
কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হুট করে গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ করার অভিযোগ উঠেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে। ১০০ টাকার পরিবর্তে জানুয়ারি থেকে মিটার চার্জ ২০০ টাকা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
গ্রাহকরা জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসে হঠাৎ করেই তাদের কাছ থেকে ১০০ টাকার পরিবর্তে মিটার ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় কার্ড রিচার্জ পয়েন্টগুলোয় রিচার্জ করতে গিয়ে ২০০ টাকা মিটার চার্জ নেয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন তারা।
এম রহমান নামে এক গ্রাহক বলেন, গ্যাস বিল দিতে গিয়ে দেখি মিটার ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। আগে যা ছিল ১০০ টাকা। আমাদের কিছু না জানিয়ে মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করা হলো। এমনিতেই সব কিছুর দাম বেশি। এগুলো দেখার কি কেউ নেই?
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি অর্ডার দেখেছি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না। তবে খোঁজ নেব।
অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতির এই সময়ে দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির বাজারে মিটার ভাড়া বাবদ বাড়তি অর্থ কেটে নেয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। তারা বলছেন, বাড়তি এ খরচ সমন্বয় করতে হিমশিম খাবে নিম্ন আয়ের মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাসের অপচয় রোধ ও গ্রাহকের খরচ কমাতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জাইকার সহায়তায় ২০১১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। পরে ২০১৭ সালে বাসাবাড়িতে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সে সময় প্রিপেইড মিটার ভাড়া ছিল ৬০ টাকা। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রিপেইড মিটারের ভাড়া ৬০ থেকে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে এডিবি ও জাইকার অর্থায়নে দুটি প্রকল্পে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলমান। জাইকার অর্থায়নে বসানো হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার এবং এডিবির অর্থায়নে আট হাজার ৬০০ মিটার। দুই সংস্থার অধীনে আরও ১২ লাখ মিটার স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।
আর বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে তিতাসের তিন লাখ ২৮ হাজার ৬০০টি প্রিপেইড মিটার রয়েছে। জানুয়ারির আগে প্রতি মাসে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মিটার ভাড়া চার্জ হিসেবে আদায় করা হতো। নতুন নিয়মে গ্রাহকদের থেকে আরও সমপরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। মিটার ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় হবে।
আইন অনুযায়ী তিতাস গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ ও ভোক্তাপর্যায়ে মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিষয়ে আগ্রহী পক্ষগণকে গণশুনানি প্রদানপূর্বক বিস্তারিত পর্যালোচনা করে আদেশ দিয়ে থাকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে মিটার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কিছুই জানে না সংস্থাটি।
এ বিষয়ে বিইআরসি’র সদস্য ড. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, তিতাস মিটার ভাড়া বাড়িয়েছে কিনা এর সত্যতা আমাদের জানা নেই। আমাদের সঙ্গে তিতাসের কোনো ফাংশনাল সম্পর্ক নেই। বিইআরসি শুধু একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, গ্যাসের বিলের মধ্যেই মিটার চার্জ সমন্বয় করে নেওয়ার কথা। কিন্তু তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে মিটার চার্জ নিচ্ছে। এটা নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। বিল বাড়ানোর কোনো এখতিয়ারও তিতাসের নেই। এটা অবৈধ। সরকার কেন তাদের অপকর্ম করতে দিচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এটা ভয়ংকর অপরাধ করছে তারা।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]