রংপুরে দারিদ্র্যের হার ছয় বছরে কমেছে অর্ধেক, বেড়েছে বরিশালে
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:০৩
রংপুরে দারিদ্র্যের হার ছয় বছরে কমেছে অর্ধেক, বেড়েছে বরিশালে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

এক সময় দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিতি ছিল উত্তরবঙ্গ অঞ্চল। এর মধ্যে রংপুরের মানুষের প্রতিচ্ছবিই ছিলো মঙ্গা, দারিদ্র্য- এ শব্দগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে সময়ের ব্যবধানে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। গত ছয় বছরের ব্যবধানে রংপুরে দারিদ্র্যের হার কমে অর্ধেকে নেমেছে। মূলত কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হলেও রেমিট্যান্স আর ছোট-বড় শিল্পায়নের প্রভাবে রংপুর এখন মঙ্গা থেকে বের হয়ে ছুটছে উন্নয়নের দিকে। তবে এক সময়ের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বরিশালে বেড়েছে দারিদ্র্য। অবশ্য সার্বিকভাবে পুরো দেশেই দারিদ্র্য কমে এসেছে।


রাজধানীর আগারগাঁয়ে পরিসংখ্যান ভবনে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশ করা হয় জরিপের চূড়ান্ত ফল। তাতে উঠে এসেছে রংপুর বিভাগের অর্থনৈতিক মুক্তির গল্প।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তাদের মুখেও ছিলো রংপুর অঞ্চলের অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক নানা গল্প।


তথ্য মতে, ৮ জেলার রংপুর বিভাগে দারিদ্র্য ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৭ দশমিক ২। ছয় বছরের ব্যবধানে এত দ্রুত দারিদ্র্য কমানোর রেকর্ড অন্য কোনো বিভাগের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।


রংপুরের এই সাফল্যের কারণে সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হিসেবে দীর্ঘদিনের পরিচিতিও ঘুচেছে। রংপুরকে ছাপিয়ে বরিশাল বিভাগে এখন সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য, ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ।


সংশ্লিষ্টদের মতে, উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে রংপুরের কাজপ্রত্যাশী লোকজন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিবাসন করেছেন। এ ছাড়া ওই অঞ্চলের লোকজন আগের চেয়ে বেশি প্রবাসে যাচ্ছেন। এসব কারণে দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করেছে।


২০১০ সালে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা—এ আটটি জেলা নিয়ে রংপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে এসব জেলা রাজশাহী বিভাগের আওতায় ছিল।


আগে দেশের সবচেয়ে গরিব ১০টি জেলার ৫টিই রংপুর বিভাগে ছিল। অর্থাৎ রংপুরের ৮টি জেলার মধ্যে ৫টিই ছিল দেশের সবচেয়ে গরিব জেলা। ২০১৬ সালের হিসাবে, দেশের সবচেয়ে গরিব জেলা ছিল কুড়িগ্রাম। সেখানে প্রতি ১০০ জনের ৭১ জনই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। সবচেয়ে গরিব ১০টি জেলার মধ্যে রংপুর বিভাগের বাকি জেলাগুলো ছিল রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট।


জরিপের চূড়ান্ত ফলাফলে জানানো হয়, দারিদ্র্য কমেছে পুরো দেশেই। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী পুরো দেশে দারিদ্র্য নেমে এসেছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। ৬ বছর আগে তা ছিলো ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৬ থেকে ২০২২ সময়ে দারিদ্র্য কমেছে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ।


এছাড়া বর্তমানে পুরো দেশে অতিদ্রারিদ্র নেমে এসেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। ২০১৬ সালে তা ছিলো ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ছয় বছরে অতিদারিদ্র্য কমেছে অর্ধেকেরও বেশি।


অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অতিদারিদ্র্য কমাতে সরকারের নেয়া সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম অবদান রেখেছে। এই কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পক্ষে মত দেন অনেক বক্তা।


অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত ৬ বছরে ঢাকা, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার কিছুটা বেড়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকায় দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৯, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৭, সিলেটে ১৭ দশমিক ৪ এবং ময়মনসিংহে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ।


বর্তমানে রংপুরকে ছাড়িয়ে দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি বরিশালে। যদিও বিভাগটি একসময় শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলো।


অন্যদিকে জরিপে জানানো হয়, সবচেয়ে কম দারিদ্র্য রয়েছে খুলনা বিভাগে। বিভাগটিতে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।


বরিশালে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব দীপংকর রায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখতে পারেন। তবে বরিশালে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সবচেয়ে বেশি। সেখানে দারিদ্র্য কমার কথা। আবার কেউ বলতে পারেন, দারিদ্র্যের হার বেশি বলেই সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা বেশি। এটি আপেক্ষিক বিষয়।


অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমানও বিস্ময় প্রকাশ করেন বরিশালে দারিদ্যের হার বেড়ে যাওয়ায়।


তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বেশি খুলনা জেলায়। সেখানে দারিদ্র্যের হার বেশি হারে বাড়ার কথা। অথচ পাশের বিভাগে দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি।


দারিদ্র্য কমানোর প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্য সীমার উপরে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বেশি জরুরি। কারণ হঠাৎ যেকোনো ধরনের আঘাতে তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারেন।


তাদের সুরক্ষা দিতে পারলে দারিদ্র্য বিমোচন টেকসই হবে বলেও মত দেন এই অর্থনীতিবিদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান থাকার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। তবে দারিদ্র কমা নিয়ে স্বস্তির ভিডিও বার্তা দেন এম পরিকল্পনামন্ত্রী।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com