আকু’র ১২১ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করল বাংলাদেশ
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ২২:৩১
আকু’র ১২১ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করল বাংলাদেশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের আমদানি বিল বাবদ ১২১ কোটি ডলার পরিশোধ করায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে।


ফলে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এখন গ্রস রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বিপিএম-৬ ম্যাথডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের সঙ্গে ৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন। এখান থেকে আকুর বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভের অঙ্ক ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, পেমেন্ট হয়েছে তবে এখনও ভাউচার পাইনি আমরা।


আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দফতর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্য পদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশনের (এসক্যাপ) ভৌগোলিক সীমারেখায় অবস্থিত সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য আকুর সদস্য পদ উন্মুক্ত।


সারা বিশ্বে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানের জন্য প্রদত্ত ঋণ গ্যারান্টি, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেয়া ঋণ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলোকেও রিজার্ভ হিসেবে দিখিয়ে আসছিল এতদিন। এসব হিসাব বাদ দেয়ার কারণে ৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য রয়ে গেছে।


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। এই শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে তা ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখতে হবে। এসব শর্ত শিথিল করেছে সংস্থাটি।


আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি থাকায় আমদানি ব্যয় কমেনি। এছাড়া করোনার পর বৈশ্বিক বাণিজ্য আগের অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে; যা এখনও অব্যাহত আছে। এ সংকট দিন দিন বাড়ছে। বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এ সূচকটির ধারাবাহিকতা কমছে। তবে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডলার সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


রেমিট্যান্স, রফতানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যোগ হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছায়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে। এরপর তা বেড়ে ক‌রোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট। ওইদিন রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে ওঠে। এরপর ডলার সংকটে গত বছর থেকে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬তে ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার এবং সব শেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩১ বিলিয়ন ডলার।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com