চুয়াডাঙ্গা হানাদার মুক্ত দিবস আজ
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৮
চুয়াডাঙ্গা হানাদার মুক্ত দিবস আজ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সূতিকাগার বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গা। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে চুয়াডাঙ্গাকে শত্রুমুক্ত করেন বাংলার মুক্তি সেনারা। স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় ভাবে এই দিনটিকে হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।


ভারত সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গার রয়েছে গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৭১ সালে ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার পর চুয়াডাঙ্গায় সর্বপ্রথম ২০৪ জন মুজাহিদ ও আনসারকে একত্রিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দক্ষিণ পশ্চিম রণাঙ্গনের হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয় এ জেলায়। এখান থেকেই কার্যক্রম শুরু করে তৎকালীন রেডক্রস বর্তমান রেডক্রিসেন্ট।


জানা যায়, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন হলেও ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় হওয়ার কথা ছিল ওই শপথ। ১০ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় ২৮ জন সংসদ সদস্যের (এমপি) উপস্থিতিতে এক সভায় অস্থায়ী সরকারের রাজধানী ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান চুয়াডাঙ্গায় করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।


সিদ্ধান্তটি নিরাপত্তাজনিত কারণে গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু খবরটি দ্রুত বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানী বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয় চুয়াডাঙ্গা। এরপরই চুয়াডাঙ্গার ওপর ব্যাপকভাবে বিমান হামলা চালাতে শুরু করে হানাদার বাহিনী।


১৬ এপ্রিল যশোর সেনানিবাস থেকে হানাদার বাহিনীর একটি দল চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশ করে। চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশের পরই হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করে শহর দখলে নেয়। পরে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের সদর দফতর চুয়াডাঙ্গা থেকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।


মুক্তিযুদ্ধের সময়ের যুবনেতা বর্তমান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুনের নেতৃত্বে ভারতে ট্রেনিং নিতে যায় চুয়াডাঙ্গার একদল তরুণ। ২২ এপ্রিল ভারতের হৃদয়পুরে ১২০ জন যুবক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ক্যাম্প চালু করা হয়।


চুয়াডাঙ্গায় চলতে থাকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে গেরিলা যুদ্ধ। ৫ আগস্ট চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের জগন্নাথপুর গ্রামের দাফন করা হয়, যা এখন আট কবর নামে পরিচিত।


৭ আগস্ট জীবননগর থানার ধোপাখালি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানী বাহিনীর মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাঁচজন শহীদ হন।


সেপ্টেম্বরে ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল মনজুর। তিনি যুদ্ধ বেগবান করা ও বিজয় অর্জনের লক্ষে যুদ্ধ কৌশলে পরিবর্তন আনেন। ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানী বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে জীবননগরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয় দর্শনা।


৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী মেহেরপুর থেকে পায়ে হেঁটে চুয়াডাঙ্গায় আসে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার মুক্তিবাহিনীরা দর্শনার মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। খবর পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় শহরের মাথাভাঙ্গা ব্রিজে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় হানাদার বাহিনী।


মিত্রবাহিনী ও চুয়াডাঙ্গার মুক্তিবাহিনী পৌঁছালে ৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীরা চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা ছেড়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে যায়। শত্রুমুক্ত হয় চুয়াডাঙ্গা। স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেদিন স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে আনন্দ উল্লাস করেন এলাকার মুক্তিকামী মানুষ।


চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতি চিহ্ন। বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় একাত্তরের গণহত্যার স্মারক বধ্যভূমি সংস্কার করে। জেলা শহরের শহীদ হাসান চত্বরে স্থাপন করা হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক।


চুয়াডাঙ্গায় মোট বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ১ হাজার ৬৩১ জন। এর মধ্যে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ১৫৬ জন। এ রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছেন ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। এ জেলায় দুজন বীর প্রতীকও রয়েছেন।


বিবার্তা/সাঈদ/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com