ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্স উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৩, ২২:১৩
ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্স উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  শুক্রবার (১২ মে) দুই দিনব্যাপী ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্স (আইওসি) উদ্বোধন করেছেন। ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কনফারেন্সের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এসময় প্রধানমন্ত্রী আইওসি সদস্য দেশগুলোর প্রতি ৬টি প্রস্তাব রাখেন।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে বহু শতাব্দী ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন সামুদ্রিক কার্যকলাপের প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশ সমুদ্র বিষয়ক অনেক আঞ্চলিক প্লাটফর্মে সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশন ও কাউন্সিল অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অ্যাথোরিটির সভাপতি।


সবাইকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় এই সম্মেলনের ৬ষ্ঠ সংস্করণ আয়োজনে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য আমি ভারত সরকার ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই সম্মেলন অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করার এবং মত বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে।


তিনি বলেন, সাগর-মহাসাগর দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ পরিচালিত হচ্ছে। সমুদ্রপথে প্রকৃত বাণিজ্য বিগত ১৫ বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনা এখনো অনেকটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও আফ্রিকার অঞ্চলসমূহে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এ অঞ্চলে বাস করে এবং জিডিপিতে এ অঞ্চলের অবদান ৬০ শতাংশ। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, এ অঞ্চলটি নানাবিধ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক।


তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য সর্বদা সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এবং এ সীমার মধ্যে সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়ন করেন। যা ‌‘সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশন, ১৯৮২’ ঘোষণার আট বছর আগে কার্যকর করা হয়েছিল, যখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে সীমিত ধারণা ছিল।


এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শাস্তি, অংশীদারিত্ব ও সমৃদ্ধি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও যথাযথ হয়েছে। টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে অংশীদারিত্ব, শান্তি ও সমৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যার প্রেক্ষাপটে আজকের এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।


তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সার সঙ্কটের ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেও জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশীদারিত্ব ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিতে হবে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে তার ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি অত্যন্ত জরুরি এবং তা সমগ্র বিশ্বের নর-নারীর গভীর আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটাবে’। ওই ভাষণে তিনি ভারত মহাসাগরকে শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ওপরে বিশেষভাবে জোর দেন। বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে জুলিও-কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির একনিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমরা ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ সংক্রান্ত ঘোষণা এবং কর্মসূচি রেজ্যুলেশন আকারে উত্থাপন করি যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শাস্তি-বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।


তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, আমরা ১.১ মিলিয়নেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছি, যার ফলে এ অঞ্চলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন কামনা করি। 


এছাড়া গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫-তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের চরম দারিদ্র্যের হার ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আমাদের মাথাপিছু আয় গত এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলার হয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল মানদণ্ড পূরণ করেছে।


বিবার্তা/নিলয় 

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com