ডেঙ্গু: বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়বহুল
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৯
ডেঙ্গু: বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়বহুল
এস এম রিয়াদ রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গুর নানা উপসর্গ নিয়ে সন্ধ্যা (ছদ্মনাম) রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বাসায় আসার পর জ্বর বাড়তে থাকে, ফলে শরীর আরো দুর্বল হয়ে যায়। রাতে শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হলে তিনি মাথা ঘুরে পরে যান। পরে তাকে নিয়ে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে গেলেও জায়গা না পেয়ে রাজধানী ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হয়। মোট চারদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। এ চারদিনে তার চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা।


ডেঙ্গুতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ কম হলেও বেসরকারি হাসপাতালে অনেক বেশি। চিকিৎসার খরচ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। এডিস মশাবাহিত এ রোগ নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পা রাখলেই চিকিৎসা খরচ বেড়ে দাঁড়ায় অন্তত পাঁচ থেকে ছয় গুণ। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা ব্যয় আরও বেশি।


রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে চার থেকে সাত দিন হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় রোগীদের ওষুধপত্র, বিভিন্ন পরীক্ষা, খাওয়াদাওয়াসহ খরচ হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। একই চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালে খরচ পড়ছে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। আর বেসরকারি বড় হাসপাতালে গেলে খরচ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে তিন থেকে চার লাখ টাকায়।


চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু রোগী সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল যেখানেই ভর্তি থাকুক, রোগীর খরচ বাড়াচ্ছে অ্যাপারেসিস প্লাটিলেট। যাদের প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে যায়, তাদের ১ থেকে ৩ ব্যাগ পর্যন্ত প্লাটিলেট নিতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ১ ব্যাগ প্লাটিলেটের দাম ১৪ হাজার টাকা। বেসরকারিতে যা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও প্রতিদিন প্লাটিলেট কাউন্ট জানতে সিবিসি পরীক্ষা করতে হয়। রোগীভেদে ব্লাড সুগার টেস্ট, লিভারের প্রদাহ পরীক্ষা, পেটের আলট্রাসনোগ্রাম, বুকের এক্স-রে, রক্ত ও প্রস্রাবের কালচার পরীক্ষা করতে হতে পারে। এসব পরীক্ষাও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।


জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি যদি ৫০ টাকা হয়, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু বেসরকারিতে পরীক্ষা ফি ১০ গুণ, অর্থাৎ ৫০০ টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে বেশিরভাগ পরীক্ষার ফি অনির্ধারিত। এর সুযোগও নেয় হাসপাতালগুলো।


এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, বেসরকারি যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আছে, সেগুলোতে কোনো অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ ২০৭ জন ডেঙ্গু রোগীর আট দিনের খরচের তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালভেদে আট দিনে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে।


২০২১ সালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে একজন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার গড়ে খরচ হয় প্রায় ৩৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে এপিডেমিওলজিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক বার্ডেন অব ডেঙ্গু ইন ঢাকা, বাংলাদেশ শীর্ষক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর গড় খরচ ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং প্রাইভেট হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর গড় খরচ ছিল ৪৭ হাজার ২৩০ টাকা।


ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচদিন থেকে ভর্তি মো. আব্দুল হাকিম (ছদ্মনাম)। তার ছেলে আজিজুল হাকিম বিবার্তাকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট এক লাখ ৪০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। বেশি খরচ হয়েছে প্লাটিলেট কিনতে, প্রায় ৫০ হাজার টাকা লেগেছে। কেবিনের ভাড়া পাঁচদিনে ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরীক্ষা, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ মিলে অনেক টাকা খরচ। যা সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল।


ধানমন্ডিস্থ আরেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজন নাইমুল হাসান নাঈমের সাথে। তিনি বিবার্তাকে বলেন, তিনদিন থেকে হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে ভর্তি আছি। এই তিন দিনে মোট খরচ হয়েছে আশি হাজার টাকার বেশি।


