ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ২২:০৭
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও কমছে না ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। গত জুন প্রান্তিকে অতিতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ হাজার ১ কোটি টাকা বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।


খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা। ব্যাংকখাতে প্রধান এ সমস্যা মোকাবেলায় ঢালাওভাবে ছাড় নয় বরং পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। খেলাপি নামে সমস্যা দূর করতে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রহিতা ও দাতার ক্ষেত্রে একইভাবে রেগুলেশন প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগেরও পরামর্শ তাদের।


তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। প্রান্তিকটিতে দেশের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ।


আর মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। সে হিসাবে ৬ মাসের মাসের ব্যবধানে সবশেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।


অপরদিকে ডলার সংকটে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দারস্ত হয় বাংলাদেশ। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার বা ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে দেশ। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে আগামী দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে ডিসেম্বরে। কয়েক ধাপে ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার শর্ত জুড়ে দেয়। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। সব শেষ প্রতিবেদন মতে, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নীচে এলো, অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।


আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা। তবে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফ’র শর্ত মতে, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখাতে হবে। সেক্ষেত্রে আইএমএফের হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান না থাকায় খেলাপি বাড়ছে বলে মত অনেকের। একই সাথে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন খাত বিশ্লেষক।


এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে দেশের ব্যাংকিং খাতের বড় দুই সমস্যা। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আরও ভূমিকা নিতে হবে। আর ব্যাংকটির সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন খেলাপি ঋণ কমাতে আমাদের তেমন সফলতা আসছে না। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আরও কঠোর হতে হবে। খেলাপি কমাতে না পারলে সেসব ব্যাংকগুলোর শাখা বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com