‘ড. ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা’
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১৬
‘ড. ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ১৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক খোলাচিঠির মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শ্রম আদালতে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন।


ড. ইউনূসের স্বার্থরক্ষার্থে দেওয়া এই খোলাচিঠি এখন দেশের আলোচনা -সমালোচনার শীর্ষে।


এমনকি এই চিঠি নিয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজনের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হচ্ছে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, খোলাচিঠিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর আক্রমণ চলছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা অমূলক ও ভিত্তিহীন। দেশের প্রচলিত আইনে চলমান একটি মামলা নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি। এটি আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি ও শিষ্টাচার বিবর্জিত এবং একটি রাষ্ট্রের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও সার্বভৌমত্বকে অসম্মান প্রদর্শনের শামিল। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এবং সার্বভৌমত্বের ওপর এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আর এটাকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বলে আমরা মনে করি।


সোমবার, ২৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন ১৬০ বিশ্বনেতা। ওই দিন স্বাক্ষরকারীদের একজন, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস একটি বিজ্ঞপ্তিতে খোলা চিঠিটি প্রকাশ করেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা।


১৬০ বিশ্বনেতার খোলা চিঠির এক দিন আগে গত ২৭ আগস্ট এক চিঠিতে ড. ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসেও ড. ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন ৪০ জন বিশ্বনেতা।


আলোচিত খোলাচিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রমে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো―নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস।


এই খোলাচিঠির পর দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজনের পক্ষ থেকে নিন্দাসহ প্রতিবাদের ঝড় বইছে। বুধবার, ৩০ আগস্ট বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ।


এই সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সম্প্রতি গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, বেশ কিছু নোবেল লরিয়েট বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর অযাচিতভাবে মন্তব্য করছেন,যা খুবই দুঃখজনক। পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ নোবেল লরিয়েটসহ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিবর্গের এধরনের খোলা চিঠি প্রেরণ স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপের অপপ্রয়াস বলে মনে করেন এবং এধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেন।


এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান খান, মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ইঞ্জিনিয়ার এস. এম. খাবিরুজ্জামান, পিইঞ্জ, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন- বাংলাদেশ (আইইবি)-এর প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুরসহ অন্যান্যরা।


এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দেওয়াকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ৩১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভুইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি বিবৃতিতে এই কথা বলা হয়। সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর একই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনও করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।


এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভুইয়া বিবার্তাকে বলেন, ড. ইউনূস লবিস্ট নিয়োগ করে এই বিবৃতি আনিয়েছেন, যাতে করে তার বিচার বন্ধ করতে পারেন। তবে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা তো সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীও এতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে হস্তক্ষেপ কোনভাবেই মানা যায় না।


তিনি বলেন, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বার্থ রক্ষায় আগ্রহী হলেও শ্রমিকদের মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চুপ থেকেছেন। এ ধরনের বিবৃতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। দেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করে। কাজেই এ ধরনের চিঠির মাধ্যমে তারা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন।এ ধরনের বিবৃতির পেছনে গোপন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।


১ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার ড. ইউনূসের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদে দেশের ১৭১ জন বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে এই বিবৃতি প্রদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন।


বিবৃতিতে বলা হয়, উক্ত খোলাচিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত চলমান মামলাসমূহের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ-ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকই আইনের দৃষ্টিতে সমান।


এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ড. ইউনূসের নামে মামলা তো সরকার করে নাই, করেছে তার প্রতিষ্ঠানের লোকেরা। প্রথমদিকে এটাকে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে নানা কথা বলা হলো। কিন্তু পরে আমরা দেখলাম তিনি কর ফাঁকির জরিমানাও দিয়েছেন। আমার মতে, একজন ভদ্র ও সুস্থ মানুষ কখনো কর ফাঁকির মতো জঘন্য কাজ করতে পারেন না। তার কাছে নিজের ইমেজের চেয়ে টাকাটা বড়। বলতে রুচিতে লাগে, তিনি নিজের শ্রমিকদের টাকা দিতে না পারলেও মার্কিন নির্বাচনে কিন্তু ঠিকই ইনভেস্ট করেন। মোটকথা, তিনি মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।