তিনি বলেন, হাসপাতালে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১০ হাজার টাকা। প্রতিদিন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অনেক খরচ। এর সাথে ওষুধ, খাওয়া ও যাতায়াত খরচ তো আছেই।


রাজধানীর আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। তিন ব্যাগ প্লাটিলেট দিতে হয়েছে। প্রতিদিন অনেক ধরনের পরীক্ষা করতে হয়েছে। এ চিকিৎসা করতে গিয়ে আমার প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে সরকারি হাসপাতাল থেকে খরচ চার-পাঁচ গুণেরও বেশি। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা সম্ভব না।


ধানমন্ডির আরেকটি স্বনামধন্য লাইফ হাসপাতালে কথা হয় মো. তানভীর আহমেদের সাথে। তিনি বিবার্তাকে বলেন, এ বছর সবাই ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে আছে। এ কারণে পরিবারের কারো ডেঙ্গু হলে তাড়াতাড়ি সুস্থ বা ভালো চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে আসছেন। চিকিৎসা শেষে দেখা যায় সরকারি হাসপাতালের থেকে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যায় বেসরকারি হাসপাতালে।


তিনি বলেন, আমার ছেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছয়দিন ভর্তি ছিল হাসপাতালে। তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে পিসিইউতে রাখা হয়। পিসিইউতে তিন দিনে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে তার পেছেনে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।


এ নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান বিবার্তাকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদফতর ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তিসহ চিকিৎসা খরচ নির্ধারণ করা হয়নি। আর এ নিয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগও আসেনি।


তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর এসব কাজের জন্য নিয়মিত মনিটরিং করে, পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ নিয়ে রোগীদের কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদফতরে অভিযোগ দিতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বিবার্তাকে বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরকেও সতর্ক করা হয়েছে। যেসব বেসরকারি হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগী আছে, সেগুলোতে মনিটরিং করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবিএম আব্দুল্লাহ্ বিবার্তাকে বলেন, সারাদেশে এডিস মশার ভয়াবহতা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর বাড়তি চাপ। ফলে অনেকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।


তিনি বলেন, এখন সারাদেশে ডেঙ্গু বিপর্যয় চলছে। আর তাকে পুঁজি করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের কাছে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। আবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে বাজারে স্যালাইন থেকে শুরু করে ফল-মূল, লেবু, ডাবের দাম পর্যন্ত বাড়িয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অধিক লাভের আশায় এসব কাজ যারা করছেন- তারা আর যাই হোক, সৎলোক নয়।


এ বি এম আব্দুল্লাহ্ আরো বলেন, স্বাস্থ্যসেবা পেতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, দরিদ্র মানুষ ব্যয় বহন করতে পারছে না। সরকার এ নিয়ে নানা দিক নির্দেশনা দিয়েছে এবং আন্তারিক রয়েছে। কিন্তু যারা এসব মনিটরিং করেন তাদের উচিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এসব নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা যদি এনিয়ে তৎপর না হন- তাহলে এর ভয়াবহতা আরো বাড়তে থাকবে।


লাগামহীন ডেঙ্গু পরিস্থিতি


চলতি বছর এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-আতঙ্ক বেড়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই ভয়ংকর হচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও।


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর চারটি ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে এ বছর তিনটিই সক্রিয়। আর এই একাধিক ডেঙ্গুর ধরনে জটিলতা ও মৃত্যু বাড়ছে। মশাও আচরণ পাল্টেছে। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ, গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে এডিস মশা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম। এমনতবস্থায় ডেঙ্গু থেকে মানুষকে বাঁচাতে মশা নিধন কর্মসূচি সারাবছর করতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।


২০২৩ সালের জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২০৪ জনের। আগস্ট মাসে ৩৪২ জনের। যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু। চলতি সেপ্টেম্বরের ১৫ দিনে ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯০ জনে। চলতি বছর মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।


