
চলতি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এরপরই শুরু হবে ভোটের ডামাডোল। ইতোমধ্যে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
মনোনয়নের জন্য এরই মধ্যে প্রার্থীদের আমলনামা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। বরাবরের মতো এবারও মাঠে সক্রিয় তারা। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা সাবেক ছাত্রনেতাদের সাথে কথা বলেছে বিবার্তা। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার তাদের প্রত্যাশা বেশি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট ও তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনা করবে দল, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে দীর্ঘদিন ধরে জনসংযোগ করে আসছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নাদেল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি।
তিনি বলেন, রাজনীতি মানে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা। যারা রাজনীতি করেন, তাদের সকলেরই একটি ভিশন থাকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার। জনপ্রতিনিধি হলে মানুষের সেবা করার বেশি সুযোগ পাওয়া যায়। নেত্রী এবং দলের প্রতি আমার আনুগত্য রয়েছে। আমার বিশ্বাস নেত্রী আমাকে আরো বেশি কাজ করার সুযোগ দেবেন। এই আসন থেকে দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমি মেনে নেবো।
ঢাকা-১৫ আসনে (মিরপুর-কাফরুল) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। তৃণমূল থেকে উঠে আসা সাচ্চুর রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রলীগ থেকে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পর পর দু’বার সহ-সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন যেভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করেছি। নেত্রীর কথাই শেষ কথা। এ আসনের মাটি ও মানুষের সঙ্গে পূর্বপুরুষ থেকেই আমাদের সম্পর্ক। অনেক মামলা হামলার শিকার হয়েছি। দলের দুঃসময়ে সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি, হাল ছাড়িনি। দল যদি মূল্যায়ন করে তাহলে ঢাকা-১৫ আসন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেব।
ঢাকা-১৮ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাজমা আক্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রলীগের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ও রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের জিএস নাজমা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসেবে আমার প্রায় ৪০ বছর রাজনীতির অভিজ্ঞতা। সাংগঠনিক পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড যদি যোগ্য মনে করে তাহলে আমি অবশ্যই একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন বোর্ডের প্রতি বিশ্বাস আছে, বিশেষ করে মাননীয় নেত্রী যেটি করবেন সেটিই মেনে নিব। আমরা চাইতে পারি। আমরা চাই। এরপরও নেত্রী যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই মেনে নিব।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সহযাত্রী হতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা (পর্ব-২)
ঝিনাইদহ-২ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। ১৯৭৮ সালে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের পর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টানা দ্বিতীয়বারের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাইদুল করিম মিন্টু বিবার্তাকে বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যার সাথে মানুষের সম্পর্ক আছে, গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং যাকে দেখলে মানুষ ভোট দিতে আসবে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিবেন। আর যারা হাইব্রিড, ব্যবসায়ী তাদেরকে মনোনয়ন দিলে ১০ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে আসবে না। এতে করে নির্বাচনও বিতর্কিত হবে। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগের মনোয়ন বোর্ড হাইব্রিড, ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দিবেন না।
তিনি বলেন, আমরা মাঠের লোক। ৪৫ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করছি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে আমার ছোটবেলা কেটেছে। সুযোগ পেলে পান-কলার ঝিনাইদহকে রূপে-গুণে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট করে গড়ে তুলতে চাই। আমি মনে করি, সংসদ সদস্যদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতারা মূল্যায়ন পাবেন।
ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন। ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন লিপটন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির মতো গুরুতপূর্ণ দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেছেন। দল আপনাকে কেন মনোনয়ন দিবে? জানতে চাইলে লিপটন বিবার্তাকে বলেন, অনেকগুলো বিবেচনার বিষয় আছে। সবদিক থেকে যোগ্য এবং জনসম্পৃক্ত। তৃণমূলের সাথে সম্পৃক্ত। দলের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডকে তুলে ধরছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে তৃণমূলেও স্মার্ট জনপ্রতিনিধি দরকার। বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাকে বিবেচনা করলে আমি তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।
কুড়িগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসংযোগ ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছেন তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে শোভন বিবার্তাকে বলেন, বংশানুক্রমিকভাবে আমাদের পরিবার এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তৃণমূল জনগণের সাথে মিশে যেতে পেরেছেন বলেই আমার দাদা একসময় নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আমার বাবা এখনও এ অঞ্চলের মানুষের আস্থার ঠিকানা। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমিও মানুষের সেবা করছি। যতটুকু সম্বল আছে, ততটুকু দিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। দেশরত্ন শেখ হাসিনারও কুড়িগ্রামের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে।
শোভন বলেন, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দারিদ্যপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করব। সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার চলছে। জনপ্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলে সেই জোয়ারে কুড়িগ্রামকেও অন্তর্ভুক্ত করব। মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।
'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার সহযাত্রী হতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা (পর্ব-১)
সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সেলিম আহমদ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সেলিম সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমাদের সুনামগঞ্জ-১ আসন মূলত হাওর বেষ্টিত একটি অঞ্চল। ১৯৭০ এর নির্বাচনের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লঞ্চে করে ঘুরে করে প্রচারণা চালিয়েছেন। হাওর অঞ্চলের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি এমনিতে দুর্বল। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন হাওর অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করবেন। হাওরের জীববৈচিত্র, প্রকৃতি, প্রতিবেশগত অবস্থা বিবেচনায় রেখে টেকসই উন্নয়ন, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে স্মার্ট লিডারশিপের প্রয়োজন। শিক্ষিত, সৎ ও আদর্শিক লিডারশিপের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের উন্নয়নে শেখ হাসিনার সরকার বরাবরই আন্তরিক। কিন্তু বিগত দিনে এই আসনে যোগ্য নেতৃত্ব না থাকায় মানুষ কাঙ্খিত উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট ও প্রকৃত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে মনোনয়ন দেবেন। আমি দীর্ঘদিন ধরে হাওরের মানুষরে ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি। নেত্রী আমাকে বিবেচনা করবেন এই প্রত্যাশা করি। সবমিলিয়ে আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। এজন্য এই আসনে তিনি যাকে নৌকার মনোনয়ন দিবেন তার বিজয় সুনিশ্চিত করতে কাজ করে যাবো।
দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু। তিনি বিবার্তাকে বলেন, ছাত্র জীবন থেকে এলাকার প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখার চেষ্টা করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি জায়গায় আমার পদচারণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন তরুণ নেতৃত্বেরও প্রয়োজন আছে। সুযোগ পেলে তরুণদের সাথে নিয়ে বীরগঞ্জ-কাহারোল নির্বাচনী আসনকেও স্মার্ট গড়ার পথে এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। মনোনয়ন দেয়া না দেয়া নেত্রীর বিষয়। তিনি যাকেই মনোনয়ন দেবেন আমি তার জন্যই কাজ করবো।
বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]