তিনি বলেন, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও নানা সংকটে পড়েছিলেন। কিন্তু তাকে নিয়ে তো এভাবে বিবৃতি কেউ দেয় নাই। কিন্তু ড. ইউনূস কী এমন হয়ে গেল তাকে নিয়ে এভাবে বিবৃতি দিতে হলো! তার নামে মামলা হয়েছে। আর মামলা হলে তো কেউ সাথে সাথে দোষী হয়ে যায় না। কিন্তু এক্ষেত্রে আইনকে তার গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিকভাবে লবিস্ট নিয়োগ করে হস্তক্ষেপ কোনভাবেই কাম্য নয়।


১ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের 'ন্যায্য পাওনা' পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।


এই বিবৃতিতে বলা হয়, "নোবেল পুরস্কার পেয়ে যারা সম্মানিত হন তাঁদের উচিত বিখ্যাত পুরস্কারের সম্মানটুকু বজায় রাখার জন্য নিজের নৈতিকতা ও সম্মানবোধকে সবসময় সমুন্নত রেখে ব্যক্তিগত লোভের পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত থাকা। কিন্তু তা না করে তারা যদি অন্য অপরাধীদের মতো অপকর্ম করতে শুরু করেন তখন রাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ ও আদালতকে বিচার করতেই হয়, কারণ এদেশে আইনের চোখে ধনী-গরিব বা বিখ্যাত-সাধারণ সবাই সমান। তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষ শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পাওনা পরিশোধের নীতিতে বিশ্বাস করে। আমরা বাংলাদেশের গরিব শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা, দীর্ঘদিন ধরে অপরিশোধিত বিশাল অংকের টাকা টাকা দ্রুত পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।


বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঔদ্ধত্য দেখিয়ে কিংবা শত কোটি টাকা খরচ করে বিদেশের অতি নামী পত্রিকায় বিশাল বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার চাইতে গরিব শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া অনেক বেশি নৈতিক কাজ।


বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বিবার্তাকে বলেন, যারা ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন তারা নিঃসন্দেহে সম্মানিত ও বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ। নিজ কাজের মাধ্যমে তারা এই পর্যায়ে এসেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার মনে হয় তারা আসল ঘটনা না জেনে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রকৃত ঘটনা জানলে তারা এমন বিৃবতি দিতেন বলে আমার মনে হয় না। তারা হয়তো ভেবেছেন-ড. ইউনূস তাদের বন্ধুসুলভ। আর বন্ধু বিপদে পড়েছে -তাই তারা একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। তাদের কেউ হয়তো এটা লিখেছে, আর বাকীদের কাছে হয়তো কোন মতে অনুমতি নিয়ে নাম দিয়ে দিয়েছে।


তিনি বলেন, ড. ইউনূস কিছুদিন আগেও কর ফাঁকিতে সাড়ে ১২ কোটির উপরে জরিমানা দিয়েছেন। এটা কি কোন নোবেল বিজয়ী সমর্থন করবেন? উন্নত দেশেও তো এটা নিয়ে গুরুতর শাস্তি হওয়ার কথা। আর যেহেতু তিনি জরিমানা দিয়েছেন, তার মানে ঘটনার তো সত্যতা অবশ্যই আছে। আর প্রমাণিত সত্য নিয়ে ভালোভাবে না জেনে বিবৃতি দেওয়া কি ঠিক?