এর আগে গত বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ২৮১ জন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জন মারা গিয়েছিল। এ ছাড়া ২০২১ সালে ১০৫, ডেঙ্গুর শুরুর বছর ২০০০ সালে ৯৩, ২০০২ সালে ৫৮ ও ২০০১ সালে ৪৪ জন মারা যায়। মাঝখানে ২০০৭ থেকে ২০১০ ও ২০১৪ সালে এই পাঁচ বছর ডেঙ্গুতে কেউ মারা যায়নি। বাকি বছরগুলোতে মৃত্যু সর্বোচ্চ ২৬ জন থেকে সর্বনিম্ন একজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।


দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের যে পরিসংখ্যান তাতে দেখা যায়, প্রতি বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসেই এর মাত্রা বাড়তে থাকে। তবে ২০২২ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আতঙ্ক ছড়িয়েছে ডেঙ্গু এবং সেটি বর্ধিত হয়ে নভেম্বর-ডিসেম্বর, জানুয়ারি পর্যন্ত এসেছিল।


এ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বিবার্তাকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিস্থিতি আমরা নিয়ন্ত্রের মধ্যে রেখেছি। সারাদেশে প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার জন। তার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৬০ থেকে ৬৫ জন। সব মানুষের দায়িত্ব তো আমি নেব না, তাই না? আমি আমার ঢাকা দক্ষিণ সিটির দায়িত্ব নিয়েছি এবং তা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। তারপরেও যেটুকু আছে, তাতে আমরা সন্তষ্ট না। আমরা চেষ্টা করছি রোগীর সংখ্যাটাকে একদম শুন্যের কাছাকাছি কি করে নিয়ে আসা যায়। ডেঙ্গু এখন শুধু রাজধানী বা সিটি করপোরেশনে না ডেঙ্গু এখন দেশের সব জায়গায় ছড়ানো।


তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিয়মিত বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান আছে। এর বাইরে স্বাস্থ্য অধিদফতর সম্প্রতি যে জরিপ দিয়েছে সে অনুযায়ী আমাদের যেসব ওয়ার্ড ঝুঁকিপুর্ণ সেসব ওয়ার্ডে আমরা শনিবার থেকে নয় দিন ব্যাপী একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করতে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য অধিদফতর যে ওয়ার্ডগুলো ঝুঁকিপুর্ণ ঘোষণা করেছে- সেগুলোতে রবিবার থেকে অভিযান চালাব। তার সাথে সবসময়ের মত অন্যান্য কার্যক্রমগুলো তো চলবেই।


ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, আমরা সারা বছরের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। আমাদের যে পরিকল্পনা তা ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনাও আমাদের আছে, আমরা তা নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। নিশ্চয়ই সরকার এ বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে, এটা হয়তো সামনে আপনারা জানতে পারবেন।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ.কে.এম. শফিকুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, ডেঙ্গু বাড়ছে বিভিন্ন কারণে। যেমন দেশের আবহাওয়ার পরিবর্তন, সবার সচেতনতার অভাবসহ অনেক ব্যাপার রয়েছে। আমরা এখনো যেখানে যাচ্ছি লার্ভা পাচ্ছি। তাই সম্মিলিতভাবে যদি এর মোকাবিলা না করি এটা বাড়তেই থাকবে।


তিনি বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে এডিস মশার জন্ম হচ্ছে এবং তা ছড়িয়ে পড়ছে। এ জন্য আমরা প্রতিনিয়ত মশক নিধন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা করছি, মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছি। মশক নিধনে আমরা কোন কাজ বাদ দিচ্ছি না, সবকিছুই করছি।


শফিকুর রহমান আরো বলেন, মশক নিধন কর্মসূচির পরিকল্পনা আমাদের সারাবছর থাকে। ডেঙ্গু যেহেতু বেশি তাই এখন পরিকল্পনার পাশাপাশি অন্য কার্যক্রম বাড়ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশক নিধন কর্মসূচি এখন শুধু সিজনাল করলে হবে না, সারা বছর করতে হবে। আশা করছি সামনে এর প্রভাব কমে আসবে।


বিবার্তা/রিয়াদ/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com