ঠাকুরগাঁও হানাদারমুক্ত দিবস আজ
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৫২
ঠাকুরগাঁও হানাদারমুক্ত দিবস আজ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ৩ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল ঠাকুরগাঁও। এ অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে আজকের এই দিনে।


প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত দিবস পালিত হয়। এবারও নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারাদেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে মেতে ওঠে নরপিশাচরা। ১৫ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও।


ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাটিভাঙ্গা ও রানীশংকৈল খুনিয়া দীঘির পাড়ে মুক্তিকামীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ১৭ এপ্রিল জগন্নাথপুর, গড়েয়া শুখাপনপুকুরী এলাকার মুক্তিকামী মানুষ ভারত অভিমুখে যাত্রাকালে স্থানীয় রাজাকাররা তাদের আটক করে। পরে তাদের পাথরাজ নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করা হয়। একইভাবে রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়া দীঘির পাড়ে গণহত্যা চালানো হয়। পাকিস্তানি বাহিনী হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার নিরীহ মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। নির্বিচারে হত্যার কারণে পরবর্তীকালে এটি ‘খুনিয়া দীঘি’ নামে পরিচিতি পায়।


১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষ।


মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টরের আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় থানা দখল করে ও পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। তারা পঞ্চগড় ছেড়ে পিছু হটে ময়দান দীঘি তারপর বোদা এবং পরে ঠাকুরগাঁও থানার ভুল্লীতে ঘাঁটি করে। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেন না যেতে পারেন সেজন্য বোমা মেরে ভুল্লী ব্রিজটি উড়িয়ে দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কিন্তু ১ ডিসেম্বর রাতে ব্রিজের ওপারে পৌঁছে যায় মুক্তিসেনারা। সেখানে চলে রাতভর সম্মুখযুদ্ধ।


২ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াইয়ে শত্রুবাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় ভুল্লী পার হয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের দিকে রওনা দিলে দেখতে পান রাস্তায় মাইন পোঁতা। পরে মাইন অপসারণ করে প্রচণ্ড আক্রমণে এগোতে থাকলে পাকিস্তানি বাহিনী ঠাকুরগাঁও শহর ছেড়ে পালিয়ে যায় ও ৩ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।


সেদিন ভোরে শত শত মুক্তিযোদ্ধা শহরে ঢুকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে শহর প্রকম্পিত করেন। এরপর ঠাকুরগাঁও থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তারা।


মুক্তিযুদ্ধর সময় ঠাকুরগাঁও মহকুমায় ১০টি থানা ছিল। পরে ১৯৮৪ সালে ৫টি থানা নিয়ে পঞ্চগড় জেলা এবং ৫টি নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তেঁতুলিয়া থানা ছিল শত্রুমুক্ত। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তেঁতুলিয়া ঢুকতে পারেনি। তাই মুক্তাঞ্চল থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করা হতো। একসময় ঠাকুরগাঁও মহকুমার সব সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে অবস্থান নেন। তাই সব সীমান্তেই সরাসরি যুদ্ধ চলে ৯ মাস।


সাবেক ঠাকুরগাঁও জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুদ্দোজা (বদর) বলেন, আজ থেকে ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর আমাদের তীব্র আক্রমণের মুখে তারা পালাতে বাধ্য হয়। ৩ ডিসেম্বর ভোরে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ফায়ার করতে করতে শহরে ঢুকে পড়ি। তখন জনশূন্য ছিল ঠাকুরগাঁও। পরে বিজয়ের উল্লাসে শত শত মানুষ ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। সেদিন মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছিলাম সেটি ভুলার নয়। আজও মনে পড়ে সেইদিনে স্মৃতি।


ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও পাকিস্তান হানাদার মুক্ত দিবস। এটি ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যের একটি অংশ ও গৌরবের দিন। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিবসটি উদযাপনের ব্যবস্থা নিয়েছি। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে চাই। তরুণরা যেন ঠাকুরগাঁওসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com