'বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে'
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১০:৫১
'বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে ইতিহাসের এইদিন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিশ্বের বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল বীর বাঙালি জাতি।



২৫ মার্চ কালরাত্রিতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এক তারবার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ত্রিশ লাখ বীর শহিদের রক্ত আর দুই লাখেরও বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এই স্বাধীনতা।



দেশের বিশিষ্টজনরা বলছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে রাজধানী ঢাকায় অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরীহ, নিরপরাধ, ঘুমন্ত মানুষকে হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে হত্যা করা হয় অসংখ্য নিরীহ মানুষকে। সেদিন দিবাগত রাতে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণার বার্তা পাঠিয়ে দেন তিনি। ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ২৬ মার্চ থেকেই ঝাপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি। যার কারণে আজ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূ-খণ্ডটি।


কিন্তু যে চেতনা ও মূল্যবোধ বুকে ধারণ করে বাঙালি জাতি জীবনমায়া ত্যাগ করে পাকিস্তানি হানাদার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল, সেই স্বপ্ন-স্বাদ আজো পূরণ হয়নি। তারা বলছেন, বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদের পূর্ণতা দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া দরকার।



বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: হানিফ



বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য মাস্টার দা সূর্যসেন, তিতুমীরসহ অনেকে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেউ বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বাদ, মুক্তি এনে দিতে পারেননি। আমাদের মুক্তি এসেছিল টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই আজকে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।


১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ৭ তারিখে জাতির পিতা স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ওই ভাষণের মধ্য দিয়ে সারা বাংলায় অগ্নিশিখা জ্বালিয়েছেন। মার্চ মাসের ২৫ তারিখে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে। সেদিন দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর পূর্বে রেকর্ডকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়। এরপর বাঙালি জাতির তাদের নেতার দিকনির্দেশনা পেয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। সেই ডাকে আমাদের মুক্তি এসেছিল। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আমরা মুক্তির স্বাদ লাভ করেছিলাম।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। সেই ধারা অব্যাহত আছে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।


মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।



ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে: মুনতাসীর মামুন



১৯৭১ সালের মার্চে বাংলাদেশে পৃথিবীর বড় অসহযোগ আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ অবিস্মরণীয় ভাষণ দিয়েছেন। এরপর ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে গণহত্যা হয়েছে। সময়ের পরিসরে যদি চিন্তা করলে বাংলাদেশের গণহত্যার চেয়ে বড় গণহত্যা আর কখনো হয়নি। ২৬ মার্চে প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে গ্রেফতার হন। এরপর দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।


স্বাধীনতার পর আমরা মাঝখানে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা ও ধর্মের সঙ্গে আপস করার প্রবণতা বেড়েছে। যেটা আগে ছিল না। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমেন ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আমরা মনে করি, নানা সময়ে ধর্ম ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রকমের দাবির কথা বলে সমঝোতা করতে এগিয়ে আসে। সেই সমঝোতা মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেটার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।


অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন


ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক।



আমরা বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সংগ্রামে আছি: গোলাম কুদ্দুছ



মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশ কীভাবে পরিচালিত হবে তার নির্দেশনা বাহাত্তরের সংবিধানে দেয়া আছে। সেখানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়বাদ- বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হবে সেটার উল্লেখ আছে। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার পর থেকে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতিকে সংবিধান থেকে বিদায় করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল।


আমরা এখন বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সংগ্রামে আছি। ওই সংবিধানের কিছু অর্জিত হয়েছে, কিছু হয়নি। আমাদের মূল লক্ষ্য বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া এবং এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে মনে করি।


গোলাম কুদ্দুছ


সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com