১০ জানুয়ারি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৩
১০ জানুয়ারি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

পশ্চিম পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি।


১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।


তখন থেকে ১০ জানুয়ারি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে আছে। বাংলদেশের ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় দিন। কেননা, এই দিনে মহামানবের মহাপ্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।


১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে নতুন করে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষিত বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।


এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে ঐতিহাসিক জনমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ভাষণে বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী নির্দেশনা ও আহ্বানের পর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে।


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে শুরু করে নির্বিচারে গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতি পাক দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।


১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোররাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান। পরে তাঁকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেন। সেখানে যাত্রাবিরতির পর বঙ্গবন্ধু দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১০ জানুয়ারি সকালে তাঁকে বহনকারী ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর বিমানটি দিল্লিতে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রিসভার সদস্যরা, তিন বাহিনী প্রধান এবং ভারতের জনগণের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু সংবর্ধনা লাভ করেন। এ সময় তিনি ভারত সরকার এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সহায়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে তিনি ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। দিল্লিতে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি শেষে বঙ্গবন্ধু ঢাকার পথে রওনা হন। ওই দিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।


বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে যান। বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত অপেক্ষমাণ লাখ লাখ মানুষ তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায়। মহান নেতাকে কাছে পেয়ে আবেগে-উল্লাসে উচ্ছ্বসিত জনতার জয় বাংলা ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। মহাকালের রাজনীতির মহাকবি রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ধ্রুপদী ভাষণ দেন। আবেগ আপ্লুত ভাষণে তিনি বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সেই বাংলায় আমি ফিরে যেতে পারব কি না।’


বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পৃথক বাণী দিয়েছেন।


রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস ১৪ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিজীবন শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির পিতা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। আজকের এ দিনে আমি জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলেও জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের বিজয় পূর্ণতা লাভ করে।’


তার বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভিনদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করে নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আজ বিশ্বের বুকে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলছে- সেটাই আওয়ামী লীগ সরকারের পরম পাওয়া।


তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল এক দিন এ দেশের মানুষ নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারণ করবে। সে লক্ষ্যেই তিনি গোটা জাতিকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ভিনদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করে নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আজ বিশ্বের বুকে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলছে, সেটাই আওয়ামী লীগ সরকারের পরম পাওয়া।’


এদিকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।


কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : আজ সকাল ৬-৩০ মিনিটে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে সংগঠনের সবকার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।


সকাল ৮টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।


দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা। জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com