সাইবার নিরাপত্তা বিল:
৪২ ধারা বহাল রেখেই সংশোধন ও ভাষাগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:২৯
৪২ ধারা বহাল রেখেই সংশোধন ও ভাষাগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের আপত্তি সত্ত্বেও ৪২ ধারা বহাল রেখেই জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩’ পাসের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। তবে বিলের ৩২ ধারায় উল্লেখ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিধান বাতিলসহ কয়েকটি ধারায় সংশোধন ও কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।


৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিলটি চূড়ান্ত করে সংসদে রিপোর্ট উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।


বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাইবার নিরাপত্তা বিল সংসদে তোলা হয়। এরপর বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।


বৃহস্পতিবার বিলটি নিয়ে আলোচনা করে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া এছাড়া সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজে একাংশের মহাসচিব দীপ আজাদ, বিএফইউজে আরেকাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন।


আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগে বলেছিলেন, বিলটি সংসদীয় কমিটিতে গেলে সেখানে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে শুধু সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অনেক পরিবর্তন করেছি। ২১ ধারার বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আমরা তা গ্রহণ করেছি। ৩২ ধারার অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আমরা বাতিল করে দিয়েছি, এ আইনে সেটা থাকবে না। মিথ্যা মামলার বিষয়ে যে পরামর্শ এসেছে সেটা আমরা গ্রহণ করেছি। সেটা থাকবে। আজকের বৈঠকে এটি চূড়ান্ত হয়েছে।


প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। যে সমস্ত বিষয়ে সাংবাদিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে, সেটা আমরা কমিটিতে জানিয়েছি। তারা বলেছেন এগুলো সংশোধন করবেন। দুয়েক দিনের মধ্যে সংশোধিত খসড়া আইন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। শ্যামল দত্ত আরও বলেন, ২১, ৩২ ধারাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সংশোধন এনেছেন। ৪২ ধারায় সংজ্ঞায় কিছুটা সংশোধন আনা হয়েছে।


বৈঠকে ১৪ দফা দাবি জানিয়েছিল বিএফইউজে (একাংশ)। বৈঠক শেষে এই অংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, তারা কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছে। দু-একটি জায়গায় ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে। তবে আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। আমরা আলোচনাকালে আমাদের ১৪ দফা দাবির বিষয়ে অনড় ছিলাম। বিশেষ করে ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, তল্লাশির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আমরা বলেছি, স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয় এমন ধারাগুলো বাতিল করে সংশোধনী আনলেই কেবল আমরা মেনে নেবো।


খসড়া আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছিল, যদি কোনও ব্যক্তি অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত কোনও অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনও ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ধারাটি বাতিল করা হচ্ছে।


বিলের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয়সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা তাতে মদত দেন, তাহলে তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।


এই ধারায় কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই ধারায় বিএফইউজের প্রস্তাব ছিল ‘বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা চালানো হবে অপরাধ’- এটি প্রতিস্থাপন করা। তাদের এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে সংসদীয় কমিটি।


প্রস্তাবিত আইনের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন এটি বাতিলের দাবি জানিয়েছিল। তবে তা পুরোপুরি গ্রহণ করা হয়নি। এখানে পুলিশ পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন, এমন সংশোধনী আনা হচ্ছে।


বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল, ২০২৩’ বিলের ওপর বিস্তারিত আলোচনা শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশোধিত, সংযোজিত ও পরিমার্জিত আকারে রিপোর্ট সংসদে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।


সংসদীয় কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতিতে কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, আহমেদ ফিরোজ কবির, মো. নুরুল আমিন, মনিরা সুলতানা ও জাকিয়া পারভীন খানম বৈঠকে অংশ নেন। সভাপতির বিশেষ আমন্ত্রণে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৈঠকে অংশ নেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com