ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ প্রাণ কেড়ে নিল ৭ জনের
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৯
ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ প্রাণ কেড়ে নিল ৭ জনের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে দেয়াল ধসে, গাছের ডাল ভেঙে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় হাজারের বেশি কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি টানা বৃষ্টির কারণে উঠতি আমন ফসলও ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।


উপকূলের চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। টানা বৃষ্টির মধ্যে সরকারি ছুটির দিনে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষজনের আনাগোনা ছিল একেবারেই কম।


এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের মরিচ্যাঘোনার পানিরছড়া এলাকায় বসতঘরের মাটির দেয়াল চাপায় এক পরিবারের চারজন নিহত হন।


তারা হলেন- ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পানিরছড়ার ফকির মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০), ছেলে শাহিদুল মোস্তফা (২০), মেয়ে নিলুফা ইয়াছমিন (১৫) ও সাদিয়া বেগম (১১)।


দমকা হাওয়ায় গাছের ঢাল ভেঙে বিকালে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মগধারা ইউনিয়নের আব্দুল ওহাব (৭২) এবং মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড় এলাকার আনোয়ার হোসেনের শিশু সিদরাতুল মুনতাহা আরিয়া (৪) মারা গেছেন।


এ ছাড়া টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা পরিষদের গেইটের সামনে গাছের ডাল ভেঙে ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক (৪০) মারা গেছেন। তিনি উপজেলার মিরিকপুর গ্রামের কুসুম মিয়ার ছেলে।


ঝড় এগিয়ে আসায় উপকূলীয় জেলায় জেলায় মাইকিং করা হচ্ছিল সকাল থেকে। আবহাওয়া অফিস বিপদ সংকেত ঘোষণা করার পর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়।


সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল আগেই। কিন্তু বরগুনার অন্তত ২০টি ট্রলার ঝড় শুরুর আগে ঘাটে ফেরেনি। সেসব নৌযানে ছিলেন তিন শতাধিক জেলে।


পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে গত ১৪ নভেম্বর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর সেটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সেই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র ১৫ নভেম্বর নিম্নচাপে পরিণত হয়। তারপর বাঁক নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে বৃহস্পতিবার পরিণত হয় গভীর নিম্নচাপে। পরে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।


ওই অবস্থায় মোংলা ও পায়রা বন্দরকে সাত নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরের ছয় নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়। শুক্রবার বেলা ১টার দিকে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’।


পরের দুই ঘণ্টায় বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে বেলা ৩টার দিকে তা পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসলেও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবারের ঘূর্ণিঝড় মিধিলি-তে।


আবহাওয়াবিদরা গত দু’দিন ধরেই বলে আসছিলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা নেই।


ঘূর্ণিঝড়টি বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হওয়ার পর বিপৎসংকেত নামিয়ে তিন নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর।


শুক্রবার যেসব স্থানের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে তার মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় বড় বড় গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেললাইনে গাছ উপড়ে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-সিলেট তথা পূর্বাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল প্রায় দুই ঘণ্টা।


প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উপকূলীয় অনেক জায়গা দুপুরের পর থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে বিকালে দেশের মোট চাহিদা অন্য দিনের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com