তিনি আরো বলেন, আমেরিকার পাবলিক একটা কোম্পানি এই বিবৃতি দেওয়ার কাজটা নিয়েছে। তারা কমার্সিয়ালি এই কাজগুলো করে থাকে। তবে আমি মনে করি,যেকোনো বিষয়ে সত্য জেনে মন্তব্য করা উচিত। তাছাড়া পিআর কোম্পানির ড্রাফট দেখে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে সাথে বিবৃতিতে ঐক্যমত হওয়া ঠিক না। তাদেরকে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে তারপর বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা উচিত।


শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর এই খোলাচিঠির প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট সম্পাদক। এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা ওই চিঠিকে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।


রবিবার,৩ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে চলমান মামলা স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া ১৬০ ব্যক্তির চিঠির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। সংগঠনের আহবায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ আলী ও অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬৬ শিক্ষকের নাম রয়েছে।


বিবৃতিতে বলা হয়, এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নোবেলজয়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কোনো কোনো নোবেলজয়ী দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন, বেলারুশের আদালত শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অ্যালেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছে। ফিলিপাইনে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা-র বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কর ফাঁকির মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। এ সকল নোবেল বিজয়ী আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আদালতের রায় মেনে নিয়েছেন। বিচার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে তাঁরা কারও দ্বারস্থ হননি।


নীল দলের বিবৃতিতে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে ৬০ বছরে অবসরে যাওয়ার আইন অমান্য করে ৭০ বছর বয়সেও উক্ত পদ ছাড়তে সম্মত ছিলেন না। এ সংক্রান্ত মামলায় তিনি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পরে গ্রামীণ ব্যাংকের পদ ফিরে পেতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রভাবশালী দেশে লবিং করেছেন। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি, দাতা তহবিলের অর্থ বেআইনিভাবে হস্তান্তর, শ্রম আইন লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের অভিযোগ আছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং তিনি আদালতের রায় মেনে নিয়ে ধার্যকৃত কর পরিশোধ করেছেন।আমরা আশা করি ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতিদাতা সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশের আইন-কানুন ও রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন এবং আইনগত ও সাংবিধানিক বিধি-বিধান অনুধাবন করবেন। অযাচিত ও অনভিপ্রেত বিবৃতি দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচারিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে শিক্ষক সমাজ সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে।


এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। এই বিষয়ে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ড. ইউনূসের বিষয়টা হয়েছে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভেীম রাষ্ট্র। এই দেশের প্রণীত সংবিধানও রয়েছে। কাজেই এই দেশ তার চলার বিধি অর্থাৎ সংবিধান অনুযায়ী চলবে। বিদেশি শক্তি কেন এই দেশ ও এর বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করতে চাইবে? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখানে অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আর ইউনূসের পক্ষে যারা বিবৃতি দিয়েছেন, আমার ধারণা সেখানে লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে এই কাজ করা হয়েছে। তাছাড়া অনেকে হয়তো এই বিষয়ে না বুঝে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।


তিনি বলেন, আজকে যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, বিচার বিভাগের কথা বলেন কিংবা শ্রম অধিকারের কথা বলেন, তারা কি এটা দেখছেন না, ইউনূসের বিষয়টি শ্রম অধিকার সম্পর্কিত? নাকি এই বিষয়টি জেনেও তারা না জানার ভান করছেন? আর এটি হলে তাদের কথার সাথে ইউনূসের বিষয়টি স্ববিরোধী হয়ে গেল না? তাছাড়া রানা প্লাজার পরেও তারা জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে কী প্রমাণ করেছে, সেটা বিশ্ববাসী জানে।


তিনি আরো বলেন, ড. ইউনূস বাংলাদেশের মেইন স্ট্রিমের কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন না। তিনি আপাদমস্তক একজন ব্যবসায়ী। আর বিদেশিদের উপর নির্ভরশীল। তার পক্ষের বিবৃতির খোলা চিঠিও বর্ডার রাজনীতির অংশ বলে আমি মনে করি। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন এই দেশের দারিদ্র্য জাদুঘরে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি আসলেই কী করেছেন?


অপরাধ বিজ্ঞানী ড. জিয়া রহমান বলেন, এরআগেও উচ্চ আদালতে হেরে যাওয়ার দুদিনের মাথায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দানকরের ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা পরিশোধ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এখনো তার বিষয়টি প্রসেসিং রয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বলে আমি মনে করি।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com