'১৭ এপ্রিল বাঙালি জাতির জীবনে গৌরবের দিন'
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪৩
'১৭ এপ্রিল বাঙালি জাতির জীবনে গৌরবের দিন'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ১৭ই এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের উজ্জ্বলতম ও চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। মুজিবনগর দিবস ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত- একটিকে বাদ দিলে অন্যটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কারণ ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে ঘোষিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় মুক্তাঞ্চলে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষিত হয়। এই ঘোষণাপত্র বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ় সমর্থনে গৃহীত হয়।


ওই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে মন্ত্রিসভার সদস্য করে স্বাধীন বাংলার সরকার গঠন করেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় তাঁর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা হয়। পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনীর অস্ত্র-ভয় উপেক্ষা করে ১৭ এপ্রিল উপরাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা ওই দিন শপথ গ্রহন করেন। মূলত এখান থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের পথ চলা শুরু।


ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। অবশেষে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বঙ্গবন্ধুর নামে বৈদ্যনাথতলা'র নামকরণ করা হয় ‌'মুজিবনগর'। সেই থেকে বৈদ্যনাথতলা 'মুজিবনগর' নামে পরিচিত, আর দিনটি পালিত হয় 'মুজিবনগর দিবস' হিসেবে।



মুজিবনগর সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দায় শোধ হয়েছিল: হানিফ



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাক-হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চলাইট নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাৎক্ষনিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ চার সহচর সর্বাত্মক জনযুদ্ধকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভারতে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। একই সাথে প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।


তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় এই সরকার শপথগ্রহণ করে। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দায় শোধ হয়েছিল মুজিবনগর সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে। সব ধর্মের, বর্ণের মানুষের সম্প্রীতির বন্ধনে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, এই দিনে তা সত্যিকার অর্থে বাস্তবে রূপ নিলো সরকার গঠনের মাধ্যমে।


বিশ্ব মানচিত্রে যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক ধাপ পেরিয়েছিল বাংলাদেশ। এ দিনটি আমাদের স্বাধীনতার সাথে জড়িত, আমাদের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের অংশ।


মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।



বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা আইনগত ভিত্তি পেয়েছে ১৭ এপ্রিল: মাহবুব উদ্দিন আহমদ



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি আগ্রাসন শুরু হয়। এরপর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার ঘোষণা আইনগত ভিত্তি পেয়েছে ১৭ এপ্রিল। আমাদের দেশের মানুষকে বুঝতে হবে ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রীয়ভাবে কতখানি গুরুত্ব বহন করে।


যারা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তৈরি করেছিলেন, তাদের নিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাদের ঘাড়েই সরকার গঠনের দায়িত্ব পড়েছিল। ১০ এপ্রিল আগরতলায় সরকার গঠন করার পর ১৭ এপ্রিল একটা বাস্তবিক সরকার হলো। পরবর্তীতে এই সরকারই সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দেয় যে, একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে। তার একটা ভূ-খণ্ড আছে, পতাকা আছে। পাকিস্তানিদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তারা লড়াই করছে এবং মুক্তিবাহিনী সরকারের অনুগত। পরবর্তীকালে এসবই বাংলাদেশকে বৈধতা দিয়েছে, স্বীকৃতি দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান নাই হয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম


১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ প্রশাসক।



বাঙালির জাতীয় জীবনের গৌরবের দিন: বিএম মোজাম্মেল



১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে। তাই দিনটি সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল। ওই দিন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। বাংলাদেশের জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবের, অর্জনের দিনটির নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার জন্য দীর্ঘকাল অপেক্ষা করেছে। অবশেষ জাতির পিতার নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল।


বাংলাদেশের প্রথম সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন হয়। জাতীয় নেতাদের নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিল। 


বিএম মোজাম্মেল হক


সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com