রেল বগীতে যুক্ত হলো পদ্মার এপার-ওপার
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৪১
রেল বগীতে যুক্ত হলো পদ্মার এপার-ওপার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

উদ্বোধন হয়ে গেল রেলখাতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প স্বপ্নের পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের। দৃষ্টিনন্দন এ রেল সংযোগ প্রকল্পটির মাধ্যমে আরও একধাপ এগিয়ে গেল দেশের রেলখাত।


মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে মাওয়া প্রান্ত থেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত রেলপথ ১৭২ কিলোমিটার পুরো কাজ শেষ না হলেও ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন হলো । আর এ অংশের উদ্বোধনের পর ট্রেনে মাওয়া থেকে ভাঙ্গার পথে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ভাঙায় এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা।


উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।


পুরো রেলপথ চালু হলে আরো সহজ হবে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের রেল যোগাযোগ। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


রেল কর্তৃপক্ষ জানান, শুরুতে তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামবে। এগুলো হলো মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর। পাশাপাশি শিগগিরই চালু হবে মুন্সীগঞ্জের নিমতলা স্টেশন।


এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সবকটি রেলস্টেশন বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। সমাবেশস্থল, উদ্বোধনী ট্রেন সাজানো শেষ হয়েছে।কমলাপুর-গেন্ডারিয়া-ভাঙ্গা জংশন পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।


প্রকল্প সূত্র জানায়, আপাতত কমলাপুর স্টেশন থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পেরিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলবে। এজন্য চীন থেকে কেনা নতুন সাতটি কোচের সমন্বয়ে একটি বিশেষ ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে।


পদ্মা সেতু দিয়ে খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি আন্তঃনগর ট্রেন, সুন্দরবন ও চিত্রা, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস বর্তমান রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে। এ ছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় ঢুকবে।


এক নজরে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প


১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ করার প্রথম উদ্যোগ নেন। যদিও এ সময় পদ্মা সেতুতে শুধু সড়ক পথ থাকার কথা ছিল। এরপর দেশি অর্থায়নে ১৯৯৯ সালের মে মাসে পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শুরু হয়। আর জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার কাজ ২০০৩ সালের মে মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৫ সালে।


২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা ২০০৭ সালের ২০ অগাস্ট একনেক সভায় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়।


২০০৯ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারির একনেক সভায় প্রকল্পটির ব্যয় দ্বিগুণ করে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় উন্নীত করে প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সংশোধনীতেই প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুতে রেল যুক্ত করা হয়।


২০১১ সালের প্রথম দিকে বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম তৈরি করা হয়। সেই কনসোর্টিয়ামে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পটিতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। ২০১২ সালের ৩০ জুন দুর্নীতির অভিযোগে ঋণ বাতিল করে দেয় বিশ্ব ব্যাংক।


২০১২ সালের জুলাই মাসে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনা প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।


একই সাথে পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল চালু নিয়েও পদক্ষেপ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেক সভায় পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপনে ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।


প্রকল্পটির জন্য প্রস্তাবিত ৩১৩ কোটি ডলারের চীনা ঋণের চূড়ান্ত চুক্তি করতে বিলম্ব হওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। চীন প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা জানায়। ২০১৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৭ কোটি ডলার ঋণচুক্তি করে।


২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায় একনেক সভায় প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। মূলত জমি অধিগ্রহণে জমির দাম তিনগুণ হয়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে যায়। ওই সংশোধনীতে মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।


করোনাভাইরাস মহামারিতে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত।


২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু রেলওয়েকে সময়মতো সাইট বুঝিয়ে না দেওয়ায় পিছিয়ে যায় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ।


২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৮৩ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন। এ সময়ে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয় প্রায় ৮৩ শতাংশ। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথে রেল চলাচল উদ্বোধন করা হচ্ছে। ভাঙা থেকে যশোর অংশের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের জুনে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com