৪০০ টন ধানের মজুদ দেখতে পান তিনি। মন্ত্রী এ সময় সংশ্লিষ্ট মিল মালিকদের ভর্ৎসনা করেন। পাশাপাশি তিনি কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেনকেও ভর্ৎসনা করেন। তিনি খাদ্য নিয়ন্ত্রককে বলেন, ‘এসব অনিয়ম কেন এত দিন চোখে পড়েনি। সব কিছু যদি আমাকে দেখতে হয়, তাহলে তোমরা এখানে কী করো।’


এ অভিযানে মন্ত্রীর সঙ্গে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা সহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং চালকল মালিক সংগঠনের নেতার উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/শরীফুল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com