বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ: বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩, ১৫:৩১
বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ: বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বেসিক ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ৫৯টি মামলায় আবদুল হাই বাচ্চুকে অভিযুক্ত করে ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে গ্রাহক ১০১ জন আর ব্যাংক কর্মকর্তা ৪৬ জন।


১২ জুন, সোমবার সচিব মাহবুব হোসেন দুদকের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।


তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক লি: এর চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারীসহ এজাহারনামীয় এবং তদন্তে আগত আসামিগণ কর্তৃক অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গকরতঃ অন্যায়ভাবে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করে ভূয়া মর্টগেজ, মর্টগেজের অতিমূল্যায়ন এবং মর্টগেৎবিহীনভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেসিক ব্যাংক লি: হতে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ২২৬৫ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা আত্মসাতে ৫৯টি মামলা হয় এবং ৫ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা উক্ত মামলাসমূহের তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেপ্রেক্ষিতে কমিশন কর্তৃক উক্ত মামলাসমূহের চার্জশীট দাখিলের অনুমোদন জ্ঞাপন করেন।


এক যুগেরও বেশি সময় আগে বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি লোপাটের অভিযোগ ওঠে। এই বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।


অভিযোগটি অনুসন্ধান করে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১২০ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এসব মামলায়। বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ ২৭ কর্মকর্তা, ১১ জরিপকারী ও ৮২ ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। পরে আরও কয়েকটি মামলা করে সংস্থাটি।


ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর রাষ্ট্রয়ত্ব বেসিক ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে।


ওই জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অধিকাংশ প্রতিবেদনে বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে আসে। তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নিজেই বেসিক ব্যাংকে ‘হরিলুটের’ পেছনে আবদুল হাই বাচ্চু জড়িত বলে উল্লেখ করেন। জাতীয় সংসদেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সংসদীয় কমিটিতেও এ জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কমিটির সদস্যরা।


অথচ ওই ঘটনায় দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। অনুসন্ধানকালে তাকে কখনো দুদকে ডাকাই হয়নি। আদালতের একটি আদেশের পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তাকে প্রথমবারের মতো তলব করে দুদক। এর ধারাবাহিকতায় তাকেসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।


দুদক আইনে প্রতিটি মামলার তদন্ত সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও তদন্তের ব্যাপকতা ও জটিলতা বিবেচনায় বাড়তি সময় দেয়ার রীতিও রয়েছে। কিন্তু বেসিক ব্যাংকের এই অর্ধশতাধিক মামলার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের পরও পেরিয়ে গেছে বহু বছর।


গত বছরের ২৯ নভেম্বর এ সংক্রান্ত এক রুল খারিজ করে হাইকোর্ট তিন মাসের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির মামলার তদন্ত শেষ করে দুদককে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।


এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের মামলার তদন্ত যাতে নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হয়, সে লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে।


এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, গ্রেফতার হওয়া মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি।


এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সিএজি কার্যালয় ও খোদ বেসিক ব্যাংকের নানা প্রতিবেদনে এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুসহ অনেকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।


বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংক ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে। ফলে ২০১৪ সালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করা হয়। সে বছরের ২৯ মে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছুদিন পর ৪ জুলাই শেখ আবদুল হাই বাচ্চু পদত্যাগপত্র জমা দেন।


ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা বেসিক ব্যাংকের ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর দায়িত্বকালটা ‘অস্বস্তির’ ছিল। অনিয়মের অভিযোগে ২০১৩ সাল থেকে অনুসন্ধানে নামে দুদক।


বিবার্তা/সানজিদা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com