রোডমার্চে উজ্জীবিত বিএনপি নেতাকর্মীরা
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৪২
রোডমার্চে উজ্জীবিত বিএনপি নেতাকর্মীরা
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের জন্য ঘর ছেড়ে রাজপথে আসার আহ্বান জানিয়ে উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ করেছে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন- ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।


বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে রোডমার্চ কর্মসূচির পর উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের আশ্বাসে বুক বেধেছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।


রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুই দিনের রোডমার্চে দীর্ঘ প্রায় ২১০ কিলোমিটার পথে ১৫টি স্থানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও বক্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বক্তব্যে শীর্ষ দুই নেতা বলেন, রোডমার্চ থেকে একটা বার্তা দিতে চাই, আসুন, জেগে উঠুন, এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করুন।


তারা আরও বলেন, আজকে জনগণের অবস্থান একদিকে আর ভোট চোরেরা আরেকদিকে। ভোট চোরের আস্তানা গুড়িয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত রাজপথে থাকার আহ্বান জানান বিএনপির এই দুই শীর্ষ নেতা।


বিএনপি নেতারা জানান, রোডমার্চের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাঙা হয়ে উঠেছে। তারা আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। রোডমার্চের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এছাড়া একদফার দাবির প্রতি তারা জোড়ালো ভাবে সমর্থন জানিয়েছে। সাধারণ জনগণ আমাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে, সমর্থন দিচ্ছে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব। এটি আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই রোডমার্চের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করছি।



রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা জানান, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই সরকার নানান ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করেই যাচ্ছে। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে। আবারও তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসতে চায়। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যে মামলায় কারাগারে আটক রেখেছে। তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়েও প্রাপ্য চিকিৎসাটুকু পাচ্ছেন না। নেত্রীকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটা এই সরকারের নীল নকশা। শেখ হাসিনার এই নীল নকশা বাস্তবায়ন হতে দেব না। আমরা রাজপথে থেকেই সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমরা রাজপথে নেমেছি, এই সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাব না।’


রোডমার্চের প্রথম দিন শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে সাতটি পথসভাসহ ৯টি স্থানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দিনাজপুর ট্রাক স্টেশন মাঠে প্রথম দিনের রোড মার্চে সমাপনী বক্তব্যে সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, মানে মানে কথা শুনুন, দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। তা-না হলে অতীত যেভাবে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়েছি, আপনাদের পতন সেভাবে ঘটানো হবে। সারাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তরুণদের নেতৃত্বেই বাংলাদেশকে মুক্ত করা হবে।


রোডমার্চের আয়োজক বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদল। রোডমার্চে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল বহর নিয়ে অংশ নেন। দীর্ঘ এই যাত্রায় রাস্তার দুই পাশের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে জনগণ রোডমার্চের বহরকে স্বাগত জানান। এসময় বিএনপি মহাসচিব হাত নেড়ে জনগণের অভিবাদনের জবাব দেন। পথে পথে আশপাশের জেলা থেকে হাজারো নেতাকর্মী রোডমার্চে যোগ দেন।


রোডমার্চে নেতাকর্মীরা ক্যাপ, দলীয় পতাকা, সংগঠনের লোগো সম্বলিত টিশার্ট, ব্যানার, ফেস্টুন ও জাতীয় পতাকা হাতে রোডমার্চে অংশ নেন। অনেকে মাথায় রংবেরঙের ফিতা বাঁধেন। ট্রাকে সাউন্ডসিস্টেম বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে, আনন্দ উল্লাস করে বহরকে মাতিয়ে রাখেন। উৎসুক জনতা রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে রোডমার্চের বহরকে স্বাগত জানান। পথের বিভিন্ন স্থানে নারী, শিশুরা ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রোডমার্চে সম্পৃক্ত হন।


রোডমার্চের দ্বিতীয় দিন ১৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার বগুড়া থেকে শুরু হয়ে রাজশাহীতে শেষ হয়। প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে চারটি পথসভাসহ ছয়টি স্থানে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দুইদিনের রোডমার্চ শেষে রাজশাহী ঈদ গা মাঠে সমাপনী সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে অস্তিত্বের প্রশ্ন, স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে কিনা- সেই প্রশ্ন, গণতন্ত্র ফিরে আসবে কিনা- সেই প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আদালত, সংসদ সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা করতে গিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে খুন-গুম করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রেখেছে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না।


তিনি বলেন, মানুষ জেগে উঠেছে, রাজপথে নেমেছে। রাজপথে থেকেই এই সরকারকে পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে। আওয়ামী আবারও নির্বাচনের পাতানো খেলা খেলতে চায়। আমরা নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে দেবো না।


সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তালি দিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে, উৎসাহ দিয়েছে। আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোট চোরদের ধরবে বলে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে- চোরদের তালিকা করার জন্য।


তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আমাদের নেতা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রক্ত দিয়ে হলেও এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন করার। তফসিল ঘোষণা করে কোনো লাভ নাই। ভোটের বাক্স গুদামেই পরে থাকবে- এদিক সেদিক যাবে না। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে যারা মৃত্যু দিকে ঠেলে দিচ্ছে- তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।


বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বিবার্তাকে বলেন, আমরা যে এক দফা আন্দোলন শুরু করেছি; এই আন্দোলনে মানুষের কতটুকু অংশ গ্রহণ এবং সম্পৃক্ততা রয়েছে এটা দেখার জন্যই রোডমার্চ করেছি। এই রোডমার্চের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা আন্দোলনে সকল মানুষকে সম্পৃক্ত করেই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই রোডমার্চের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করছি।


রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বিবার্তাকে বলেন, রোডমার্চের মাধ্যমে জনগণ ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তারা রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়া আমাদের একদফার দাবির প্রতি তারা জোড়ালো সমর্থন জানিয়েছে। জনগণ আমাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে, সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই সরকারকে অনেক আগেই না বলে দিয়েছে। সরকার প্রশাসনের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। সেটা আর বেশিদিন থাকতে পারবে না।


জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বিবার্তাকে বলেন, রোডমার্চের ফলে নেতাকর্মীরা চাঙা হয়েছে। রোডমার্চকে কেন্দ্র করে রাস্তার দুই ধারে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা প্রমাণ করে জনগণ বিএনপির সাথে রয়েছে। এছাড়া তরুণ ভোটার ও সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছে। নেতাকর্মীরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তরুণ ভোটাররা তাদের ভোটদানের জন্য সোচ্চার হচ্ছে। আমরা আশাবাদী এই রোডমার্চে যে লক্ষ্য সেটা পূর্ণ হবে এবং যেকোনো মূল্যে তা আদায় করা হবে।


বিবার্তা/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com